মৃত মা-বাবাকে স্বপ্নে দেখলে করণীয় কী

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :মানুষের সব স্বপ্ন কল্পনা থেকে কিংবা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে না। কিছু স্বপ্নের অর্থ থাকে। যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, সতর্ক করা বা ভবিষ্যতের কোনো ঘটনার ইশারা থাকে কিছু স্বপ্নে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কেয়ামত কাছে চলে এলে মুমিনের স্বপ্ন খুব কম মিথ্যা হবে, যে ব্যক্তি অধিক সত্যবাদী তার স্বপ্নও অধিক সত্য হবে। মুসলিমের স্বপ্ন হলো নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। স্বপ্ন হলো তিন ধরনের। সৎ স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদস্বরূপ। আরেক স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য ক্লেশস্বরূপ। অপর স্বপ্ন হলো মানুষ মনে যা ভাবে তা স্বপ্নে দেখে। (তিরমিজি: ২২৭৩)

 

এ হাদিস থেকে বোঝা যায় অর্থহীন অনেক স্বপ্নের পাশাপাশি মানুষ অর্থবহ স্বপ্নও দেখে থাকে। মৃত বাবা-মাকে দেখা স্বপ্নও অর্থহীন বা অর্থবহ দুই রকমই হতে পারে। নিজের স্মৃতি বা কল্পনা দেখে যেমন কেউ মৃত বাবা-মাকে স্বপ্ন দেখতে পারে, কারো স্বপ্নে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইশারা হিসেবেও তাদের দেখানো হতে পারে।

 

হতে পারে, মৃত বাবা-মায়ের জন্য সদকা বা দোয়া করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে তাদের রুহে সওয়াব পৌঁছানোর মতো কাজ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা এবং তাদের রুহে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সদকা করা উচিত হবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, বলো, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। (সুরা ইসরা: ২৪)

 

এই আয়াতে জীবিন বা মৃত উভয় অবস্থায় বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করার শিক্ষা রয়েছে। তাদের জীবনকালে তাদের সুস্থতা ও নেক হায়াতের জন্য দোয়া করতে হবে। মৃত্যুর পরও তাদের ক্ষমা, আখেরাতে মুক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য দোয়া করতে হবে।

 

হাদিস থেকে জানা যায়, সন্তানের দোয়ায় বাবা-মায়ের গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে প্রভু! এটা কী জিনিস? তাকে বলা হয়, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে’। (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৩৬)

মৃত মা-বাবার জন্য সদকা সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে তার মা মৃত্যু বরণ করেন। তখন তিনি রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তাঁর কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সাদ (রা.) বলেন, “আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম।” (বুখারি: ২৭৫৬)

 

আয়েশা (রা.) বলেন- ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এসে বললেন—হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। কোনো অছিয়ত করতে পারেননি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে দান-সদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।” (মুসলিম: ২৩৭৩)

 

মূলত হাদিসের শিক্ষা হলো- জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় মা-বাবার জন্য দোয়া করা এবং সেবা করা সন্তানের কর্তব্য আর মৃত বাবা-মাকে স্বপ্নে দেখলে নিছক কল্পনা মনে না করে তাদের জন্য দোয়া ও সামর্থ্য অনুযায়ী সদকা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত মা-বাবার আত্মায় বেশি বেশি সওয়াব পৌঁছানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।  সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শ্যামনগর বিএনপির দু’গ্রুপের উত্তেজনাকে ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি

» কারো প্রেসক্রিপশনে ভ্যাট বাড়ানো হয়নি: অর্থ উপদেষ্টা

» রাজনীতিতে আমাদের কোণঠাসা করতে চাচ্ছে সরকার : জিএম কাদের

» জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

» বইমেলা ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : ডিএমপি কমিশনার

» তানজিদের ব্যাটে ঢাকার সহজ জয়

» নির্বাচনে ফিরতে পারবে না আওয়ামী লীগ: প্রেস সচিব

» ‘পরবর্তী ২০ বছর দেশের রাজনীতিতে তরুণদের প্রভাব অব্যাহত থাকবে’

» ইসলামপুর চরাঞ্চলের পতিত জমিতে বেড়েছে ভূট্রা চাষ বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

» বাস্তব-কে এমপ্লয়ি ব্যাংকিং সুবিধা দেবে ব্র্যাক ব্যাংক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মৃত মা-বাবাকে স্বপ্নে দেখলে করণীয় কী

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক :মানুষের সব স্বপ্ন কল্পনা থেকে কিংবা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে না। কিছু স্বপ্নের অর্থ থাকে। যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, সতর্ক করা বা ভবিষ্যতের কোনো ঘটনার ইশারা থাকে কিছু স্বপ্নে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কেয়ামত কাছে চলে এলে মুমিনের স্বপ্ন খুব কম মিথ্যা হবে, যে ব্যক্তি অধিক সত্যবাদী তার স্বপ্নও অধিক সত্য হবে। মুসলিমের স্বপ্ন হলো নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। স্বপ্ন হলো তিন ধরনের। সৎ স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদস্বরূপ। আরেক স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য ক্লেশস্বরূপ। অপর স্বপ্ন হলো মানুষ মনে যা ভাবে তা স্বপ্নে দেখে। (তিরমিজি: ২২৭৩)

 

এ হাদিস থেকে বোঝা যায় অর্থহীন অনেক স্বপ্নের পাশাপাশি মানুষ অর্থবহ স্বপ্নও দেখে থাকে। মৃত বাবা-মাকে দেখা স্বপ্নও অর্থহীন বা অর্থবহ দুই রকমই হতে পারে। নিজের স্মৃতি বা কল্পনা দেখে যেমন কেউ মৃত বাবা-মাকে স্বপ্ন দেখতে পারে, কারো স্বপ্নে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইশারা হিসেবেও তাদের দেখানো হতে পারে।

 

হতে পারে, মৃত বাবা-মায়ের জন্য সদকা বা দোয়া করার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে তাদের রুহে সওয়াব পৌঁছানোর মতো কাজ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা এবং তাদের রুহে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সদকা করা উচিত হবে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, বলো, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। (সুরা ইসরা: ২৪)

 

এই আয়াতে জীবিন বা মৃত উভয় অবস্থায় বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করার শিক্ষা রয়েছে। তাদের জীবনকালে তাদের সুস্থতা ও নেক হায়াতের জন্য দোয়া করতে হবে। মৃত্যুর পরও তাদের ক্ষমা, আখেরাতে মুক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য দোয়া করতে হবে।

 

হাদিস থেকে জানা যায়, সন্তানের দোয়ায় বাবা-মায়ের গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে প্রভু! এটা কী জিনিস? তাকে বলা হয়, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে’। (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৩৬)

মৃত মা-বাবার জন্য সদকা সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে তার মা মৃত্যু বরণ করেন। তখন তিনি রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তাঁর কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সাদ (রা.) বলেন, “আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম।” (বুখারি: ২৭৫৬)

 

আয়েশা (রা.) বলেন- ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এসে বললেন—হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। কোনো অছিয়ত করতে পারেননি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে দান-সদকা করতেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন।” (মুসলিম: ২৩৭৩)

 

মূলত হাদিসের শিক্ষা হলো- জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় মা-বাবার জন্য দোয়া করা এবং সেবা করা সন্তানের কর্তব্য আর মৃত বাবা-মাকে স্বপ্নে দেখলে নিছক কল্পনা মনে না করে তাদের জন্য দোয়া ও সামর্থ্য অনুযায়ী সদকা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত মা-বাবার আত্মায় বেশি বেশি সওয়াব পৌঁছানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।  সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com