যা করবেন নতুন মায়েরা

মাহফুজা আফরোজ সাথী: জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত একটি শিশু কেবল মায়ের দুধ খাবে। এটা আমরা সব সময়ই শুনে আসছি; কিন্তু শিশু যাতে মায়ের দুধ ভালোভাবে পায় সেজন্য কী কী করণীয় তা কি আমরা জানি?

 

দুধ যদিও মা খাওয়াবেন কিন্তু এখানে পুরো পরিবার-পরিজনের ভূমিকাও রয়েছে। দুধের পর্যাপ্ততা মায়ের মনো-দৈহিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। মায়ের খাবার যেমন পর্যাপ্ত হতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে ঘুম। তাছাড়া মানসিকভাবে মায়ের ভালো থাকাটাও জরুরি।

 

নতুন মায়েদের ওপর অনেক ধরনের মানসিক ও শারীরিক চাপ থাকে, পরিবারের সব সদস্য যদি সহযোগিতা না করেন তবে নবজাতকের খাবারের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

 

আসুন জেনে নেই কী কী উপায়ে মায়ের দুধের পরিমাণগত ও গুণগত মান উন্নত করা যায় :

১. নতুন মাকে কোনোভাবেই মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না।
২. নির্দিষ্ট সময়ে রুটিন করে খাবার খেতে হবে।
৩. দিনে ছয়-সাত বার খাবার খাবেন মা, নিজে। তিনটি ভারি খাবারের পাশাপাশি তিন/চার বার হালকা নাশতা। তাছাড়া তরল খাবারের আধিক্য রাখতে হবে। খেতে পারেন সুপ, ডাবের পানি, ফলের রস বা আস্ত ফল।
৪. মায়ের যাতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা না দেয় তাই দুধ ও দুধজাত খাবার যেমন- দই, পায়েস, পুডিং অথবা পনির খেতে হবে। যাদের ল্যাকটোজ সহ্য হয় না তারা অবশ্য গাঢ় সবুজ শাক-সবজি ও ছোটমাছ খেতে পারবেন।
৫. শর্করা জাতীয় খাবার বেশি না খেয়ে আমিষ জাত খাবার খেতে হবে। দিনে অন্তত একটি ডিম খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
৬. দুধ খাওয়ানোর আগে তরল কিছু খেয়ে নিলে দুধের ফ্লো ভালো থাকবে।
৭. কর্মজীবী মায়েরা দুধ এক্সপ্রেস করে সংরক্ষণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাচ্চাকে একবার খাওয়ানোর পর আবার খাওয়ানোর আগে দুধ এক্সপ্রেস করবেন।
৮. কাচের বোতলে ১, ২ এভাবে নম্বর দিয়ে দুধ সংরক্ষণ করবেন। আগে বের করা দুধ আগে খাইয়ে শেষ করতে হবে।
৯. কক্ষ তাপমাত্রায় বুকের দুধ চার ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যাবে, ঘরে ব্যবহার হয় যে রেফ্রিজারেটর তাতে এক সপ্তাহ রাখলে দুধের গুণগত মান ঠিক থাকে। আর ডিপ ফ্রিজে থাকলে তা এক বছর সংরক্ষণ করা যায়। তবে বাচ্চাদের খাওয়ানোর আগে গরম পানির ওপর বসিয়ে দুধ হালকা গরম করে নিতে হবে। যাতে বাচ্চার ঠাণ্ডা না লাগে।
১০. দুধের পরিমাণ বাড়াতে কাঠবাদাম, কালিজিরা, লাউ, পালং শাক, মেথি, ওটস ইত্যাদি খাওয়া উচিত।

 

যেমন হতে পারে একদিনের খাদ্য তালিকা :
সকাল : দুটো রুটি, এক কাপ সবজি, একটা ডিম সেদ্ধ।
মধ্য সকাল : একটা কলা, পাঁচ-সাতটা কাঠ বাদাম, এক কাপ দুধ।
দুপুর : দুই কাপ ভাত, এক কাপ ডাল, দুই পিস মাছ/ মুরগির মাংস, এক কাপ মিক্সড সবজি, কালিজিরার ভর্তা, সালাদ ও লেবু।
বিকাল : ওটস আর বাদামের লাড্ডু একটা, ফল বা ফলের রস।
রাত : রুটি দুইটা বা ভাত এক কাপ, ডাল এক কাপ, লাউ তরকারি এক কাপ, মাছ/মুরগির মাংস দুই পিস ও লেবু।
রাতের নাশতা : এক কাপ দই + একটা খেজুর।
শোবার আগে : এক কাপ দুধ, দুই পিস প্লেইন টোস্ট
এগুলোর পাশাপাশি ডাবের পানি, বাদাম, সালাদ খাওয়া উচিত।
এতে করে নতুন মা ও তার নবজাত দুজনই সুস্থ থাকবে ও পুষ্টিও নিশ্চিত হবে।
এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য ব্রেস্ট ফিডিংকে জোরদার করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন মাকে মানসিক ও পুষ্টিগত সহযোগিতা করেই মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব।

লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ
ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

» সংবাদপত্রের গুণগত মানোন্নয়নে টাস্কফোর্স গঠন করবে সরকার

» আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় অবশ্যই মামলা নিতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

» পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক

» কাতারের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

» সুন্দরবনের উপকূলে বোরো ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন

» অস্ট্রেলিয়া থেকে অ্যাপ-ভিত্তিক রেমিটেন্স সহজ করতে কুইকসেন্ডের সাথে ব্র্যাক ব্যাংকের চুক্তি

» বিওয়াইডি সিলায়ন ৬ – এর ডেলিভারি শুরু হলো দেশে 

» রবি’র ২৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

» জামায়াতে যোগদান করা সেই বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

যা করবেন নতুন মায়েরা

মাহফুজা আফরোজ সাথী: জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত একটি শিশু কেবল মায়ের দুধ খাবে। এটা আমরা সব সময়ই শুনে আসছি; কিন্তু শিশু যাতে মায়ের দুধ ভালোভাবে পায় সেজন্য কী কী করণীয় তা কি আমরা জানি?

