ফয়সালের জামিনে যুক্ত ছিলো বড় রাজনৈতিক দলের নেতার প্রভাবশালী আইনজীবীরা : আইন উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণকারী ফয়সাল করিম মাসুদের আগের অস্ত্র মামলার জামিনকারী আইনজীবীরা প্রভাবশালী আইনজীবী ও অধিকাংশই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। ফলে তাদের প্রভাবে এসব জামিন হওয়া সহজতর হয়েছে।

বুধবার রাতে তিনি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে এ কথা লেখেন।

পাঠকের জন্য আসিফ নজরুলের হুবহু পোস্টটি তুলে ধরা হলো:

জামিন বিতর্ক,

আমাদের প্রিয় ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করেছে ফয়সাল করিম মাসুদ নামের এক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী। তাকে র্যাব গ্রেফতার করেছিল গত বছর। এরপর তার জামিন হয়েছে হাইকোর্ট থেকে। এরপর থেকে জামিন দেয়ার ন্যয্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আবারো আলোচনা-বিতর্ক উঠছে।

প্রথমেই বলে রাখি, হাইকোর্ট বিচারিক কাজে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। হাইকোর্টের উপর আইন মন্ত্রণালয়ের কোন নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীর কোনদেশে থাকে না, বাংলাদেশেও নেই। কাজেই সেখানে ফয়সাল করিম মাসুদের জামিন হওয়ার সাথে আইন মন্ত্রণালয়ের কোন সম্পর্ক ছিল না।

ফয়সাল করিম মাসুদ গতবছর জামিন পেয়েছিল অস্ত্র মামলায়। হাইকোর্টে অস্ত্র মামলার জামিন সহজে হওয়ার কথা নয়। এটি তখনই হতে পারে যখন প্রভাবশালী আইনজীবীরা এসব মামলায় জামিন দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এই আইনজীবীরা অধিকাংশই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। অভিযোগ রয়েছে যে তাদের প্রভাবে এসব জামিন হওয়া সহজতর হয়।

হাইকোর্টের প্রদত্ত জামিনে বিচারিক বিবেচনা কতোটা থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে। যেমন: হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে কিভাবে ৪ ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন হয়েছিল, তা নিয়ে আমি কয়েক মাস আগে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলাম (২৩ অক্টোবর, ২০২৫)[কমেন্টে লিংক দেখুন]। এজন্য একশ্রেণীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আমার পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করা হয়েছিলো (২৫ অক্টোবর ২০২৫)[কমেন্টে লিংক দেখুন]।

২.জামিন পাওয়ার সুযোগ আমাদের আইনে রয়েছে। কিন্তু গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যে অপরাধীর সংযোগ অত্যন্ত স্পষ্ট, যে অপরাধী চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং যে ব্যক্তি জামিন পেলে পুনরায় অপরাধ করতে পারে বা অন্যকারো জীবন বিপন্ন করতে পারে, তাকে জামিন দেয়া অস্বাভাবিক ও অসংগত। এ নিয়ে আমি প্রকাশ্যে বলেছি। মাননীয় প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা হওয়ার সময় উনার কাছে উচ্চ আদালতে অস্বাভাবিক জামিন আমার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলাম।

কিছু জামিন নিম্ন আদালত থেকেও হয়েছে গত ১৬ মাসে। আমরা সেসব মামলার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মামলায় আসামী কিভাবে অপরাধটিতে জড়িত, পুলিশ তার কোনো তথ্য অভিযোগপত্রে দেয়নি, এমনকি আসামীর দলীয় পরিচয় পর্যন্তও মামলার কোনো কাগজে উল্লেখ করেনি। এরপরও আমি যথাযথ বিচারিক বিবেচনা না করে যেনতেনভাবে জামিন না প্রদান করার কথা বলেছি (১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫)[কমেন্টে লিংক দেখুন]। কিছু ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।

৩.জামিন বাণিজ্যে যারা লিপ্ত আছেন, তাদেরকে বলছি এবার থামুন। আমাদের ছেলেদের জীবন বিপন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দিবেন না। এক গণহত্যাকারী পাশের দেশে বসে আমাদের জুলাই বীরদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দিয়ে সেই গণহত্যাকারীর অনুসারীদের এই সুযোগ করে দিবেন না।

না হলে, পরকালেও এর দায় আপনাদের নিতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জনগণের সহযোগিতা-সমর্থনই আমার একমাত্র ভরসা: আসিফ মাহমুদ

» জেআইসি সেলে গুম : শেখ হাসিনা ও ১২ সেনা কর্মকর্তার বিচার শুরুর আদেশ

» নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তাসনিম জারার

» বকেয়া বেতন না পেয়ে শ্রমিকদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

» হত্যা মামলায় সুব্রত বাইনের মেয়ের ৫ দিনের রিমান্ড

» বিজয় দিবস ১৯৭১

» সার্বিকভাবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল: ডা. জাহিদ

» পুষ্টিকর ব্রোকলি চিকেন বানাবেন যেভাবে

» ইশতেহারের জন্য অনলাইনে মতামত নেবে জামায়াত

» এনসিপি নেত্রী রুমীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফয়সালের জামিনে যুক্ত ছিলো বড় রাজনৈতিক দলের নেতার প্রভাবশালী আইনজীবীরা : আইন উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণকারী ফয়সাল করিম মাসুদের আগের অস্ত্র মামলার জামিনকারী আইনজীবীরা প্রভাবশালী আইনজীবী ও অধিকাংশই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। ফলে তাদের প্রভাবে এসব জামিন হওয়া সহজতর হয়েছে।

বুধবার রাতে তিনি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে এ কথা লেখেন।

পাঠকের জন্য আসিফ নজরুলের হুবহু পোস্টটি তুলে ধরা হলো:

জামিন বিতর্ক,

আমাদের প্রিয় ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করেছে ফয়সাল করিম মাসুদ নামের এক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী। তাকে র্যাব গ্রেফতার করেছিল গত বছর। এরপর তার জামিন হয়েছে হাইকোর্ট থেকে। এরপর থেকে জামিন দেয়ার ন্যয্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আবারো আলোচনা-বিতর্ক উঠছে।

প্রথমেই বলে রাখি, হাইকোর্ট বিচারিক কাজে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। হাইকোর্টের উপর আইন মন্ত্রণালয়ের কোন নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীর কোনদেশে থাকে না, বাংলাদেশেও নেই। কাজেই সেখানে ফয়সাল করিম মাসুদের জামিন হওয়ার সাথে আইন মন্ত্রণালয়ের কোন সম্পর্ক ছিল না।

ফয়সাল করিম মাসুদ গতবছর জামিন পেয়েছিল অস্ত্র মামলায়। হাইকোর্টে অস্ত্র মামলার জামিন সহজে হওয়ার কথা নয়। এটি তখনই হতে পারে যখন প্রভাবশালী আইনজীবীরা এসব মামলায় জামিন দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এই আইনজীবীরা অধিকাংশই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। অভিযোগ রয়েছে যে তাদের প্রভাবে এসব জামিন হওয়া সহজতর হয়।

হাইকোর্টের প্রদত্ত জামিনে বিচারিক বিবেচনা কতোটা থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে। যেমন: হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে কিভাবে ৪ ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন হয়েছিল, তা নিয়ে আমি কয়েক মাস আগে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলাম (২৩ অক্টোবর, ২০২৫)[কমেন্টে লিংক দেখুন]। এজন্য একশ্রেণীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আমার পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করা হয়েছিলো (২৫ অক্টোবর ২০২৫)[কমেন্টে লিংক দেখুন]।

২.জামিন পাওয়ার সুযোগ আমাদের আইনে রয়েছে। কিন্তু গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যে অপরাধীর সংযোগ অত্যন্ত স্পষ্ট, যে অপরাধী চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং যে ব্যক্তি জামিন পেলে পুনরায় অপরাধ করতে পারে বা অন্যকারো জীবন বিপন্ন করতে পারে, তাকে জামিন দেয়া অস্বাভাবিক ও অসংগত। এ নিয়ে আমি প্রকাশ্যে বলেছি। মাননীয় প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা হওয়ার সময় উনার কাছে উচ্চ আদালতে অস্বাভাবিক জামিন আমার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলাম।

কিছু জামিন নিম্ন আদালত থেকেও হয়েছে গত ১৬ মাসে। আমরা সেসব মামলার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মামলায় আসামী কিভাবে অপরাধটিতে জড়িত, পুলিশ তার কোনো তথ্য অভিযোগপত্রে দেয়নি, এমনকি আসামীর দলীয় পরিচয় পর্যন্তও মামলার কোনো কাগজে উল্লেখ করেনি। এরপরও আমি যথাযথ বিচারিক বিবেচনা না করে যেনতেনভাবে জামিন না প্রদান করার কথা বলেছি (১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫)[কমেন্টে লিংক দেখুন]। কিছু ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।

৩.জামিন বাণিজ্যে যারা লিপ্ত আছেন, তাদেরকে বলছি এবার থামুন। আমাদের ছেলেদের জীবন বিপন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দিবেন না। এক গণহত্যাকারী পাশের দেশে বসে আমাদের জুলাই বীরদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দিয়ে সেই গণহত্যাকারীর অনুসারীদের এই সুযোগ করে দিবেন না।

না হলে, পরকালেও এর দায় আপনাদের নিতে হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com