আলোচিত হাকিমপুর সিকদার বাড়ির দুর্গাপূজায় জমকালো আয়োজন নেই!

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রতি বছরই বাংলাদেশজুড়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছিল দুর্গা পূজা চোখ থাকতো দেশের দক্ষিণের জনপদ  শিকদার বাড়ির পুজোমণ্ডপের দিকে। কিন্তু এবার তা অনুপস্থিত।                                                                                

সরজমিনে দেখা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের আলোচিত শিকদার বাড়িতে সুনশান নীরবতা। বাড়ির সামনের গেটটি তালাবদ্ধ। আশপাশের সবকিছুই যেন স্তব্ধ। আয়োজক লিটন শিকদারের ঘনিষ্ঠ গৌরব শিকদার জানালেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনা ছিল শিকদার বাড়ির সবচাইতে বড় এই পুজোমণ্ডপটি। প্রতিবছরই প্রায় ছয় মাস ধরে ১৫ থেকে ২০ জন কারিগর হাতে চলে প্রতিমা তৈরির কাজ। এবারের পুজোর জন্যও শিকদার বাড়িতে বেশ কয়েকজন কারিগর প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। তবে তৈরিও করা হয়েছিল কিছু প্রতিমা। কিন্তু প্রধান ভাস্কর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় কাজ স্থগিত করা হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। এরপর তাকে ভারতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তবে এবার আর ধুমধাম সেই আয়োজন আর থাকছে না। পারিবারিকভাবে পুজোর ছোটখাটো আয়োজনে হবে।বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ীতে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক প্রতিমা নিয়ে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে হলেও এ ধরনের আয়োজনে শিকদারবাড়ী এখন দুই বাংলার সবার কাছে পরিচিত। ২০১০ সালে ব্যবসায়ী লিটন শিকদার ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের বাড়িতে প্রথমবারের মতো দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। ওই সময় ১৫১টি প্রতিমা তৈরি করে তিনি সবার নজরে আসেন। এরপর থেকে প্রতি বছরই এ মণ্ডপে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েছে। তবে কভিডসহ বিভিন্ন কারণে তিন বছর স্বল্প পরিসরে পূজা আয়োজন করা হয়। প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ বলে দাবি করা হয়।

পূজা আয়োজক লিটন শিকদারের ঘনিষ্ঠ গৌরব শিকদার বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনায় ছিল শিকদারবাড়ীর পূজামণ্ডপটি। প্রতি বছরই প্রায় ছয় মাস ধরে ১৫-২০ জন কারিগরের দেবদেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। তবে এবার সে আয়োজন থাকছে না।

হাকিমপুর গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন সাহা বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শিকদারবাড়ীতে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ কারণে শিকদারবাড়ী দেশ-বিদেশে আলোচিত নাম। কিন্তু এ বছর তেমন সাড়া নেই।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী লিটন শিকদার সেলফোনে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। একদিকে শোক চলছে অন্যদিকে আনন্দ হবে, আমি এটা মেনে নিতে পারিনি। এজন্যই এবার পূজার বড় আয়োজন রাখা হয়নি। তবে পারিবারিকভাবে ছোট পরিসরে পূজা করা হবে।

হাকিপুর গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন সাহা বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শিকদার বাড়িতে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এ বছর তেমন সাড়া নেই। শিকদার বাড়ি দুর্গোৎসবের আয়োজক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার বলেন, ‘ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। একদিকে শোক চলছে অন্যদিকে আনন্দ হবে, আমি এটা মেনে নিতে পারিনি।এজন্যই এবার পুজোর বড় আয়োজন রাখা হয়নি। তবে পারিবারিকভাবে ছোট পরিসরে পুজো করা হবে।

তিনি জানান, সনাতন ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে উজ্জীবিত করতে তার স্বর্গীয় বাবা ডা. দুলাল কৃষ্ণ শিকদার বৃহত্তর পরিসরে দুর্গোৎসব শুরু করে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হতো। ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে প্রথম দুর্গাপুজোর জমকালো আয়োজন শুরু হয়। সেই থেকে প্রতিবছর বড় মহাধুমধামে পুজো হয়ে আসছে এই বাড়িতে। ২০১৯ সালেও ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে এই বাড়িতে পুজো উদযাপিত হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে শিকদার বাড়িতে খুবই সীমিত পরিসরে পুজো হয়েছে। কোভিড মহামারির কারণে শিকদার বাড়িতে তিন বছর উৎসব বন্ধ ছিল। তবে গত বছর ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে আগের রূপে ফিরে আসে। লিটন শিকদার সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে বাড়িতে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন। বিশাল পুজোমণ্ডপে ছিল- ঘোড়ায় চড়ে দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমন ও গমন, বিভিন্ন দেব-দেবীর সৃষ্টির রহস্য, নারায়ণের অনন্ত শয্যা, সমুদ্র মন্থন, সীতা হরণ, শ্রীকৃষের অষ্টসখী, ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের কুম্ভকর্ণের প্রতিমূর্তি।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে স্পেশাল লাউঞ্জ হবে : আইন উপদেষ্টা

» তিন দিনে পালিয়েছেন আ.লীগের নেতারা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» রাজধানীতে সন্ত্রাসী হামলায় সাংবাদিক আহত

» মাঠে আছি, নির্ভয়ে পূজা মণ্ডপে যাবেন: সেনাপ্রধান

» প্রধান উপদেষ্টার কাছে ১২ প্রস্তাব দিলো গণঅধিকার পরিষদ

» খুনিরা যেন নির্বাচন করার সুযোগ না পায় : চরমোনাই পীর

» সাবেক মন্ত্রীরা কীভাবে পালাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখার আহ্বান

» রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পর এবার সংবিধান বাতিলের দাবি হাসনাতের

» হাতীবান্ধায় কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষন, গ্রেফতার ৬

» বাগেরহাটের ফকিরহাট মোরেলগঞ্জে ১৪৫টি পূজা মন্ডপে শেষ মুহুর্তে প্রতিমায় রং তুলির আচঁড়ে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আলোচিত হাকিমপুর সিকদার বাড়ির দুর্গাপূজায় জমকালো আয়োজন নেই!

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রতি বছরই বাংলাদেশজুড়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছিল দুর্গা পূজা চোখ থাকতো দেশের দক্ষিণের জনপদ  শিকদার বাড়ির পুজোমণ্ডপের দিকে। কিন্তু এবার তা অনুপস্থিত।                                                                                

সরজমিনে দেখা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের আলোচিত শিকদার বাড়িতে সুনশান নীরবতা। বাড়ির সামনের গেটটি তালাবদ্ধ। আশপাশের সবকিছুই যেন স্তব্ধ। আয়োজক লিটন শিকদারের ঘনিষ্ঠ গৌরব শিকদার জানালেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনা ছিল শিকদার বাড়ির সবচাইতে বড় এই পুজোমণ্ডপটি। প্রতিবছরই প্রায় ছয় মাস ধরে ১৫ থেকে ২০ জন কারিগর হাতে চলে প্রতিমা তৈরির কাজ। এবারের পুজোর জন্যও শিকদার বাড়িতে বেশ কয়েকজন কারিগর প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। তবে তৈরিও করা হয়েছিল কিছু প্রতিমা। কিন্তু প্রধান ভাস্কর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় কাজ স্থগিত করা হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। এরপর তাকে ভারতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তবে এবার আর ধুমধাম সেই আয়োজন আর থাকছে না। পারিবারিকভাবে পুজোর ছোটখাটো আয়োজনে হবে।বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ীতে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক প্রতিমা নিয়ে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে হলেও এ ধরনের আয়োজনে শিকদারবাড়ী এখন দুই বাংলার সবার কাছে পরিচিত। ২০১০ সালে ব্যবসায়ী লিটন শিকদার ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের বাড়িতে প্রথমবারের মতো দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। ওই সময় ১৫১টি প্রতিমা তৈরি করে তিনি সবার নজরে আসেন। এরপর থেকে প্রতি বছরই এ মণ্ডপে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েছে। তবে কভিডসহ বিভিন্ন কারণে তিন বছর স্বল্প পরিসরে পূজা আয়োজন করা হয়। প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূজামণ্ডপ বলে দাবি করা হয়।

পূজা আয়োজক লিটন শিকদারের ঘনিষ্ঠ গৌরব শিকদার বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনায় ছিল শিকদারবাড়ীর পূজামণ্ডপটি। প্রতি বছরই প্রায় ছয় মাস ধরে ১৫-২০ জন কারিগরের দেবদেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। তবে এবার সে আয়োজন থাকছে না।

হাকিমপুর গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন সাহা বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শিকদারবাড়ীতে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ কারণে শিকদারবাড়ী দেশ-বিদেশে আলোচিত নাম। কিন্তু এ বছর তেমন সাড়া নেই।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী লিটন শিকদার সেলফোনে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। একদিকে শোক চলছে অন্যদিকে আনন্দ হবে, আমি এটা মেনে নিতে পারিনি। এজন্যই এবার পূজার বড় আয়োজন রাখা হয়নি। তবে পারিবারিকভাবে ছোট পরিসরে পূজা করা হবে।

হাকিপুর গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন সাহা বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শিকদার বাড়িতে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এ বছর তেমন সাড়া নেই। শিকদার বাড়ি দুর্গোৎসবের আয়োজক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার বলেন, ‘ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। একদিকে শোক চলছে অন্যদিকে আনন্দ হবে, আমি এটা মেনে নিতে পারিনি।এজন্যই এবার পুজোর বড় আয়োজন রাখা হয়নি। তবে পারিবারিকভাবে ছোট পরিসরে পুজো করা হবে।

তিনি জানান, সনাতন ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে উজ্জীবিত করতে তার স্বর্গীয় বাবা ডা. দুলাল কৃষ্ণ শিকদার বৃহত্তর পরিসরে দুর্গোৎসব শুরু করে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হতো। ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে প্রথম দুর্গাপুজোর জমকালো আয়োজন শুরু হয়। সেই থেকে প্রতিবছর বড় মহাধুমধামে পুজো হয়ে আসছে এই বাড়িতে। ২০১৯ সালেও ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে এই বাড়িতে পুজো উদযাপিত হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে শিকদার বাড়িতে খুবই সীমিত পরিসরে পুজো হয়েছে। কোভিড মহামারির কারণে শিকদার বাড়িতে তিন বছর উৎসব বন্ধ ছিল। তবে গত বছর ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে আগের রূপে ফিরে আসে। লিটন শিকদার সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে বাড়িতে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন। বিশাল পুজোমণ্ডপে ছিল- ঘোড়ায় চড়ে দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমন ও গমন, বিভিন্ন দেব-দেবীর সৃষ্টির রহস্য, নারায়ণের অনন্ত শয্যা, সমুদ্র মন্থন, সীতা হরণ, শ্রীকৃষের অষ্টসখী, ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের কুম্ভকর্ণের প্রতিমূর্তি।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com