সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক:দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব প্রতিষ্ঠানে চলছে সংস্কার কাজ। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নানা অসংগতি দূর করে সঠিক পথে পরিচালনার ধরনেই কাজ শুরু করেছে ঢাকা ওয়াসা। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান পদত্যাগ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ঢাকা ওয়াসার সংস্কার কাজ। এরই মধ্যে গত ১৩ বছরে তাকসিম এ খানের বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে সুবিচার পান সেই লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সাবেক এমডির সময় ১৯টি পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে তাকসিম এ খানের সময় প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্নভাবে বঞ্চিত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে তখন কারো কথা বলার সাহস ছিল না। আওয়ামী সরকারের পতনের পর বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বদলি, চাকরিতে পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে ওয়াসা বরাবর আবেদন করেছেন। বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গঠন করা হয়েছে কমিটি।
ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, গণ-অভ্যুত্থানকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। আমি ওয়াসায় যোগ দেওয়ার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুধু সমস্যাই দেখছি না, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিয়েছি। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রামাণিক অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বলতে চাই, কেউ দুর্নীতির চিন্তাও যদি করে, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের রাজধানীর প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করতে হয়। গ্রাহকের পানি ও পয়োবিল প্রদানে অনীহা একটি বড় সমস্যা। এ ছাড়া ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা, ঢাকার চারপাশের নদী ও জলাধারের দূষণ বন্ধের চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী ঢাকা শহরে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করাই ঢাকা ওয়াসার মূল কাজ। পাঁচ হাজার ১৮০ জন লোকবলের প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা শহরের প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ নগরবাসীকে পানি সরবরাহ করছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটির সংস্কারে ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর ৫ আগস্ট পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈষম্য দূর করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম খান বলেন, আমরা বঞ্চিত হয়েছি। দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। কথা বলতে পারছি। নিজেদের দাবি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করব বর্তমান দায়িত্বশীলরা কর্মীদের পাশে থাকবেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগ/জোন/সার্কেল/প্লান্ট ও প্রকল্পসমূহের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নমূলক কাজ মনিটরিং করতে তিনটি টাস্কফোর্সসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনেক ঠিকাদার অতীতে ভালো কাজ করলেও দীর্ঘ সময় তাদের কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে তাদের লাইসেন্স নবায়নের কাজ চলছে। তাকসিম এ খানের সময় ১৯ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর সরাসরি নিয়োগের জন্য ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব বিভাগের বিলিং ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কারখানা পরিদর্শন, এসডিডি বাস্তবায়ন, জেন্ডার ইকোয়ালিটি অ্যান্ড সোস্যাল ইনক্লোসন ফোরাম এবং গাড়ি ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ৩১টি গভীর নলকূপের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২৫ একর জমির নামজারি এবং ৪০০ একর জমির খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে। বিভিন্ন জোন/বিভাগে ২২টি টেন্ডার ই-জিপির মাধ্যমে আহ্বান করা হয়েছে। কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, শুষ্ক মৌসুমে পানি সমস্যা মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, ওয়াসা লিংক ১৬১৬২ (২৪/৭)তে আশা অভিযোগ নিষ্পন্ন, সব মডস জোনের কমপ্লেইন সেন্টার ২৪ ঘণ্টা সচল রাখা। লোডশেডিংয়ের সময় গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে জেনারেটরের মাধ্যমে সব পানির পাম্প চালু রাখা। সব গভীর নলকূপ ও প্লান্ট সচল রাখতে প্লান্ট ও ফিল্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত পাম্প-মোটর, যন্ত্রাংশ, কেমিক্যাল ইত্যাদি মজুত। প্রতিটি গভীর নলকূপের উৎপাদন নিয়মিত মনিটরিং করা। শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট এলাকায় পানির উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ। উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব না হলে ‘পানি পুনর্বাসন ও উন্নয়ন সার্কেলের’ মাধ্যমে রিজেনারেশন, রিহ্যাবিলিটিশেন বা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা। রেশনিংয়ের মাধ্যমে সংকটপ্রবণ এলাকায় পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে পানি এনে সংকট মোকাবিলা করা। পানি সবররাহ বিঘ্নিত হলে পানির গাড়ির মাধ্যমে গ্রাহকের বাড়িতে পানি সরবরাহ করা।
১৯ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল
ঢাকা ওয়াসার নবম ও দশম গ্রেডের (১ম ও ২য় শ্রেণি) বিভিন্ন ক্যাটাগরির পদে সরাসরি ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য গত তিন বছরে প্রকাশিত ১৯টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। এসব পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করা হয়েছিল। নিয়োগবিধি না মেনে এসব পদে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় লোকজন নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে বলে ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে।
পদগুলোর মধ্যে রয়েছে— সহকারী প্রকৌশলী, গবেষণা কর্মকর্তা, রাজস্ব কর্মকর্তা, গবেষণা সহকারী, হিসাবরক্ষক, অডিটর ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার (হার্ডওয়্যার), সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার (নেটওয়ার্ক), সহকারী সচিব, উপসহকারী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিস্টেম ম্যানেজার, নার্স/মেডিক্যাল অ্যাটেনডেন্ট, চিফ কমার্শিয়াল অফিসার, চিফ মিডিয়া অফিসার, মিডিয়া অফিসার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষক।
আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বিধান রয়েছে। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বিধান মানা হয়নি। অর্গানোগ্রামে না থাকলেও ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ চিফ মিডিয়া অফিসার ও মিডিয়া অফিসার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার জন্যও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল।