ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : ভারতের মণিপুর রাজ্যের সাতটি জেলায় শনিবার কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং এসব স্থানের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পৈতৃক বাসভবনে ভাঙচুর চালানো এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে বিক্ষোভকারীরা বীরেন সিংয়ের পৈতৃক বাসভবনে যাওয়ার প্রধান সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল ঠেকায়। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার দূরে মন্ত্রিপুখরি এলাকায় রাত ১১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।
আসাম রাইফেলস, বিএসএফ এবং রাজ্য বাহিনীসহ সুরক্ষা কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
এছাড়া শনিবার ইম্ফলে তিন মন্ত্রী এবং ছয়জন বিধায়কের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। সে সময় মন্ত্রী, বিধায়ক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন না।
এর জেরে শনিবার রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান জাতিগত সহিংসতার জেরে ‘ধারাবাহিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’র পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, থৌবাল, কাকচিং, কাংপোকপি এবং চূড়াচাঁদপুর জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব এবং বিষ্ণুপুর থেকে মোট ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একাধিক পিস্তল, কার্তুজ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর মণিপুরের জিরিবামে কুকি জঙ্গি এবং সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। সেসময় রিলিফ ক্যাম্প থেকে তিন নারী এবং তিন শিশু নিখোঁজ হয়। তাদের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। অবশেষে শনিবার জিরিবাম জেলায় বরাক নদী থেকে দুই শিশু এবং এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, শুক্রবার আরও দুই নারী এবং এক শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছিল।
মৈতৈরা মনে করছেন, উদ্ধার লাশগুলো জিরিবাম থেকে অপহৃত তিন নারী এবং তিন শিশুর। তারা একই পরিবারের সদস্য ছিলেন। যদিও মণিপুর সরকার এখনও উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের পরিচয় নিশ্চিত জানায়নি। পরে মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্যে আসামের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, জিরিবাম জেলায় ছয় জনকে খুন করায় অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। তাদের অভিযোগ, কুকি জঙ্গিরা তাদের অপহরণ করেছিলেন।
দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে কুকি ও মৈতৈ সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সহিংসতার সাক্ষী থাকা মণিপুরে সম্প্রতি একাধিক সহিংসতার ঘটনায় ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে।
ইম্ফল উপত্যকা এবং সংলগ্ন পার্বত্য অঞ্চলে সংঘর্ষের পরে, গত জুন মাসে জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় জিরিবামের একটি মাঠে এক কৃষকের ছিন্নভিন্ন দেহ পাওয়ার পরে সহিংসতার সূত্রপাত হয়।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলটি পরিদর্শন করার এবং শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন, দ্য হিন্দু