ঈদের পর রমনা বটমূলে বোমা হামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি

ছবি সংগৃহীত

 

অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন বলেছেন, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

তিনি বলেন, এ মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক (নিম্ন) আদালত। এরপর খালাস চেয়ে উচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন আসামিরা। এসময় রাষ্ট্রপক্ষও মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) চান। বিভিন্ন সময়ে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা থেমে আছে। ফলে ১০ বছরেও অনুমোদন মেলেনি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের।

মঙ্গলবার  সুপ্রিম কোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রয়েছেন। আগামী মাসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে

 

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ২৩ বছর আগে রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলায় ১০ জন নিহত হন। এ ঘটনায় করা দুটি পৃথক মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে ঢাকার বিচারিক আদালতে। ঈদের পর হাইকোর্টে রমনা বটমূলের বোমা হামলার ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলার শুনানি শুরু হবে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২১ মার্চ এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে মোট ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। ওই বছরের ৩ এপ্রিল আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন সাত আসামি। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি। ওইদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১১ আগস্ট দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে কোনও কার্যক্রম ছাড়াই ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত মামলাটি আগের আদালতে ফেরত পাঠান।

 

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ ১৪০৮ বঙ্গাব্দ) ভোরে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয় এবং পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওইদিন বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলাকালে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি ও ১০টা ১৫ মিনিটের পর অন্য বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নৃশংস ওই বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। আহত হন আরও অনেকেই। এ ঘটনায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করে ওইদিনই রমনা থানার পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি মামলা করেন।

 

২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর শীর্ষ হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আট জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা মামলায় ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়। পরবর্তীতে বিস্ফোরক আইনের এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান হরকাতুল জিহাদের এ শীর্ষ নেতা।

বর্তমানে এ মামলায় মোট ১১ জন আসামি রয়েছে। আসামিরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আবু বকর, হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন, মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ও মাওলানা শওকত ওসমান। এদের মধ্যে তাজউদ্দিন, আবদুল হাই ও জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছে। সূএ: জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ডিবির মশিউর সাময়িক বরখাস্ত

» মোটরসাইকেলে চালকসহ দুইজনের বেশি বহন না করার নির্দেশ

» ইসলামী শাসনব্যবস্থা ছাড়া বৈষম্য দূর হবে না : মামুনুল হক

» নির্বাচনের দিনক্ষণ জানতে বিদেশি অংশীজনরা অপেক্ষা করছে : খসরু

» বিস্ফোরক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

» তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি

» রাশিয়ার নতুন ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চলবে: পুতিন

» গুজব প্রতিরোধে সহায়তা চায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

» পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত

» এআই নিয়ে কাজ করবে গ্রামীণফোন ও এরিকসন

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ঈদের পর রমনা বটমূলে বোমা হামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি

ছবি সংগৃহীত

 

অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন বলেছেন, রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

তিনি বলেন, এ মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক (নিম্ন) আদালত। এরপর খালাস চেয়ে উচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন আসামিরা। এসময় রাষ্ট্রপক্ষও মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) চান। বিভিন্ন সময়ে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা থেমে আছে। ফলে ১০ বছরেও অনুমোদন মেলেনি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের।

মঙ্গলবার  সুপ্রিম কোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রয়েছেন। আগামী মাসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে

 

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ২৩ বছর আগে রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলায় ১০ জন নিহত হন। এ ঘটনায় করা দুটি পৃথক মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে ঢাকার বিচারিক আদালতে। ঈদের পর হাইকোর্টে রমনা বটমূলের বোমা হামলার ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলার শুনানি শুরু হবে।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২১ মার্চ এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে মোট ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। ওই বছরের ৩ এপ্রিল আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন সাত আসামি। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি। ওইদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১১ আগস্ট দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে কোনও কার্যক্রম ছাড়াই ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত মামলাটি আগের আদালতে ফেরত পাঠান।

 

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ ১৪০৮ বঙ্গাব্দ) ভোরে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয় এবং পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওইদিন বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলাকালে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি ও ১০টা ১৫ মিনিটের পর অন্য বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নৃশংস ওই বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন। আহত হন আরও অনেকেই। এ ঘটনায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করে ওইদিনই রমনা থানার পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি মামলা করেন।

 

২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর শীর্ষ হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমিন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আট জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা মামলায় ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়। পরবর্তীতে বিস্ফোরক আইনের এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান হরকাতুল জিহাদের এ শীর্ষ নেতা।

বর্তমানে এ মামলায় মোট ১১ জন আসামি রয়েছে। আসামিরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আবু বকর, হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন, মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ও মাওলানা শওকত ওসমান। এদের মধ্যে তাজউদ্দিন, আবদুল হাই ও জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছে। সূএ: জাগোনিউজ২৪.কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com