ছবি সংগৃহীত
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র কৌতূহল দেখা দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেয়ার দাবি তুলে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার মতো সংগঠনগুলো বঙ্গভবনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ এবং ‘শপথ ভঙ্গের’ অভিযোগ আনার পর আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো পরিস্থিতি ‘দৃশ্যত সতর্ক’ পর্যবেক্ষণ করছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পদত্যাগের সময় বেঁধে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন—রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদে থাকা ‘কঠিন’ হয়ে পড়েছে। দৈনিক নয়াদিগন্তের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবর বলেন, “বিতর্কটা তারই সৃষ্টি। এখন তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতির গ্রহণযোগ্যতা হারানোর কারণে তার পদে থাকা কঠিন হবে।
মো. সাহাবুদ্দিন চলতি বছরের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তার চাকরির ইতিহাসে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি এবং সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা চলাকালীন, গুঞ্জন উঠেছে যে তাকে সরানোর বিষয়টি নিয়ে সরকার আলোচনা করছে।
সরকারের একটি অংশ রাষ্ট্রপতিকে সরানোর পক্ষে থাকলেও অন্য একটি অংশ মনে করছে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জরুরি সিদ্ধান্তগুলো অনুমোদন করানোই ‘স্বস্তিদায়ক’। রাষ্ট্রপতির বক্তব্য সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যা সরকারের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছে।
এদিকে, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দেশে ফিরলে রাষ্ট্রপতি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। তিনি রাজনৈতিক দলের ও আন্দোলনকারী ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনকারীরা গভীর রাত পর্যন্ত বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান করেছে। তারা শহীদ মিনারে গণজমায়েত করে রাষ্ট্রপতিকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদত্যাগের দাবি জানায়।
দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে শুনেছেন, কিন্তু কোন প্রমাণ তার কাছে নেই। এরপর সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও অভিযোগের পর বঙ্গভবন থেকে একটি ব্যাখ্যা দেয়া হয়, যেখানে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে বিতর্কের উদ্রেক না করার জন্য বলা হয়।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদে টিকে থাকা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার বিরুদ্ধে চাপ বাড়ছে এবং তার পদত্যাগ অবশ্যম্ভাবী হতে পারে। সূত্র: বিবিসি