চোখে অস্ত্রোপচার পরবর্তী করণীয়

সংগৃহীত ছবি

 

ডা.মো.ছায়েদুল হক। : চোখের ভেতর থাকে একটি প্রাকৃতিক লেন্স। এই লেন্স অনেকটা ডিস্ক আকৃতির স্বচ্ছ। চক্ষুগোলকের অভ্যন্তর ভাগের সম্মুখ অংশে চোখের আড়াআড়ি এর অবস্থান। এই লেন্সের কাজ হলো আলোক রশ্মি চোখের রেটিনায় আপতিত হতে সাহায্য করা এবং দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করা। কোনো কারণে যদি প্রাকৃতিক এই লেন্সটি তার স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ ঘোলা হয়ে যায় তবে আলোকরশ্মি চোখের ভেতরে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন দেখার কাজটি বিঘ্নিত হয়। লেন্সের এই ঘোলা অবস্থার নাম ক্যাটারেক্ট বা ছানি।

ছানির চিকিৎসা হলো অপারেশন। অর্থাৎ ঘোলা লেন্সটি অপসারণ করে সেখানে স্বচ্ছ কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা। অপারেশনের আগে কম্পিউটারের সাহায্যে লেন্সটির পাওয়ার কত হবে, তা নির্ধারণ করে নেওয়া হয়। একে বলে বায়োমেট্রি। বায়োমেট্রিতে প্রাপ্ত পাওয়ারের একটি কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করলে অপারেশনের পর সেই চোখের দৃষ্টি ফিরে আসে। এটিই স্বাভাবিক। তবে কোনো কোনো সময় এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়।

দৃষ্টিশক্তি অর্থাৎ দেখার বিষয়টি দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, আলোকরশ্মি রেটিনায় আপতিত হওয়া আবশ্যক। এখানে লেন্স একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয়ত, রেটিনায় বিদ্যমান স্নায়ু বা রিসেপ্টরের সক্ষমতা অটুট থাকতে হবে, যাতে রেটিনা আপতিত আলোকরশ্মি তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তর করতে পারে। কারণ এই তড়িৎপ্রবাহ, যা মস্তিষ্কে পৌঁছে বস্তুর ইমেজ তৈরি করে দেখার বিষয়টি পরিস্ফুটিত করে। ছানি অপারেশনে আলোকরশ্মির আপতিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও রেটিনায় অসুস্থতা থাকায় রেটিনা থেকে তড়িৎপ্রবাহ বা সিগন্যাল মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে অপারেশন যথাযথভাবে সম্পন্ন হলেও দৃষ্টি সমস্যা রয়ে যায়।

রেটিনার অসুস্থতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শারীরিক অসুস্থতাজনিত রেটিনার সমস্যা, অর্থাৎ যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি থাকে, তাদের ক্ষেত্রে দেহের অন্যান্য অঙ্গের জটিলতার পাশাপাশি চোখের পর্দা বা রেটিনায় সমস্যা থাকতে পারে। একে বলে রেটিনোপ্যাথি। এটির সমস্যা আগে থেকে বিদ্যমান থাকলে ছানি অপারেশনের পরও দৃষ্টি সমস্যা কিছুটা থেকে যেতে পারে।

চোখের অসুস্থতা, যেমন গ্লুকোমা, মেকুলার ডিজেনারেশন, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, মেকুলার হোল, রক্তনালি ও রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা, ইউভিয়াইটিসের জটিলতা ইত্যাদি কারণে ছানি অপারেশনের পরেও অনেক সময় ভালো না দেখার আশঙ্কা থেকে যায়। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন অপারেশনের আগেই ভালো করে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া। অনেক সময় ছানির কারণে রেটিনার সমস্যা নিরূপণে কিছুটা অস্পষ্টতা থেকে যায়, যা ছানি অপারেশনের পরে স্পষ্ট হয়। তাই আগেই আঁচ করতে পারলে ছানি অপারেশন করিয়ে নেয়া ভালো।

ছানি অপসারণ হলেই কেবল লেজার চিকিৎসার মতো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া সহজতর হয়। এক্ষেত্রে রোগীর করণীয় হলো, অপারেশন-পরবর্তী এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» খুনিরা কীভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলো, প্রশ্ন হাদির ভাইয়ের

» ট্রলি থেকে ছিটকে পড়ে যুবক নিহত

» ভারতের একাধিক তারকার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত

» চমক রেখে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা ভারতের, বাদ গিল

» হাদির জানাজায় সারা বাংলাদেশ আজ কাঁদছে : ধর্ম উপদেষ্টা

» হাদি বিদায় নেননি, তিনি বাংলাদেশিদের বুকে আছেন: প্রধান উপদেষ্টা

» ওসমান হাদিকে সংসদ প্লাজা থেকে অশ্রুসিক্ত বিদায়

» তারেক রহমান আসছেন মানে গণতন্ত্র ফেরত আসছে : মির্জা আব্বাস

» সুদানে নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে পৌঁছেছে

» বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অপরাধমূলক সরঞ্জামসহ যুবক গ্রেফতার

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

চোখে অস্ত্রোপচার পরবর্তী করণীয়

সংগৃহীত ছবি

 

ডা.মো.ছায়েদুল হক। : চোখের ভেতর থাকে একটি প্রাকৃতিক লেন্স। এই লেন্স অনেকটা ডিস্ক আকৃতির স্বচ্ছ। চক্ষুগোলকের অভ্যন্তর ভাগের সম্মুখ অংশে চোখের আড়াআড়ি এর অবস্থান। এই লেন্সের কাজ হলো আলোক রশ্মি চোখের রেটিনায় আপতিত হতে সাহায্য করা এবং দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করা। কোনো কারণে যদি প্রাকৃতিক এই লেন্সটি তার স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ ঘোলা হয়ে যায় তবে আলোকরশ্মি চোখের ভেতরে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন দেখার কাজটি বিঘ্নিত হয়। লেন্সের এই ঘোলা অবস্থার নাম ক্যাটারেক্ট বা ছানি।

ছানির চিকিৎসা হলো অপারেশন। অর্থাৎ ঘোলা লেন্সটি অপসারণ করে সেখানে স্বচ্ছ কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা। অপারেশনের আগে কম্পিউটারের সাহায্যে লেন্সটির পাওয়ার কত হবে, তা নির্ধারণ করে নেওয়া হয়। একে বলে বায়োমেট্রি। বায়োমেট্রিতে প্রাপ্ত পাওয়ারের একটি কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করলে অপারেশনের পর সেই চোখের দৃষ্টি ফিরে আসে। এটিই স্বাভাবিক। তবে কোনো কোনো সময় এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়।

দৃষ্টিশক্তি অর্থাৎ দেখার বিষয়টি দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, আলোকরশ্মি রেটিনায় আপতিত হওয়া আবশ্যক। এখানে লেন্স একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয়ত, রেটিনায় বিদ্যমান স্নায়ু বা রিসেপ্টরের সক্ষমতা অটুট থাকতে হবে, যাতে রেটিনা আপতিত আলোকরশ্মি তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তর করতে পারে। কারণ এই তড়িৎপ্রবাহ, যা মস্তিষ্কে পৌঁছে বস্তুর ইমেজ তৈরি করে দেখার বিষয়টি পরিস্ফুটিত করে। ছানি অপারেশনে আলোকরশ্মির আপতিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও রেটিনায় অসুস্থতা থাকায় রেটিনা থেকে তড়িৎপ্রবাহ বা সিগন্যাল মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে অপারেশন যথাযথভাবে সম্পন্ন হলেও দৃষ্টি সমস্যা রয়ে যায়।

রেটিনার অসুস্থতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শারীরিক অসুস্থতাজনিত রেটিনার সমস্যা, অর্থাৎ যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি থাকে, তাদের ক্ষেত্রে দেহের অন্যান্য অঙ্গের জটিলতার পাশাপাশি চোখের পর্দা বা রেটিনায় সমস্যা থাকতে পারে। একে বলে রেটিনোপ্যাথি। এটির সমস্যা আগে থেকে বিদ্যমান থাকলে ছানি অপারেশনের পরও দৃষ্টি সমস্যা কিছুটা থেকে যেতে পারে।

চোখের অসুস্থতা, যেমন গ্লুকোমা, মেকুলার ডিজেনারেশন, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, মেকুলার হোল, রক্তনালি ও রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা, ইউভিয়াইটিসের জটিলতা ইত্যাদি কারণে ছানি অপারেশনের পরেও অনেক সময় ভালো না দেখার আশঙ্কা থেকে যায়। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন অপারেশনের আগেই ভালো করে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া। অনেক সময় ছানির কারণে রেটিনার সমস্যা নিরূপণে কিছুটা অস্পষ্টতা থেকে যায়, যা ছানি অপারেশনের পরে স্পষ্ট হয়। তাই আগেই আঁচ করতে পারলে ছানি অপারেশন করিয়ে নেয়া ভালো।

ছানি অপসারণ হলেই কেবল লেজার চিকিৎসার মতো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া সহজতর হয়। এক্ষেত্রে রোগীর করণীয় হলো, অপারেশন-পরবর্তী এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com