এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:‘ বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় এবার প্রত্যাশার চেয়ে বিক্রি কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সহ নয়টি উপজেলার ব্যবসায়ীরা।
আগামী ৮ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। তাই সর্বত্র চলছে দুর্গা উৎসবের শেষ প্রস্তুতি। উৎসবকে রাঙাতে চলছে কেনাকাটা, সাজার প্রস্তুতি। তবে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার দুর্গাপূজাকেন্দ্রিক বাণিজ্য তুলনামূলক কম বলে আক্ষেপ করছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে পূজার বাণিজ্য শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত বেচাকেনা নেই। এমন অবস্থায় হতাশায় ভুগছেন তারা।
পূজার প্রস্তুতি ঘিরে প্রতি বছর এ সময় বাগেরহাটের নয়টি উপজেলার বাজারে দোকানগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় সরব হয়ে ওঠে। শাঁখা, শঙ্খ, প্রতিমার কাপড়, ঘণ্টা, ঘট, প্রদীপ, আগরদানি, ঠাকুরের মালা, কীর্তনের মালা, কদম মালা, জবের মালা, মুকুট থেকে শুরু করে শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবিসহ অলঙ্কারের দোকানগুলোয় চলে কেনাকাটার ধুম। সেই সঙ্গে ঢাক, খোল, ঢোল, তাসার দোকানগুলোতেও ব্যস্ত থাকেন বাদ্যযন্ত্রের কারিগর ও বিক্রেতারা। এবার তাদের মধ্যেও নেই সেই চিত্র।
দুর্গাপূজার আগেভাগেই শাঁখা, শঙ্খ, সিঁদুর, আলতাসহ আরও কিছু সামগ্রীর বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায় বলে জানান নকিপুর বাজারের পূজার সামগ্রী বিক্রয়কারী উজ্জ্বল দাস। এবার বিক্রি অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে বলে দাবি তার। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সাধারণ বছর এমন সময় দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ওপর বিক্রি থাকে। এ বছর ৫ হাজার টাকা বিক্রি করতেও কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে পোশাক ও জুতার দোকানে গত শুক্রবার থেকে ক্রেতার আনাগোনা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বাগেরহাটের বাগেরহাট শহরের কাপড় পট্টি, হাজী রিয়াজ উদ্দিন মার্কেটসহ বিভিন্ন গলি ঘুরে দেখা যায় ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কোন কোন দোকানে স্বল্প সংখ্যক ক্রেতা থাকলেও তেমন বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পূজা উপলক্ষে পোশাকের দোকানে ক্রেতার আনাগোনা সামান্য হলেও বেড়েছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জামাকাপড়ের বিক্রি বেড়েছে। তবে পূজার বাজার অনুযায়ী বিক্রি অনেক কম। একদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ, অন্যদিকে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না।
এই ব্যবসায়ী জানান, এ মৌসুমে ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি হয়। সেভাবেই বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু বাজারের যা অবস্থা, তাতে এবার ৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে কি না সন্দেহ।ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর পূজার ৭দিন আগে থেকে পূজা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রচুর পরিমান ক্রয়-বিক্রয় হত বাজারে। দল বেঁধে কেনাকাটা করতে আসতেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কিন্তু এবার তেমন কোন ক্রেতা নেই। পূজাকে কেন্দ্র করে দোকানে নতুন পোশাকের পর্যাপ্ত সংগ্রহ থাকলেও সে অনুযায়ী এবার ক্রেতা নেই।
শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এবার দুর্গাপূজায় সাধারন, পোশাকের কদর বেশি। শরতের মোহনীয় রূপের সঙ্গে মানানসই ধর্মীয় এবং ট্রেন্ডি পোশাক এখন হালফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে। ধুতি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, টিশার্ট, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, থ্রিপিস, জুয়েলারি, শাখা রয়েছে কেনাকাটার পছন্দের তালিকায়। যুক্ত হয়েছে ওয়েস্টার্ন পোশাকও, তবে এবার ক্রেতা নেই বললেই চলে।
প্রসাধনী বিক্রেতা বিজয় কুমার বলেন, গতবারের তুলনায় এবছর বেচা বিক্রি কম। মানুষের আয় ইনকাম কম থাকায়, ক্রেতারাও কম আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বাচ্চার জন্য পূজার পোশাক কিনতে আসা মৌসুমি দেবনাথ নামের এক নারী বলেণ, আমি আমার বাচ্চার পছন্দ মতো জামা কিনেছি।কিন্তু জামা কাপড়ের দাম বেশি। তারপর ও যেহেতু বাচ্চা পছন্দ করছে তাই তার পছন্দ মতো নিয়েছি।
ব্যবসায়ী আবদুল কাদের বলেন, মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে, তবে এটাকে ভালো বলা যায় না। কাল বাদে পরশু পূজা শুরু। তবে পূজার কেনাকাটার আমেজ এখনো শুরু হয়নি।
থ্রিপিসসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের ব্যবসায়ী দোলাল চন্দ্র দাস বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি অর্ধেকের ও কম ৷ গত বছর পূজার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই দৈনিক ৩০-৪০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এবার সেটা ১০-১৫ হাজারে নেমেছে। পূজা শেষ হলে সেটা আরও কমে দৈনিক ৫-৬ হাজারে নামবে। সব মিলিয়ে ব্যবসার অবস্থা ভালো না।
তন্ময় সরকার নামের এক ক্রেতা বলেন, কাপড়ের দাম অনেক বেশি। ইচ্ছা ছিল শার্ট, প্যান্ট কিনবো। দাম বেশি হওয়ায় শুধু প্যান্ট কিনেই ফিরে যাচ্ছি৷ বাজেট কম, পরে এসে শার্ট কিনবো।
কাপড় ব্যবসায়ী তারিকুল ইসলাম বলেন, এবারের পূজায় ব্যবসার অবস্থা ভালো না। এবার বেচাকেনা ভালো না। ব্যবসা খারাপ। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে মানুষ বিলাসিতার জন্য কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে।
বস্ত্র ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ও কাটা কাপড় মালিক সমিতির সভাপতি কার্তিক ভট্টাচার্য বলেন, এইবার পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো না থাকার করণে বিক্রি কম।রাজনৈতিক অস্থিরতা, বন্যা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ ও অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল।এবার কাপড় ব্যবসায়ীদেরও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, হয়তো পূজার পর অনেক দোকান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে স্বর্ণের বাজারে পূজা মৌসুমের প্রভাব পড়েনি বলে জানান জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। একটা সময় ছিল যখন পূজার মৌসুমে স্বর্ণের বাজারেও ক্রেতার ভীড় বেড়ে যেত। বর্তমানে সোনার আকাশচুম্বী দামের কারণে খুব কম মানুষই স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে পা বাড়চ্ছেন।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মোরেলগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বলেন, সোনার দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় জুয়েলারি ব্যবসায় ধস নেমেছে। একটি ছোট্ট নাকফুলের দামই এখন ২ হাজার টাকা। আমরা নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের হারিয়েছি অনেক আগেই। এখন মধ্যবিত্ত ক্রেতাদেরও পাচ্ছি না। উচ্চবিত্ত ক্রেতারা এলেও হাতেগোনা কয়েকজন।উজ্জ্বল মোল্লা নামের একজন পোশাক বিক্রেতা বলেন, শরতের মোহনীয় রূপের সঙ্গে মানানসই ধর্মীয় এবং ট্রেন্ডি পোশাক এখন হালফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে। তার দোকানে ধুতি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, টিশার্ট, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, থ্রিপিস রাখা হয়েছে। যুক্ত হয়েছে ওয়েস্টার্ন পোশাকও। সব ধরনের আইটেম রাখার পরও এবার ক্রেতা নেই বললেই চলে।
প্রসাধনী বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, পূজার সময় ঘনিয়ে এলেও বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম। গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতা কম থাকায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে।
বাচ্চার জন্য পূজার পোশাক কিনতে আসা মৌসুমী দেবনাথ বলেন, ‘আমি আমার বাচ্চার পছন্দ মতো জামা কিনেছি। কিন্তু জামা-কাপড়ের দাম বেশি। তারপরও যেহেতু বাচ্চা পছন্দ করছে, তাই তার পছন্দ মতো নিয়েছি। লোকজন কম থাকায় দোকানগুলো ঘুরে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করতে পেরেছি।’
থ্রিপিসসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের ব্যবসায়ী দুলাল চন্দ্র দাস বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি অর্ধেকেরও কম। গত বছর পূজার দুই সপ্তাহ আগে থেকে দৈনিক ৩০-৪০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এবার সেটা ১০-১৫ হাজারে নেমেছে। পূজা শেষ হলে সেটা আরও কমে দৈনিক ৫-৬ হাজারে নামবে। সব মিলিয়ে ব্যবসার অবস্থা ভালো না।
তন্ময় সরকার নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘কাপড়ের দাম অনেক বেশি। ইচ্ছা ছিল শার্ট, প্যান্ট কিনব। দাম বেশি হওয়ায় শুধু প্যান্ট কিনেই ফিরে যাচ্ছি৷ বাজেট কম, পরে এসে শার্ট কিনব।’
তিনি আরো বলেন, দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জমকালো আয়োজন কম এবার। তাই বিক্রিও কম। সামনের দিনে বিক্রি খুব একটা বাড়বে বলা যায় না।বস্ত্র ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ও কাপড় মালিক সমিতির সভাপতি কার্তিক ভট্টাচার্য বলেন, এ বার পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো না থাকার কারণে বিক্রি কম। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বন্যা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষও অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল। এবার কাপড় ব্যবসায়ীদেরও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। হয়ত পূজার পর অনেক দোকান বন্ধ হয়ে যাবে।