মুহাম্মদ মিজানুর রহমান:মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার চেয়ে অধিকতর মহব্বত করনেওয়ালা আর কেউ নেই। আল্লাহ যে মানুষকে সৃষ্টি করলেন তার দুনিয়াবি কল্যাণের কথা ভেবে তিনি তার জন্য সবকিছুর আনজাম করেছেন। শুধু দুনিয়া নয়, আখিরাতেও সে যেন ভালো থাকে, তাই তার মুক্তির পথটিও দেখিয়ে দিয়েছেন। মানুষকে দেবার জন্য কোনো নেয়ামতকেই তিনি বাদ রাখলেন না। কিছুটা তাকে দুনিয়াব জীবনে দিলেন। বাকিটা আখিরাতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিলেন। যে বান্দা আল্লাহর প্রতি তার দায়কে এড়িয়ে যায়, আল্লাহরও সে বান্দার প্রতি কোনো দায় নেই। কিন্তু যে মহব্বত করে, আল্লাহও তার দিকে মহব্বতের হাত বাড়িয়ে দেন।
মানুষ আল্লাহর বড়ই মহব্বতের সৃষ্টি। সুতরাং এই মানুষ কখনোই আল্লাহর অবাধ্য হতে পারে না। কারণ এটি তার শানকে ভূলণ্ঠিত করে। তার উপর অবাধ্যতার ছাপ এঁটে দেয়। তখন সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দার নাম থেকে বাদ পড়ে যায়। তবে হ্যাঁ, সে যদি তার মালিকের অবাধ্য হবার পর নিজের কৃত ভুল বুঝতে পারে, আর তার কাছে ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থী হয়, আল্লাহ চাইলে তাকে মাফ করে দিতে পারেন। ফিরিয়ে দিতে পারেন তার হারানো সম্মান।
দুনিয়ার জীবনে মানুষকে অনেক কিছু ভাবতে হয়। কিন্তু সময়টা এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে,অনেক বড় পাপ কাজ করেও মানুষ তাকে পাপ হিসেবে মনে করতে চায় না। তাই অনুতপ্ত হওয়ার অনুভূতি নিজের মধ্যে জাগ্রত হয় না। পাপী যদি পাপকে পাপ না ভাবে, তাহলেও পাপ কখনো পুণ্য হয়ে যাবে না। বরং তার এই অজ্ঞতা তাকে ভস্ম করে দিবে।
তাই পাপ জেনেও ভুলবশত বা শয়তানের ধোকায় পাপ কাজ করে ফেলেছেন এটি আপনাকে বারবার তাওবার তাগিদ দিবে। সময় ক্ষেপণ না-করে তাওবা করে দিন। আর আল্লাহকে বলুন, ওহে পরোয়ারদেগার, মৃত্যু পর্যন্ত আমি আর কোনো পাপ কাজ করতে চাই না, তুমি আমাকে এই ওয়াদা পূর্ণ করার তাওফিক দাও। আল্লাহ আপনার প্রার্থনা শুনবেন, কারণ মুমিনের চোখের পানি বৃথা যায় না। যদি অনুতপ্ত বা মহব্বত দিয়ে সেই অবস্থা আপনি তৈরি করতে পারেন।
দুনিয়ায় থাকতে যত বেশি পারেন ভালো কাজ করেন। ভালো কিছু রেখে যান। আরাম-আয়েশের মধ্যে হারিয়ে যাবেন না। নিজের কর্ম নিয়ে ভাবুন, নিজেকে নিয়ে ভাবুন, নিজের পরিণতি দেখতে পাবেন। একবার চোখ বন্ধ করে দেখুন, আল্লাহর কাছে আপনার প্রতিশ্রুতি কী ছিল, আর আপনি কী করছেন?
নিজেকে জানতে চেষ্টা করুন। কারণ এই জানার মধ্যেই আপনার সফলতা। আপনি নিজেকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তাই পবিত্র কোরআনে আল্লাতায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, প্রত্যেকটি মানুষেরই দেখা উচিত, আগামীর জন্য সে কী পেশ করতে যাচ্ছে…। ’ (সূরা আল হাশর, আয়াত – ১৮)।
দুনিয়ায় বসে নিজের হিসাব করুন। আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিন। হজরত ওমর রা: বলতেন, ‘আখিরাতে তোমাদের হিসাব নেওয়ার আগে নিজেরা নিজেদের হিসাব নাও। আমল পরিমাপের আগে নিজেরা তা একটু মেপে দেখো। কারণ আগামী দিনের হিসাব-নিকাশের আগে আজকের হিসাব মিলিয়ে নেওয়া অনেক সহজ। (ইগাসাতুল লাহফান, পৃষ্ঠা : ৯৪)।
আপনি যদি আল্লাহ সংজ্ঞায়িত মানুষ হতে চান, অবশ্যই আপনাকে পরকালের কথা ভাবতে হবে। চিন্তা করতে হবে নিজের আমলনামা নিয়ে। দুনিয়া আপনাকে গ্রাস করতে পারে, তাই মনগড়া জীবন যাপন করতে পারেন, কিন্তু আপনার উপর থেকে আল্লাহর হুকুম রহিত হয়ে যায়নি। আপনি যেমন দুনিয়ার জীবনে আপনার পাওনা সমূহ নাজ-নেয়াত বুঝে পেয়েছেন পরকালে আল্লাহতায়ালাকে আপনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন, কোনো কিছুই আল্লাহর অজানা নয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘…তোমরা আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, তোমরা যা কিছু করছো, সবই আল্লাহতায়ালা জানেন।’ (সূরা আল হাশর, আয়াত- ১৮)।
আসুন রাসূল সা: এর আদর্শ অনুযায়ী নিজেকে বুদ্ধিমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি। নিজের আত্মসমালোচনা করে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেই। অলীক কল্পনায় ডুবে না থেকে সত্যকে চেনা ও জানার মধ্য দিয়ে প্রকৃত গোলামের পরিচয় দেই। তাতেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হবে। সূএ: আমাদের সময় ডডটকম