গাজায় যুদ্ধবিরতির পর পশ্চিম তীরে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ১২

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ফিলিস্তিনের অপর অংশ পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন।

 

ইতোমধ্যে জেনিনের একটি শরণার্থী শিবির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনের ঘরবাড়ি, স্কুল-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও দোকানপাটও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, অভিযান চালিয়ে হত্যা ও আহত করার পাশাপাশি কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তারও করেছে ইসরায়েলি সেনারা। গ্রেপ্তারদে নিকটবর্তী তদন্তকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জেনিনের ডেপুটি গভর্নর মনসুর আল সাদি আশঙ্কা প্রকাশ করে এক বার্তায় জানিয়েছেন, গাজায় গত ১৫ ধরে যে মাত্রার বিধ্বংসী অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, জেনিনেও একই মাত্রার অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইডিএফ।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতেও গুরুত্ব পেয়েছে গাজায় যুদ্ধবিরতির পর পশ্চিম তীরের এ অভিযান। কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কট্টরপন্থি নেতা এবং জোটসঙ্গী বেজালেল স্মোতরিচকে খুশি রাখতেই পশ্চিম তীরে অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

 

প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী স্মোতরিচ বরাবরই গাজায় যুদ্ধবিরতির বিরোধী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন গাজায় হামাসকে সম্পূর্নরূপে ধ্বংস এবং সেখানকার বাসিন্দা ফিলিস্তিনের অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের পর পুরো উপত্যকা যেন দখল করে নেয় ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সরকার থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি।

 

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইতোমধ্যে জোট থেকে সরে গিয়েছেন কট্টরপন্থি নেতা ও পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গিভির। এখন স্মোতরিচও যদি সরে যান, তাহলে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভেঙে পড়বে এবং তখন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না নেতানিয়াহুর সামনে।

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। সেই হামলায় নিহত হয় অন্তত ১ হাজার ২০০ জন, পাশাপাশি ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা।

 

এ হামলার জবাব দিতে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রায় ১৫ মাস স্থায়ী হওয়া সেই অভিযনে গাজায় নিহত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৩০০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১১ হাজার ৫০০ জন। এছাড়া এখনও নিখোঁজ আছেন অন্তত ১১ হাজার মানুষ।

 

গাজায় যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীরেও অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, তবে তার মাত্রা গাজার মতো এত ব্যাপক ছিল না। তবে তারপরও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৭৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনি।  সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রাজধানীতে আজ যে এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ করেছে ডিএমটিসিএল

» ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ

» এমবাপ্পের হ্যাটট্রিকে রিয়ালের দুর্দান্ত জয়

» তাইওয়ানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

» ১৪ যুগ্ম জেলা জজকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতি

» আজ রবিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট-দোকানপাট বন্ধ থাকবে

» জাগ্রত তরুণরাই দেশটাকে বদলাতে পারবে : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

» ‘আওয়ামী লীগ সুযোগ পেলে কাউকে ছাড়বে না’

» রাজনৈতিক দল গঠনে রাষ্ট্রীয় সহায়তা জনগণকে হতাশ করবে: তারেক রহমান

» ‌‘জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা সম্মান ও নিরাপত্তা পাবে’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর পশ্চিম তীরে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ১২

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ফিলিস্তিনের অপর অংশ পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন।

 

ইতোমধ্যে জেনিনের একটি শরণার্থী শিবির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনের ঘরবাড়ি, স্কুল-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও দোকানপাটও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, অভিযান চালিয়ে হত্যা ও আহত করার পাশাপাশি কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তারও করেছে ইসরায়েলি সেনারা। গ্রেপ্তারদে নিকটবর্তী তদন্তকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জেনিনের ডেপুটি গভর্নর মনসুর আল সাদি আশঙ্কা প্রকাশ করে এক বার্তায় জানিয়েছেন, গাজায় গত ১৫ ধরে যে মাত্রার বিধ্বংসী অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, জেনিনেও একই মাত্রার অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইডিএফ।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতেও গুরুত্ব পেয়েছে গাজায় যুদ্ধবিরতির পর পশ্চিম তীরের এ অভিযান। কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কট্টরপন্থি নেতা এবং জোটসঙ্গী বেজালেল স্মোতরিচকে খুশি রাখতেই পশ্চিম তীরে অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

 

প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী স্মোতরিচ বরাবরই গাজায় যুদ্ধবিরতির বিরোধী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন গাজায় হামাসকে সম্পূর্নরূপে ধ্বংস এবং সেখানকার বাসিন্দা ফিলিস্তিনের অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের পর পুরো উপত্যকা যেন দখল করে নেয় ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সরকার থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি।

 

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইতোমধ্যে জোট থেকে সরে গিয়েছেন কট্টরপন্থি নেতা ও পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গিভির। এখন স্মোতরিচও যদি সরে যান, তাহলে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভেঙে পড়বে এবং তখন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না নেতানিয়াহুর সামনে।

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। সেই হামলায় নিহত হয় অন্তত ১ হাজার ২০০ জন, পাশাপাশি ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা।

 

এ হামলার জবাব দিতে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রায় ১৫ মাস স্থায়ী হওয়া সেই অভিযনে গাজায় নিহত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৩০০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১১ হাজার ৫০০ জন। এছাড়া এখনও নিখোঁজ আছেন অন্তত ১১ হাজার মানুষ।

 

গাজায় যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীরেও অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, তবে তার মাত্রা গাজার মতো এত ব্যাপক ছিল না। তবে তারপরও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৭৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৭ শতাধিক ফিলিস্তিনি।  সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com