মা-বাবার চিকিৎসায় সন্তানরা যেভাবে খরচ দেবেন

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক :মা-বাবার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সন্তানদের পাশে থাকা জরুরি। চিকিৎসা ভরণ-পোষণের অন্তর্ভুক্ত। সন্তানরা সামর্থ্যবান হলে তাদেরকে অবশ্যই মা-বাবার চিকিৎসা করাতে হবে। যদি সব সন্তান সামর্থ্যবান না হয়, বরং একজন হয়, তাহলে ওই সামর্থ্যবান সন্তানের ওপরই তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করা জরুরি।

 

আল্লামা ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, ‘কারো মা-বাবা অথবা সন্তান (ছেলে-মেয়ে) গরিব হলে এবং ওই ব্যক্তির সামর্থ্য থাকলে তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া আবশ্যক। এতে বিচারক (রাষ্ট্র) তাকে বাধ্য করতে পারবে।’ (আল মুগনি: ৮/১৬৮)

আর পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্যকারো ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ২৩)

 

তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার, তাদের পরিচর্যা সেভাবেই করতে হবে, যেভাবে শৈশবে তারা সন্তানের জন্য করেছেন। তাই আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য কীভাবে দোয়া করতে হবে সেটাও শিখিয়ে দিয়েছেন- رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি সাগীরা।’ অর্থ: ‘হে প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।

 

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে অনেক সন্তান মা-বাবার যথাযথ হক আদায় করে না। উল্টো তাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকে, অনেক কপালপোড়া তো মা-বাবার ওপর বিরক্ত হয়ে শারীরিকভাবেও কষ্ট দেয়। ওরা আসলে মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুতে পরিণত হয়েছে। মা-বাবা সন্তানকে যে পরিমাণ যত্ন করেছেন, সন্তানের সুস্থতার জন্য যা যা করেছেন, তা কি বর্ণনা করা সম্ভব? মোটেও না। গর্ভে ধারণ করা, জন্ম দেওয়া, শিশুর অসুস্থতায় আঁঠার মতো লেগে সেবা করা, পায়খানা-প্রস্রাব পরিষ্কার করা, ঠিকমতো ঘুমাতে না দিলেও বুকে আগলে রাখা, একটু বড় হতে না হতেই যাবতীয় আবদার শুরু হয়, সেগুলো রক্ষার চেষ্টা করা, এরপর শিক্ষা দেওয়া, শিক্ষার যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা—এরকম কয়টা বলবেন?

 

সবচেয়ে বড় কথা হলো- যেই মা-বাবার ভালোবাসা ও যত্নে কোনো ভেজাল ছিল না, সেই মা-বাবাই ওসব সন্তানদের কাছে ভারী। তাদের পরিণাম নিশ্চয়ই খারাপ। তারা যতই নামাজ পড়ুক, রোজা রাখুক, হজ করুক, সামাজিক কাজ করুক, তাদের ওপর আল্লাহ খুশি হবেন না। রাসুল (স.) জানিয়ে দিয়েছেন- رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ ‘রবের সন্তুষ্টি মা-বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি তাদের অসন্তুষ্টির মধ্যে। (তিরমিজি: ১৮৯৯)

 

আল্লামা ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, মা-বাবার ওপর যেমন সন্তানের ভরণপোষণ দেওয়া ফরজ, একইভাবে সন্তানের সম্পদ থেকে সম্পদহীন, অসহায়, অসুস্থ মা-বাবার যাবতীয় খরচ বহন করা ফরজ। কেননা সন্তান তারই অংশ এবং সে তার বাবা-মারই অংশ। তাই ব্যক্তির নিজের জন্য ও নিজ পরিবারের জন্য খরচ করা যেমন আবশ্যক, তেমনি তার অংশ ও মূলের জন্যও খরচ করা আবশ্যক। (আল মুগনি: ৮/১৭১)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ঐক্যের ডাকে রাজুতে নতুন কর্মসূচি

» ডা. জুবাইদা রহমানের আপিলের পরবর্তী শুনানি সোমবার

» আরেকটা এক-এগারো চাই না, আর চুপ থাকব না : রিফাত রশিদ

» প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত আমির

» আসিফ, মাহফুজ, হাসনাত কিংবা হান্নান সবাইকেই টার্গেট করা হয়েছে: হান্নান মাসউদ

» আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চাই না : গয়েশ্বর চন্দ্র

» ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে: খন্দকার মোশাররফ

» প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে যমুনায় ড. ইউনূসের সঙ্গে নাহিদের বৈঠক

» দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য, আগের বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ মাহফুজের

» ইসলামপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মা-বাবার চিকিৎসায় সন্তানরা যেভাবে খরচ দেবেন

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক :মা-বাবার চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সন্তানদের পাশে থাকা জরুরি। চিকিৎসা ভরণ-পোষণের অন্তর্ভুক্ত। সন্তানরা সামর্থ্যবান হলে তাদেরকে অবশ্যই মা-বাবার চিকিৎসা করাতে হবে। যদি সব সন্তান সামর্থ্যবান না হয়, বরং একজন হয়, তাহলে ওই সামর্থ্যবান সন্তানের ওপরই তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করা জরুরি।

 

আল্লামা ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, ‘কারো মা-বাবা অথবা সন্তান (ছেলে-মেয়ে) গরিব হলে এবং ওই ব্যক্তির সামর্থ্য থাকলে তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া আবশ্যক। এতে বিচারক (রাষ্ট্র) তাকে বাধ্য করতে পারবে।’ (আল মুগনি: ৮/১৬৮)

আর পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্যকারো ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ২৩)

 

তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার, তাদের পরিচর্যা সেভাবেই করতে হবে, যেভাবে শৈশবে তারা সন্তানের জন্য করেছেন। তাই আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য কীভাবে দোয়া করতে হবে সেটাও শিখিয়ে দিয়েছেন- رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি সাগীরা।’ অর্থ: ‘হে প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।

 

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে অনেক সন্তান মা-বাবার যথাযথ হক আদায় করে না। উল্টো তাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকে, অনেক কপালপোড়া তো মা-বাবার ওপর বিরক্ত হয়ে শারীরিকভাবেও কষ্ট দেয়। ওরা আসলে মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুতে পরিণত হয়েছে। মা-বাবা সন্তানকে যে পরিমাণ যত্ন করেছেন, সন্তানের সুস্থতার জন্য যা যা করেছেন, তা কি বর্ণনা করা সম্ভব? মোটেও না। গর্ভে ধারণ করা, জন্ম দেওয়া, শিশুর অসুস্থতায় আঁঠার মতো লেগে সেবা করা, পায়খানা-প্রস্রাব পরিষ্কার করা, ঠিকমতো ঘুমাতে না দিলেও বুকে আগলে রাখা, একটু বড় হতে না হতেই যাবতীয় আবদার শুরু হয়, সেগুলো রক্ষার চেষ্টা করা, এরপর শিক্ষা দেওয়া, শিক্ষার যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা—এরকম কয়টা বলবেন?

 

সবচেয়ে বড় কথা হলো- যেই মা-বাবার ভালোবাসা ও যত্নে কোনো ভেজাল ছিল না, সেই মা-বাবাই ওসব সন্তানদের কাছে ভারী। তাদের পরিণাম নিশ্চয়ই খারাপ। তারা যতই নামাজ পড়ুক, রোজা রাখুক, হজ করুক, সামাজিক কাজ করুক, তাদের ওপর আল্লাহ খুশি হবেন না। রাসুল (স.) জানিয়ে দিয়েছেন- رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ ‘রবের সন্তুষ্টি মা-বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি তাদের অসন্তুষ্টির মধ্যে। (তিরমিজি: ১৮৯৯)

 

আল্লামা ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, মা-বাবার ওপর যেমন সন্তানের ভরণপোষণ দেওয়া ফরজ, একইভাবে সন্তানের সম্পদ থেকে সম্পদহীন, অসহায়, অসুস্থ মা-বাবার যাবতীয় খরচ বহন করা ফরজ। কেননা সন্তান তারই অংশ এবং সে তার বাবা-মারই অংশ। তাই ব্যক্তির নিজের জন্য ও নিজ পরিবারের জন্য খরচ করা যেমন আবশ্যক, তেমনি তার অংশ ও মূলের জন্যও খরচ করা আবশ্যক। (আল মুগনি: ৮/১৭১)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com