ছবি সংগৃহীত
সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, সরকার ও সরকারি দল রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। জনগণের ওপর গুলিবর্ষণ করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে দমন-নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যারা দেশের জনগণ ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করবে, তারাই জনগণের ওপর বন্দুক তাক করে আছে।
আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় রংপুরে দুই দিনের সফরে এসে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, সরকার যাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের কাউকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ পায়নি। আমার প্রশ্ন হলো তাহলে কেন নির্বিচারে এমন গণহত্যা করা হলো? হেলিকপ্টার থেকে, বাড়ির ছাদ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে বুঝলো কে সন্ত্রাসী, কে ভালো, কে শিশু? সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে আজ দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে দাবি করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। আবারও জনগণ মাঠে নামবে, মানুষ মারা যাবে। একসময় বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমি মনে করি এ থেকে উত্তরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমার জীবনে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম দেখেছি কিন্তু সাধারণ মানুষদের এভাবে একত্রিত হয়ে এরকম আন্দোলন করতে দেখিনি। দীর্ঘদিন থেকে মানুষ বৈষম্য, লাঞ্ছনা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সব বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাতে ছাত্রদের সঙ্গে জনগণ মাঠে নেমেছে।
জিএম কাদের আরও বলেন, সংঘর্ষের শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াত বলে বলে যতবার সরকার যেভাবে প্রচার করুক না কেন, আমি ঢাকায় দেখেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। জনগণ সরকারের এ কথা গ্রহণ করেনি। এটি জনগণের সংগ্রাম। বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টির কেউ থাকলে তারা ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনে গিয়েছিল।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রশাসনিক অর্ডারে নিষিদ্ধ করা ঠিক নয়। জনগণ তাদের জন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষতিকারক মনে করলে তারাই বয়কট করবে। একসময় সেই রাজনৈতিক দল বিলীন হয়ে যাবে। জোর করে কিছু করলে তাদের যদি গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক কাঠামো থাকে তাহলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ড হবে, তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে করে অস্বাভাবিক রাজনীতির বীজ বপন হতে পারে।
কোটা আন্দোলন নিয়ে জিএম কাদের বলেন, কোটা আন্দোলনে যারা নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া মানুষকে হয়রানি, মামলা-মোকদ্দমায় ফেলা হচ্ছে। মামলা দেওয়া মানে একজনকে পঙ্গু করে দেওয়া। মামলা হলে আদালতে যাওয়া, জামিন নেওয়া, মামলা মোকাবিলা করাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ছাত্ররা নিঃস্ব হয়ে যাবে। আমি ছাত্রদের নামে মামলা দেওয়ার ঘটনাটি ঘৃণার সঙ্গে প্রতিবাদ করি। আওয়ামী লীগও একসময় বিএনপির দ্বারা এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তখন জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াসির, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেনসহ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।