ফাইল ছবি
সাড়ে ১৫ ঘণ্টার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে বরিশাল বিভাগীয় বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাস মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের পর বুধবার সন্ধ্যায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের ডাকে এ সভায় সেনাবাহিনী, পুলিশ প্রতিনিধিসহ ১০টি বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বুধবার সকাল ছয়টা থেকে বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৫টি রুটে বাস ধর্মঘট করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এতে বরিশাল থেকে দক্ষিণের বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ছাড়াও বাগেরহাট, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব রুটে বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার বাস ভাড়া নিয়ে নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালে ছাত্র ও শ্রমিকদের সাথে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। বাস ভাঙচুরের প্রেক্ষিতে বুধবার সকাল থেকে রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিক ও শ্রমিক সমিতি। পরে সব বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতিসহ ছাত্রনেতৃবৃন্দকে নিয়ে বসেছি। দুই পক্ষের কিছু দাবি দাওয়া ছিলো। ভাড়া ছিলো, আচরণগত কিছু বিষয় ছিলো। আমরা আশস্ত করেছি ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনা আর ঘটবে না। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবো। রাত থেকে বাস চলাচলের সিদ্বান্ত হয়েছে। এখন কিছু চলবে, সকাল থেকে পুরোদমে শুরু হবে।
সভায় অংশ নেয়া ঝালকাঠি জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি বাচ্চু হাওলাদার বলেন, সভার সিদ্বান্ত অনুযায়ী রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছাত্রদের হাফ ভাড়া নেয়া হবে। কিছু কিছু রুটে শতকরা ৩০ ভাগ ভাড়া নেয়া হবে। সরকারি ছুটির দিন হাফভাড়া কার্যকর হবে না। সব পক্ষ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। তাই রাত সাড়ে আটটা থেকে বাস চলাচল শুরু করা হবে।
ঝালকাঠি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সভার সিদ্বান্ত অনুযায়ী বাসে কোন ভুল-ত্রুটি হলে শ্রমিকদের মারধর করা যাবে না। কোনো বাস ভাঙচুর করা যাবে না। বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতিতে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। আমরা উপযুক্ত বিচার করবো। ছাত্র নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মেনে নিয়েছে। তাই আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহর করেছি।
তিনি বলেন, রাতে শুধুমাত্র ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী রুটের বাস চলাচল করবে। সকাল থেকে সকল রুটের বাস চলবে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল সরকারী ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের এক ছাত্রী বাসে হাফ ভাড়া দেয়া নিয়ে শ্রমিকদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালে বিএম কলেজ শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে মারামারি হয়। পরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে দুইপক্ষ। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা থেকে রূপাতলী গোল চত্বরে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে।
প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা রাত ১০টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেয়। কিন্তু বরিশাল বিভাগীয় বাস মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে সকাল ৬টা থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনা-ঝালকাঠি- বাগেরহাট ও খুলনা রুটের সকল বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে ১৫ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ধর্মঘট ছাড়ার অপেক্ষায় বাস টার্মিনালে অবস্থান করেন। অনেকে বিকল্প যানবাহনে অতিরিক্ত ব্যয় করে রওনা হয়েছে। কেউ কেউ বাড়ী ফিরে গেছেন।