সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : জামায়াত ইসলামীর কাজকর্ম ও তৎপরতা থেকে বোঝা যায় তারা নির্বাচন পেছাতে চায়। কারণ তারা জানে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। সম্প্রতি ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশো অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
নূরুল কবির বলেন, বাংলাদেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলের নানা ধরনের অন্তর্গত দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গোটা সমাজ ১৮ কোটি মানুষের বৃহদাংশ এখনো পর্যন্ত জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখতে প্রস্তুত নয়।
অর্থাৎ তারা (জামায়াত) ক্ষমতায় যেতে পারবে না, তাহলে কী করতে হবে তাকে? এই মুহূর্তে যেহেতু সরকারের মধ্যে ডানপন্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মন্ত্রী আছে, প্রশাসনের মধ্যে তাদের লোক আছে, ডি ফ্যাক্টোভাবে ক্ষমতায় থেকে আরো সুবিধা নেওয়া, তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গুলোকে নানানভাবে আরো দমন করার জন্য যতটা সময় পায় তার জন্য ততটাই ভালো। ফলে সে (নির্বাচন) প্রলম্বিত করতে চায়। তিনি বলেন, সরকারের লোকেরা সরকারের মধ্যে লোকেরা আমাকে জানিয়েছে যে তাদের (জামায়াত) কাজকর্ম, তাদের তৎপরতা এগুলোর মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় তারা নির্বাচন পেছাতে চায়। কেন পেছাতে চায়? তার কারণ হচ্ছে— তারা জানে যে ক্ষমতায় যেতে পারবে না, তাহলে যতদিন পর্যন্ত তারা এটা সুবিধাটা নিতে পারে সেটা তারা চায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতার প্রসঙ্গে নূরুল কবীর বলেন, যাদের নিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের দেশপ্রেম আমি প্রশ্ন করি না, কিন্তু তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পর্কে আমার প্রশ্ন ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে। কারণ এই যে আকাঙ্ক্ষাগুলোকে কিভাবে জড়ো করতে হয়, আকাঙ্ক্ষাগুলোকে কিভাবে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় নিতে হয়, তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এটা ড. ইউনূসের ছিল না এবং তার সঙ্গে যারা সহকর্মী আছেন তাদেরও ছিল না।
তিনি বলেন, ছোট-বড় নানান এনজিওর মধ্যে থেকে যারা দেশের সংস্কার সাধনের মধ্যে দিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন তারা একটা গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবহার রাজনৈতিকভাবে কিভাবে করতে হয়, তার উপলব্ধি আছে বলে আমার মনে হয় না। আজকে যে সমস্ত ফেইলিয়রগুলি দেখছেন, মূলত তাদের যে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীনতা, তাদের যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, তাদের যে রাজনৈতিক দিগদর্শনের প্রয়োজনীয়তা পড়ে; রাষ্ট্র তো একটা পুরোপুরি রাজনৈতিক সংগঠন, এই সংগঠনকে কোন দিকে কিভাবে নিয়ে যেতে হয়, কিভাবে মতাদর্শিক উপাদানগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হয়, সর্বোপরি এই অধিকাংশ মানুষ যারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রাস্তায় নেমে ছিলেন তাদের মেজরিটি মানুষের কি আকাঙ্ক্ষা, তার যে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া এবং সেই রূপকে বাস্তবায়ন করবার চিন্তা, চেতনা, অভিজ্ঞতা, আকাঙ্ক্ষা কোনটাই তাদের ছিল না
