যে সব নবজাতক অত্যন্ত স্বল্প ওজনের (আড়াই কেজির কম), সময়ের অনেক আগে (৩৭ সপ্তাহের আগে) জন্মগ্রহণ করেছে, শ্বাসকষ্ট আছে, যেসব বাচ্চা জন্মের পরপর কান্না করেনি বা শ্বাস নেয়নি বা মারাত্মক রকম জন্ডিসে আক্রান্ত অথবা জীবাণু সংক্রমণে আক্রান্ত এবং যাদের বিভিন্ন রকমের জন্মগত ত্রুটি বা জটিলতা আছে এবং অপারেশন প্রয়োজন তাদের নবজাতক আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
আইসিইউতে কীভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়?
যেসব বাচ্চা সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করে, ওজন কম এবং শ্বাসকষ্ট বা অন্য জটিলতা থাকে তাদের আমরা ওয়ার্মার বা ইনকিউবেটরে রাখি যাতে শরীরে তাপমাত্রা বজায় থাকে। তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেনের মাত্রা বজায় আছে কিনা তা মনিটর করা হয়। প্রয়োজনমতো অক্সিজেন বা কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হয়। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয়। যাদের জন্ডিস বেশি, তাদের জন্য ফটো থেরাপির ব্যবস্থা করা হয়। কোনো বাচ্চার যদি জন্মগত ত্রুটি থাকে তাহলে তাদের অপারেশনের ব্যবস্থা করা হয়। রক্তে জীবাণু সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া থাকলে যথাযথ এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। প্রয়োজনে নবজাতককে আইসিইউতে স্থানান্তর করতেও পারেন। তাই নবজাতকের জন্য সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রস্তুতি রাখা উচিত।
আইসিইউতে কতদিন থাকা প্রয়োজন?
যদি সামান্য অসুস্থতা থাকে তাহলে দেখা গেছে কোনো বাচ্চাকে তিন-চার দিন পরই ছুটি দেওয়া সম্ভব। কোনো কোনো বাচ্চার ক্ষেত্রে বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে, সেটা বাচ্চার ওজন এবং তার শারীরিক জটিলতার উপরে নির্ভর করে।
আইসিইউতে থাকাকালীন বাচ্চার খাবার খাবারের ব্যবস্থা কী?
সাধারণত প্রথম দু-এক দিন বাচ্চার হজম শক্তি পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে অল্প পরিমাণ করে মায়ের দুধ শুরু করা হয়, সঙ্গে পুষ্টির স্যালাইন চলতে থাকে। একটা সময় বাচ্চার অবস্থা বুঝে বাচ্চাকে সরাসরি বুকের দুধ টেনে খেতে দেওয়া হয়।
নবজাতক আইসিইউতে থাকলে বাচ্চার কি ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হতে পারে?
নবজাতক অবস্থায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিতে পারলে ভবিষ্যতে বাচ্চা পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। যদি সময় মতো চিকিৎসা না দেওয়া হয় তাহলে বরং জটিলতা হতে পারে। তাই অবহেলা না করে নবজাতকের এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আরও যথেষ্ট যত্নবান হতে হবে।
লেখক : নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা।