ছবি সংগৃহীত
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সেখানে বসে নতুন চক্রান্ত শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে ঐক্য ও সম্প্রীতির এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তার দোসররা ভারতে পালিয়ে গিয়ে এখন সেখান থেকে নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে। যখন মানুষের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারে না তখন হিন্দু ভাইদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রমাণ করতে চায় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’
তিনি বঙ্গবন্ধুর অবমাননা ও তার প্রতিকৃতি ভাঙার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এর জন্য দায়ী করেন শেখ হাসিনাকে। ছাত্ররা যে পথ দেখিয়েছে সেই পথে দেশকে সুখী ও সুন্দর করে গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনার দানবীয় সরকার কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। তখন সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ে এবং গণভবন অভিমুখে রওনা দেয়। ওই সময় সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয় বিক্ষুব্ধ জনতাকে গুলি করে হত্যা করতে। কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। এক পর্যায়ে তিনি প্রাণের ভয়ে হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে যান। তার সাথে অনেকে পালিয়ে গেছেন। অনেকে পালাতেও পারেননি, এখন লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রায় ১৫ বছর একটি স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এই ১৫ বছরে তারা আমাদের প্রায় ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। আমাদের প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে। সারাদেশে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে মামলা দেওয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের সাতজন নেতাকর্মী মারা গেছেন। আমাদের প্রায় ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এত নির্যাতনের পরও আমরা কখনো হাল ছেড়ে দিইনি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার মা-বোনেরা আছেন, দাদারা আছেন, তারা ভালো করেই জানেন, এখানে হিন্দু-মুসলমান কখনো যুদ্ধ হয় না। হাজার বছর ধরে এই মাটিতে এই বাংলাদেশেই আমরা হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ-খ্রিস্টান একসাথে বসবাস করে আসছি। হিন্দুদের দুর্গাপূজায় লাড্ডু আমরা খাই, তেমনি তারাও আমাদের ঈদের সময় মিষ্টি পায়েস খায়। তারা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে একটি বিদ্বেষ ছড়াতে চায়।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম, দেশে জনগণের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে, পালানোর পথ থাকবে না। তাই হয়েছে। শেখ হাসিনাকে অবশেষে দিল্লিতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন কেউ তাকে রাখতে চায় না। ভারতও অফিসিয়ালি এখনো কিছু বলেনি। আমরা জানি তিনি ভারতে আছেন। যখন সব পথ বন্ধ তখন হিন্দু ভাইদের সামনে আগায় দিচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত আমার কাছে দশটি বিদেশি টেলিফোন ইন্টারভিউ করছে। আমাদের কথা পরিষ্কার, রাজনীতির যখন পরিবর্তন হয় তখন একটি তাণ্ডব হয়, ধর্মীয় নয় এটা রাজনৈতিক।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি যখন দেখি বিক্ষুব্ধ জনতা বিজয় সরণির সামনে বঙ্গবন্ধুর মূর্তিকে ভাঙতে, তখন আমার খুব খারাপ লেগেছে। খারাপ লেগেছে এই কারণে যে, বঙ্গবন্ধু আমাদের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সমঝোতায় তাঁর বিরাট ভূমিকা ছিল। এই মানুষটিকে এই হাসিনা কত ছোট করে ফেলল। এর জন্য সম্পূর্ণভাবে হাসিনা দায়ী।’
স্বৈরশাসনের পতন ঘটিয়ে ছাত্ররা যে মুক্তির পথ দেখিয়েছে, সে পথে সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে চলার এবং হিন্দু- মুসলমান মিলেমিশে থেকে একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
সমাবেশে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, জেলা যুবদলের সভাপতি মহেবুল্লাহ চৌধুরী আবু নুর, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েসসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম