ছবি সংগৃহীত
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকার ভেসে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষমতাসীনরা ভেসে যাবে, তাদের সিংহাসন উড়ে যাবে।
সোমবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর মগবাজারে কারাবন্দি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুক হক এনামের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সামনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অহেতুক গালাগালি করেছেন। ঢালাওভাবে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতি’ বলে নিন্দা করেছেন।
রিজভী বলেন, ‘রাগ করে ২০১৮ কোটা বাতিল করেছি- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রমাণ করে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, শপথ ভঙ্গ করেছেন। দেশের আদালত আজ প্রধানমন্ত্রীর শাড়ির আঁচলে বন্দি।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘খন্দকার এনামের স্ত্রীর মর্মস্পর্শী কথাগুলো শুনে হৃদয়ে আলোড়ন তৈরি করেছে। এটি বিরোধী রাজনীতির সবার পরিবারের কথা। কারণ এই পরিবারগুলো বেশি সাফার করছে। আমাদের পার্মানেন্ট ঠিকানা করে দেওয়া হয়েছে কারাগার। আমাদের প্রত্যেকের বসবাস হয় নদীর ধারে, বাঁশঝাড়ে, হয় লাল দালানে।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ না খালেদা জিয়া মুক্ত করতে না পারছি, গণতন্ত্র মুক্ত করতে না পারছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আনতে পারছি ততক্ষণ আমাদের প্রেরণা দিচ্ছেন আমাদের মা, স্ত্রীরা বোনেরা। এটি আমাদের সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।’
‘২০১৮ সালে বিরক্ত হয়ে কোটা সিস্টেম বাতিল করেছি’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আপনি তো ডামি প্রধানমন্ত্রী। আপনি না শপথ নেওয়ার সময় বলেছিলেন, রাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না। আপনি তো শপথ ভঙ্গ করছেন। সংবিধান ভঙ্গ করছেন প্রতিনিয়ত। সবচেয়ে বড় যদি অপরাধী হয়, কারাবন্দি হয়, সেটি তো আপনাকে হতে হবে। প্রতি মুহূর্তে তিনি একের পর এক আইন ভাঙছেন। রাগের বশবর্তী হয়ে আপনি কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছেন, প্রথমেই আপনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। আপনি শপথ ও আইন ভঙ্গকারী প্রধানমন্ত্রী।’
রিজভী বলেন, ‘আজ কোটা সংস্কারের জন্য উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ প্রধানমন্ত্রী যৌক্তিক আন্দোলন পরিপন্থী কথা বলেছেন। কি বলেছেন, ‘যারা আন্দোলন করেছেন তারা নাকি রাজাকারের নাতি’। ১৮ সালে আপনি আন্দোলনরত ছাত্রদের সান্ত্বনা দিতে কোটা বাতিল করেছিলেন। মনে আক্রোশ পুষে রেখেছিলেন, সময়মতো সেটি কাজে লাগাবেন। তাই লাগিয়েছেন।
রিজভী বলেন, ‘আমি যদি ৩৪ বছর আগে ফিরে যেতে পারতাম। তাহলে এই কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিতাম।’
আইন আদালত সব প্রধানমন্ত্রীর আঁচলে বন্দি এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আদালতকে দিয়ে আপনি সব ইচ্ছা পূরণের কাজ করে যাচ্ছেন। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছেন। আপনি হয়তো ভাবছেন সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন, কেউ আসবে না। মনে রাখতে বেহুলার বাসরঘরের কোথাও না কোথাও ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্র দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষের ঢেউ আপনার সিংহাসন ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
এনামের স্ত্রী নাজনীন আক্তার লতা তার পরিবারের দুঃসময়ের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। দুটি বাচ্চা জন্ম হওয়ার সময় আমি আমার স্বামীকে কাছে পাইনি। এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে। জন্ম হওয়ার পর আমার স্বামী সন্তানের মুখ দেখতে পারেনি। বাবা বেঁচে থাকার পরও আমরা সন্তানেরা এতিম। শুধুমাত্র বিরোধী রাজনীতি করায় বিসিএস ভাইভা থেকে নো নো শুনে বের হয়েছি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি জয়দেব জয়, সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুর রহমান তুষার, সহ সভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল, বিএনপি নেতা জাকির হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা নাহিদুর রহমান নাহিদ, মহিউদ্দিন মহি, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক শাহ পরান, ছাত্রদল নেতা ডা. মুশফিক, মিরাজ হোসেন, আশরাফুল আসাদ-সহ নেতৃবৃন্দ। সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম