ভোজ্যতেল এখন রান্নার কান্না

আগে দুই বেলা রান্নার পাশাপাশি তিন ছেলে মেয়ের জন্য তেলেভাজা জাতীয় খাবার তৈরি করতেন মা আয়েশা বেগম। গত এক মাস ধরে তিনি এই কাজ বন্ধ করেছেন। কারণ এটা করতে গিয়ে টান পড়ছে ভোজ্যতেলে। আগে যেখানে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলে সারা মাস চালাতেন এই গৃহিণী এখন তা কমিয়ে এনেছেন তিন লিটারে। ভোজ্যতেল এখন তার কাছে ‘রান্নার কান্নার’ ব্যাপার হয়ে ঠেকেছে। এমনই প্রতিক্রিয়া ঢাকার আজিমপুরের বাসিন্দা নিম্ন-আয়ের একটি পরিবারের কর্ত্রী আয়েশার।

 

সরবরাহ সংকটের কথা বলে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম গড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা আর খোলা ১৯০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ২ লিটারের দাম ৩৩৫ থেকে ৩৪০ এবং ৫ লিটারের দাম ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে বেশিরভাগ দোকান ঘুরে বোতলজাত তেল পাওয়া যায়নি। এই জন্য সরবরাহ না থাকার যুক্তি দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ মজুত করে নিত্যপণ্যটির কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। আর এর সুযোগ নিয়ে অতিমুনাফা লোভীদের কারণে তেলের দাম বাড়ছে হু-হু করে।

 

পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, দেশি রিফাইনারি কোম্পানিগুলো হঠাৎ করেই তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এতে সংকটে পড়েছে ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারা। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। ফলে বোতলজাত সয়াবিন তেল বোতল বাজার থেকে প্রায় উধাও হয়ে গেছে।

 

গত কয়েকদিন ধরে সয়াবিন তেলের সবচেয়ে পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ঊর্ধ্বমুখী। অথচ এসব বাজারে তেলের সরবরাহে কোনো কমতি নেই। আভিযোগ উঠেছে, ঢাকার সবচেয়ে বড় এই পাইকারি বাজারেও তেল কিনতে গিয়ে ফিরে আসছেন খুচরা ক্রেতারা। কারও কাছে সয়াবিন থাকলেও সেটা গোপনে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

 

মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তারা প্রতি টন ১ হাজার ৭৩০ ডলারে কিনছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনার মূল্যের পার্থক্য হচ্ছে ২৪৮ ডলার।

 

মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী হাজী আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকায় বাজাবে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা কোম্পানীর কাছে হাজার লিটার অর্ডার দিলে তারা আমাদের সরবরাহ করে ৭০০ থেকে ৮০০ লিটার। এভাবে পাইকারি তেল বিক্রেতাদের কাছে কোম্পনানীগুলো কম সরবরাহ করলে তো সংকট দেখা দেবেই।

 

তবে তেল সরবরাহকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা আগের মতোই নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল সরবরাহ করছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা রমজান সামনে রেখে সয়াবিন মজুত করছেন। এজন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে।

 

সংকটের কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের পাইকারী বিক্রেতা শরীফ বলেন, ‘কোম্পানিগুলো চাহিদা মতো তেল দিচ্ছেন না, তাই দোকানে তেল নেই। প্রতিদিন ১, ২ ও ৫ লিটার মিলিয়ে ৮০০ থেকে হাজার লিটারের চাহিদা থাকলেও কোম্পানি থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ লিটারের বেশি দিচ্ছে না।’ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে রিফাইনারি কোম্পানিগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটারে খোলা সয়াবিনের দাম ৭ টাকা এবং বোতলজাত তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানো হয়। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে তারা ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে প্রতি লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানের প্রস্তাব করে।

 

তবে বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয় খবর দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের টিপু মুনশি বলেছিলেন, মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য আছে, মধ্যস্বত্বভোগীরা ভোজ্যতেলের মজুত গড়েছেন। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

 

এদিকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর কৃত্রিম সংকটের সুযোগে অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে সয়াবিনসহ নিত্যপণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি ঠেকাতে যৌথ অভিযানে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।সূএ:ঢাকাটাইমস ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যু, সেই সাপকে চিবিয়ে খেলেন আরেক সাপুড়ে!

