সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক :জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, গত ১৬ বছর ধরে উত্তরের জনপদের মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে আমাদের যে জায়গায় পৌঁছানোর কথা ছিল তার সামান্যও পূরণ হয়নি। গোপালী কোটা, পরিবার কোটা, আত্মীয়-স্বজন কোটা, তেলবাজি কোটা, লীগ কোটাসহ অসংখ্য কোটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর উত্তরবঙ্গের মানুষেরা শোষণের শিকার হয়েছে।
আজ রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, শেখ হাসিনা ১৫ সালের পরে শুরু করে ঢাকা থেকে তার বাড়ি অভিমুখে যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে সেটির ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ অভিমুখে চার লাইনের রাস্তার কার্যক্রম আজকে থেকে এক যুগ আগে শুরু করে এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। দক্ষিণের একটি পৌরসভা যে বাজেট পেয়েছে উত্তরবঙ্গের একটি জেলা সে পরিমাণ বাজেট পায়নি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। একটা পরিবারের সদস্যদের নামে, তর আত্মীয়স্বজনের নামে এমনকি ওই পরিবারের শ্বশুর-শাশুড়ির নামেও অসংখ্য ইনস্টিটিউট হচ্ছে। কিন্তু পুরো উত্তরের জনপদে তিনটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় নেই। একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কোন একটি ইকোনমিক জোন (অর্থনৈতিক অঞ্চল) করা হয়নি।
তিনি বলেন, আজ একটি সুন্দর অবস্থায় পৌঁছালেও আমাদের চোখের সামনে সবসময়ই আমাদের ভাই-বোনদের রক্তাক্ত লাশগুলো ভাসতে থাকে। আমরা প্রতি সপ্তাহেই দেশের বিভিন্ন বিভাগে যাই। সেখানে প্রায়ই শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা হয়। দীর্ঘ সাড়ে চার মাস পার হলেও এখনো শহীদদের গর্বিত বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের লাশগুলো দেখান, বুলেটের ছবি দেখান। তখন মনে হয় আমরা এখনও ১৮, ১৯, ২০ জুলাই এবং আগস্ট ৩, ৪, ৫ তারিখেই রয়েছি।
কিন্তু অনেকেই জুলাই-আগস্টের ত্যাগ ভুলে গিয়েছে উল্লেখ করে সারজিস আরও বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এখন আমরা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই এসব বিষয় ভুলে গিয়েছি। সেজন্য, এই দেশে এখনও একজন খুনির নাম নিয়ে মিছিল হয়, স্লোগান হয় এবং দেয়াল লিখন হয়। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমাদের বিবেকবোধ একেবারে ন্যূনতম পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
‘এটি বলতে খারাপ শোনা গেলেও সত্য যে, মানুষ হিসেবে আমরা এখনো খুব ভালো হতে পারিনি। আর জাতি হিসেবেও আমরা স্বার্থের বাইরে বের হতে পারিনি। কারণ, বাংলাদেশে যে গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, আমাদের অনেকের দ্বারাই এ পথ চেয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সবাই সবার জায়গা থেকে একে অন্যকে দোষারোপ করে বেড়াচ্ছি। অনেকেই সিন্ডিকেট চালাচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে। বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে এক ঘর থেকে আরেক ঘর এক দরজা থেকে আরেক দরজা দৌড়াচ্ছি। অনেকেরই নিজেদের স্বার্থ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে, এখানে দেশের কি হলো বা মানুষের কি হলো তা দেখার সময় নেই। আমরা বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ উতরে যাওয়ার পথ রেখেছেন। যার উদাহরণ ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান। আমরা নিরাশ ও হতাশ হতে চাই না।
সারজিস বলেন, এখন অনেক আহত ভাইয়েরা যখন বলেন, হাত-পা দিয়েছি। প্রয়োজনে জীবনও দেব। তখন আমাদের সাহস শক্তি অন্য মাত্রায় পৌঁছায়। সেজন্য আমরা আপনাদেরকে অনুরোধ করি যে, আমরা কেউ যেন অন্যের হক নষ্ট না করি।
একইসঙ্গে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশ গঠনে সবার সহযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখার জন্য সবাইকে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
সংগঠনটির সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— রাষ্ট্রপতির সাবেক সামরিক সচিব লে. জে. (অব) ড. আমিনুল করিম রুমী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক
হাসনাত আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেক কায়েমসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।