 

দুধ যদিও মা খাওয়াবেন কিন্তু এখানে পুরো পরিবার-পরিজনের ভূমিকাও রয়েছে। দুধের পর্যাপ্ততা মায়ের মনো-দৈহিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। মায়ের খাবার যেমন পর্যাপ্ত হতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে ঘুম। তাছাড়া মানসিকভাবে মায়ের ভালো থাকাটাও জরুরি।

 

নতুন মায়েদের ওপর অনেক ধরনের মানসিক ও শারীরিক চাপ থাকে, পরিবারের সব সদস্য যদি সহযোগিতা না করেন তবে নবজাতকের খাবারের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

 

আসুন জেনে নেই কী কী উপায়ে মায়ের দুধের পরিমাণগত ও গুণগত মান উন্নত করা যায় :

১. নতুন মাকে কোনোভাবেই মানসিক চাপ দেওয়া যাবে না।
২. নির্দিষ্ট সময়ে রুটিন করে খাবার খেতে হবে।
৩. দিনে ছয়-সাত বার খাবার খাবেন মা, নিজে। তিনটি ভারি খাবারের পাশাপাশি তিন/চার বার হালকা নাশতা। তাছাড়া তরল খাবারের আধিক্য রাখতে হবে। খেতে পারেন সুপ, ডাবের পানি, ফলের রস বা আস্ত ফল।
৪. মায়ের যাতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা না দেয় তাই দুধ ও দুধজাত খাবার যেমন- দই, পায়েস, পুডিং অথবা পনির খেতে হবে। যাদের ল্যাকটোজ সহ্য হয় না তারা অবশ্য গাঢ় সবুজ শাক-সবজি ও ছোটমাছ খেতে পারবেন।
৫. শর্করা জাতীয় খাবার বেশি না খেয়ে আমিষ জাত খাবার খেতে হবে। দিনে অন্তত একটি ডিম খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
৬. দুধ খাওয়ানোর আগে তরল কিছু খেয়ে নিলে দুধের ফ্লো ভালো থাকবে।
৭. কর্মজীবী মায়েরা দুধ এক্সপ্রেস করে সংরক্ষণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাচ্চাকে একবার খাওয়ানোর পর আবার খাওয়ানোর আগে দুধ এক্সপ্রেস করবেন।
৮. কাচের বোতলে ১, ২ এভাবে নম্বর দিয়ে দুধ সংরক্ষণ করবেন। আগে বের করা দুধ আগে খাইয়ে শেষ করতে হবে।
৯. কক্ষ তাপমাত্রায় বুকের দুধ চার ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যাবে, ঘরে ব্যবহার হয় যে রেফ্রিজারেটর তাতে এক সপ্তাহ রাখলে দুধের গুণগত মান ঠিক থাকে। আর ডিপ ফ্রিজে থাকলে তা এক বছর সংরক্ষণ করা যায়। তবে বাচ্চাদের খাওয়ানোর আগে গরম পানির ওপর বসিয়ে দুধ হালকা গরম করে নিতে হবে। যাতে বাচ্চার ঠাণ্ডা না লাগে।
১০. দুধের পরিমাণ বাড়াতে কাঠবাদাম, কালিজিরা, লাউ, পালং শাক, মেথি, ওটস ইত্যাদি খাওয়া উচিত।

 

যেমন হতে পারে একদিনের খাদ্য তালিকা :
সকাল : দুটো রুটি, এক কাপ সবজি, একটা ডিম সেদ্ধ।
মধ্য সকাল : একটা কলা, পাঁচ-সাতটা কাঠ বাদাম, এক কাপ দুধ।
দুপুর : দুই কাপ ভাত, এক কাপ ডাল, দুই পিস মাছ/ মুরগির মাংস, এক কাপ মিক্সড সবজি, কালিজিরার ভর্তা, সালাদ ও লেবু।
বিকাল : ওটস আর বাদামের লাড্ডু একটা, ফল বা ফলের রস।
রাত : রুটি দুইটা বা ভাত এক কাপ, ডাল এক কাপ, লাউ তরকারি এক কাপ, মাছ/মুরগির মাংস দুই পিস ও লেবু।
রাতের নাশতা : এক কাপ দই + একটা খেজুর।
শোবার আগে : এক কাপ দুধ, দুই পিস প্লেইন টোস্ট
এগুলোর পাশাপাশি ডাবের পানি, বাদাম, সালাদ খাওয়া উচিত।
এতে করে নতুন মা ও তার নবজাত দুজনই সুস্থ থাকবে ও পুষ্টিও নিশ্চিত হবে।
এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য ব্রেস্ট ফিডিংকে জোরদার করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন মাকে মানসিক ও পুষ্টিগত সহযোগিতা করেই মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব।

লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ
ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com