সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে কখনো কখনো ঘটনাগুলো খবর থাকে না, ঘটনাগুলো হয়ে ওঠে আবহাওয়া। গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে সেই আবহাওয়া বদলেছে দ্রুত। রাজধানীর উত্তরা থেকে বিজয়নগর আবার ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা— খুন, গুলি, হামলা, অগ্নিসংযোগের খবর যেন এক ধরনের অস্বস্তিকর ধারাবাহিকতায় মিলছে।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিওতে জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা আর ব্যতিক্রম নয়। সহিংসতার সম্ভাবনাই পরিকল্পনার কেন্দ্রে ঢুকে গেছে। রাষ্ট্র তখন কী করছে? দেখা যাচ্ছে অভিযান, নির্দেশনা, সতর্কতা, পুরস্কার ঘোষণা, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ টু-এর ফেজ টু চালুর ঘোষণা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ রাখার কথা।
জিল্লুর বলেন, এসব পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে জরুরি। কিন্তু প্রশ্ন হলো— এসব পদক্ষেপ কি শুধু প্রতিক্রিয়া নাকি প্রতিরোধের সক্ষমতা? প্রতিক্রিয়া মানে ঘটনার পরে অভিযান। প্রতিরোধ মানে ঘটনার আগেই সক্ষম গোয়েন্দা তৎপরতা, অস্ত্র উদ্ধার, অপরাধের দ্রুত শনাক্তকরণ, বিচার প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব পক্ষের জন্য সমান নিরাপত্তা ও সমান আইনি আচরণ।
তিনি আরও বলেন, আরেকটা বড় বাস্তবতা সামনে আসে। অবৈধ অস্ত্রের ছায়া। গণ-অভ্যুত্থানের সময় থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদের একটা বড় অংশ এখনো উদ্ধার হয়নি। এ ধরনের তথ্য জনমনে বারবার ভয়ের বার্তা দেয়। কারণ, মানুষ জানে অস্ত্র যখন সমাজে ঘুরে বেড়ায় তখন রাজনীতি আর অপরাধ এক জায়গায় এসে মিশে যায়। এই মিশ্রণই নির্বাচনি পরিবেশকে বিষাক্ত করে। একজন ভোটার যখন ভাবেন ভোট দিতে গেলেই হয়তো রাস্তায় সহিংসতা হবে অথবা প্রার্থী সমর্থকদের সংঘাতে এলাকা উত্তপ্ত হবে, তখন তিনি নিজের নিরাপত্তাকে গণতন্ত্রের চেয়ে বড় করে দেখেন। এটা মানুষের দোষ নয়। এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতার নির্মম ফল।
জিল্লুর রহমান বলেন, অন্যদিকে, রাজনীতির মাঠে একটা বিশাল ঢেউ উঠতে যাচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা। ২৫ ডিসেম্বর তিনি ফিরবেন। দলীয় ঘোষণায় লন্ডন থেকে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছবেন। এ তথ্য প্রকাশের পর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উদ্দীপনা, ঢাকামুখী জনসমাগমের প্রস্তুতি, রাজনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য সবই চোখে পড়বার মতো। রাজনীতিতে প্রতিটি ঘটনা অনেক সময় বাস্তব রাজনীতির চেয়েও শক্তিশালী হয়। দীর্ঘ নির্বাসনের পর প্রত্যাবর্তন। এটি বিএনপির কাছে কেবল সাংগঠনিক নয়, আবেগেরও উৎস। আন্দোলন, মামলা, দীর্ঘ অনুপস্থিতি—সব মিলিয়ে দলটির কাছে এটি ঘুরে দাঁড়ানোর মুহুর্ত হিসেবে হাজির হচ্ছে। কিন্তু এখানেও ঝুঁকি লুকিয়ে আছে। একদিকে প্রত্যাবর্তনের উদ্দীপনা, অন্যদিকে সহিংসতার আশঙ্কা—এ দুটো স্রোত একদিনে ঢাকায় এসে ধাক্কা খেতে পারে। ঢাকায় লাখো মানুষের সমাগম যদি ঘটে, সেটি রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা পরীক্ষাও। পরীক্ষা শুধু বিএনপির নয়, সরকারেরও। কারণ একটি বড় রাজনৈতিক সমাগম শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়াও রাষ্ট্রের সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতারও ব্যাপার।