» শিশু আছিয়ার পরিবারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করল জামায়াত

» জামায়াত আমিরের হার্টে ব্লক, জরুরি সার্জারির সিদ্ধান্ত

» ফেব্রুয়ারির পর অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে না: হাবিবুর রহমান

» দুই ছাত্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: নাহিদ ইসলাম

» আশুলিয়ার গণহত্যা ছাড়িয়েছে কারবালার নৃশংসতাকেও: তারেক রহমান

» এমন অবস্থা তৈরি করবেন না যাতে হাসিনা ফেরার সুযোগ পায়: মির্জা ফখরুল

» আওয়ামী লীগ আমলে ভোট করা অপরাধ হলে বিএনপি-জামায়াতও অপরাধী, দাবি জাতীয় পার্টির

» ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন

» বাংলাদেশকে অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি দিতে চায় চীন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ভোজ্যতেল এখন রান্নার কান্না

আগে দুই বেলা রান্নার পাশাপাশি তিন ছেলে মেয়ের জন্য তেলেভাজা জাতীয় খাবার তৈরি করতেন মা আয়েশা বেগম। গত এক মাস ধরে তিনি এই কাজ বন্ধ করেছেন। কারণ এটা করতে গিয়ে টান পড়ছে ভোজ্যতেলে। আগে যেখানে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলে সারা মাস চালাতেন এই গৃহিণী এখন তা কমিয়ে এনেছেন তিন লিটারে। ভোজ্যতেল এখন তার কাছে ‘রান্নার কান্নার’ ব্যাপার হয়ে ঠেকেছে। এমনই প্রতিক্রিয়া ঢাকার আজিমপুরের বাসিন্দা নিম্ন-আয়ের একটি পরিবারের কর্ত্রী আয়েশার।

 

সরবরাহ সংকটের কথা বলে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম গড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা আর খোলা ১৯০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ২ লিটারের দাম ৩৩৫ থেকে ৩৪০ এবং ৫ লিটারের দাম ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে বেশিরভাগ দোকান ঘুরে বোতলজাত তেল পাওয়া যায়নি। এই জন্য সরবরাহ না থাকার যুক্তি দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ মজুত করে নিত্যপণ্যটির কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। আর এর সুযোগ নিয়ে অতিমুনাফা লোভীদের কারণে তেলের দাম বাড়ছে হু-হু করে।

 

পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, দেশি রিফাইনারি কোম্পানিগুলো হঠাৎ করেই তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এতে সংকটে পড়েছে ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারা। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। ফলে বোতলজাত সয়াবিন তেল বোতল বাজার থেকে প্রায় উধাও হয়ে গেছে।

 

গত কয়েকদিন ধরে সয়াবিন তেলের সবচেয়ে পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ঊর্ধ্বমুখী। অথচ এসব বাজারে তেলের সরবরাহে কোনো কমতি নেই। আভিযোগ উঠেছে, ঢাকার সবচেয়ে বড় এই পাইকারি বাজারেও তেল কিনতে গিয়ে ফিরে আসছেন খুচরা ক্রেতারা। কারও কাছে সয়াবিন থাকলেও সেটা গোপনে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

 

মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তারা প্রতি টন ১ হাজার ৭৩০ ডলারে কিনছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনার মূল্যের পার্থক্য হচ্ছে ২৪৮ ডলার।

 

মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী হাজী আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকায় বাজাবে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা কোম্পানীর কাছে হাজার লিটার অর্ডার দিলে তারা আমাদের সরবরাহ করে ৭০০ থেকে ৮০০ লিটার। এভাবে পাইকারি তেল বিক্রেতাদের কাছে কোম্পনানীগুলো কম সরবরাহ করলে তো সংকট দেখা দেবেই।

 

তবে তেল সরবরাহকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা আগের মতোই নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল সরবরাহ করছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা রমজান সামনে রেখে সয়াবিন মজুত করছেন। এজন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে।

 

সংকটের কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের পাইকারী বিক্রেতা শরীফ বলেন, ‘কোম্পানিগুলো চাহিদা মতো তেল দিচ্ছেন না, তাই দোকানে তেল নেই। প্রতিদিন ১, ২ ও ৫ লিটার মিলিয়ে ৮০০ থেকে হাজার লিটারের চাহিদা থাকলেও কোম্পানি থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ লিটারের বেশি দিচ্ছে না।’ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে রিফাইনারি কোম্পানিগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটারে খোলা সয়াবিনের দাম ৭ টাকা এবং বোতলজাত তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানো হয়। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে তারা ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে প্রতি লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানের প্রস্তাব করে।

 

তবে বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয় খবর দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের টিপু মুনশি বলেছিলেন, মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য আছে, মধ্যস্বত্বভোগীরা ভোজ্যতেলের মজুত গড়েছেন। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

 

এদিকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর কৃত্রিম সংকটের সুযোগে অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে সয়াবিনসহ নিত্যপণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি ঠেকাতে যৌথ অভিযানে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।সূএ:ঢাকাটাইমস ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com