প্রধান উপদেষ্টার প্রসঙ্গে নূরুল কবীর বলেন, আমি বলবো যে ড. ইউনূস একটা বিরাট ভুল করেছেন।
এই যে ক্ষমতায় আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ সংক্রান্ত যতগুলো সমস্যা তা সমাধানের ক্ষেত্রে যে তড়িৎ বেগে তিনি কাজগুলি করেছেন, এইটা উনি ঠিক করেননি। কারণ হচ্ছে আপনি যখন অনেকের দায়িত্ব নেন, এবং সমাজে যখন অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত থাকে, আপনি সবার দায়িত্বটা শেষ করে নিজের দায়িত্ব গ্রহণ করা হচ্ছে যেকোনো মহৎ আদর্শের আপনার দাবি। এটার জন্য তার সারা জীবন কুরে কুরে খাবে। তিনি আরো বলেন, তার (প্রধান উপদেষ্টা) সরকারের মূল সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক দিগদর্শন না থাকা, একটা নন পলিটিক্যাল মাইন্ডস নিয়ে সরকার গঠন করা; এমন একটা সময় যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা উচিত ছিল রাজনৈতিকভাবে সবচাইতে সংবেদনশীল, সবচাইতে রাজনীতি সচেতন, ইতিহাস সচেতন সরকার, সেটা হয়নি। তারই দুর্ভোগ আমাদেরকে পোহাতে হচ্ছে।
নিজের ওপর হামলার প্রসঙ্গে নূরুল কবীর বলেন, আমার উপর সেই দিন যারা আক্রমণ করেছে সেখানে শিবিরের লোকেরা ছিল। আমাকে কিন্তু রাষ্ট্রের দিক থেকে অনুরোধ করেছে একটা মামলা করতে। আমি কিন্তু মামলাটা করি নাই, কারণ এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে নেই না। এটা আমার পার্সোনাল ইস্যু না। আমি একটা সংগঠিত শক্তির অগণতান্ত্রিক তৎপরতার বিরুদ্ধে কথা বলব, লিখব; আর তারা আমার জন্য ফুলের মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে তা তো আশা করতে পারি না।
তিনি বলেন, আমার অসংখ্য বন্ধু শুভ অধ্যায় প্রশ্ন করেছে আপনি একা ওখানে গেলেন কী করে বা গেলেন কেন? আরো তো ঘটনা ঘটতে পারতো, আমি এটা জেনেই গেছি। আমার মনে হয়ে ওইখানে আমার যাওয়া কর্তব্য। এই কর্তব্যবোধের মধ্যে যদি ভুল থাকে, আপনি যদি সেটাকে বলেন যে এটা ভুল ছিল, সেটা একটা আলাদা বিতর্ক। আমি আপনার সঙ্গে তর্ক করতে রাজি আছি। কিন্তু ওই এখানে আমার আমার উপর যে তারা আক্রমণ করেছে তো সেইটা তো অত্যন্ত স্বাভাবিক।
তিনি আরো বলেন, তবে দুঃখজনক যেটা হইলো এই যে এখানে আরেকটা জামায়াতের মুনাফেকির কথা বলছেন। আমি ওখানে গেছি, তাদের রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতা করি, ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে আমার কোন বিরোধ নাই। তারা সেই কথা বলে আমাকে আক্রমণ করার সৎ সাহস দেখাতে পারে নাই। তারা আমাকে আওয়ামী লীগ বলে আখ্যায়িত করে তারপরে আক্রমণ করেছে। এই যে আরেকটা মুনাফেকি। তারা সেক্ষেত্রে তারা কিন্তু আমাকে আক্রমণ করছে, কারণ আমার মনে হচ্ছে এখানে সেক্যুলার ডেমোক্রেটিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা আমরা চাই।
নূরুল কবীর বলেন, আমি তিনটা অভিযোগ এনেছি তাদের ব্যাপারে। এক হচ্ছে তারা ঐতিহাসিক ভাবে তারা মুনাফেকি করে। তার মুখে বলে একটা কাজ করে আরেকটা। আরেকটা বলেছি তারা ধর্মকে দারুণ ভাবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম বিকশিত হয়েছে জনস্বার্থের প্রতি তার বিশ্বস্ততা থেকে। অধিকাংশ নিপীড়িত মানুষের কথাই আছে যে জুলুমের বিরুদ্ধে, জালেমের বিরুদ্ধে, মজলুমের পক্ষে লড়াই করে ইসলাম বিকশিত হয়েছে। এখন জামাত ইসলাম আর ইসলাম এক কিনা; আমি বরাবর ব্যাখ্যা করি এটা এক নয়। আমি আমার ব্যাখ্যা দেওয়ার আগেই বলে রাখি, এই দেশের অসংখ্য আলেম আছেন, যারা জামাত ইসলামের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করার কথা বলেন।
জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, তারা আমাকে বলেছে আমি মিথ্যাচার করেছি। এই মিথ্যাচারের প্রমাণ হিসেবে তারা বলেছে যে তারা ধর্মকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে না। অথচ আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া দেখেন আমাদের যে রিপোর্ট আছে। সেগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় তারা বলে বেড়াচ্ছে যে বেহেশত-দোজখের সঙ্গে জামায়াতকে ভোট দেওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। জামাতের প্রার্থীরা, জামাতের প্রার্থীর পক্ষে যারা কাজ করছে তাদের অনেকের বক্তব্য আপনি পাবেন।
তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ বলুন, বিএনপি বলুন তারা প্রত্যেকেই ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করেছে। কিন্তু তাতে ধর্মের ক্ষতি হওয়া ছাড়া, গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশের অন্তরায় হওয়া ছাড়া আর কোন কাজ হয় নাই। দ্বিতীয়ত আমরা জামাত যেটা করেছে জামাতে ইসলাম এবং ইসলামকে তারা একাকার করে উপস্থাপন করছে।
ইসলাম জালেমের বিরুদ্ধে জুলুমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই হওয়ার কথা উল্লেখ করে নূরুল কবীর বলেন, ১৯৭১ সালে এই দেশে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে, এই জালেম কারা ছিল? পাকিস্তানিরা ছিল, পাকিস্তানি শাসকরা ছিল, সেনাবাহিনী ছিল। জামায়াতে ইসলামী তাদের পক্ষ অবলম্বন করেছিল, এটা জালেমের পক্ষে দাঁড়ালো, নাকি জালেম যাদের উপর নিপীড়ন শুরু করল যে নিরস্ত্র মানুষের উপর হত্যা, অগ্নিকাণ্ড, ধর্ষণ সেই তাদের পক্ষে অবলম্বন করলো? তো এই কাজ করে তারা কিভাবে নিজেদের ইসলামের শক্তি হিসেবে প্রচার করতে পারে?
তিনি আরো বলেন, তারা একটা হাইপ তোলার চেষ্টা করেছিল যে আওয়ামী লীগকে আপনারা দেখেছেন, বিএনপিকে দেখেছেন। আসলেই তো আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-তো বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে অনেক ব্যাপারেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা নানানভাবে নির্বাচনের ম্যানিফেস্টোতে এক ধরনের কথা দিয়েছে, কিন্তু কাজ করেছে অন্যরকম, এই অভিযোগ তো আমাদের প্রত্যেকেরই আছে। যেকোনো ইনফর্মড, চিন্তাশীল, ইতিহাসবোধসম্পন্ন মানুষ এটা বলবে। তো এইটা আমরা এইটার বিকল্প চাই। কিন্তু এই বিকল্প তো তাদের চাইতো পশ্চাৎপদ কোনো শক্তির উত্থানকে চাই না। তারা (জামায়াত) বলছে তাদেরকে পরীক্ষা করতে হবে। তাদেরকে পরীক্ষা তো করা হয়েছে, তারা ১৯৭১ সালে ইতিহাসে সবচাইতে বড় পরীক্ষা দিয়েছে। এই দেশের মানুষ যখন সবচাইতে বিপদের মধ্যে ছিল, সেই বিপদের মধ্যে তারা বিপদাপন্ন মানুষের বিরুদ্ধে ছিল। সেই ৭১ সালে মালেক মন্ত্রী সভায় তাদের মন্ত্রী ছিল তৎকালীন পাকিস্তানের।








