এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি :প্রকৃতিতে এখন শীতের হিমেল বাতাস বইতে শুরু করেছে।পুরোপুরি শীত না নামলেও আগাম প্রস্তুতি নিতে লেপ-তোষক বানাতে ক্রেতারা ভিড় করছেন দোকানগুলোতে। বাগেরহাটের ৯ উপজেলারদিনের বেলা রোদ ঝলমলে থাকলেও ভোরের কুয়াশা আর সন্ধ্যার হিমেল হাওয়া, আর শেষ রাতের দিকে শীতের ছোঁয়া জানান দিচ্ছে- শীত আর দরজার বাইরে নয়। শীতের এই বার্তা প্রকৃতিতে আসার সাথে সাথে বুননকারী দের তুলা ছাঁটাই ও লেপ তোশক জাজিম তৈরি কাজে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্যতা।
দিন, রাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সুই, সুতা আর ফিটিংএ ব্যাস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।ব্যস্ত সময় পার করছেন লেপ-তোশক তৈরির কারিগররা দিন-রাত তাদের কাজের ব্যস্ততা। শীত যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বেড়েছে লেপ তোশকের কদর। সেই সাথে বেড়েছে কারিগরদের কদর। কেউ তুলা কেউ পুরনো লেপ ভেঙে তৈরি করে নিচ্ছে লেপ-তোশক, জাজিম, বালিশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে,বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় কদর বেড়েছে লেপ তোষক কারিগরদের বেড়েছে কারিগরদের ব্যস্ততা।
মোরেলগঞ্জ বাজারের লেপ-তোশক ব্যবসায়ী শহিদুল ফরাজী জানান, এই মৌসুমের শুরুতেই বিক্রি গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে অর্ডারের চাপ দ্বিগুণ হবে বলে তাদের প্রত্যাশা। কাপড়-তুলার চড়া দাম কারিগরদের চিন্তায় ফেলেছে। তুলা ও কাপড়ের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১০-২০ শতাংশ।
বাজারে নিত্যপন্যের মতই বাড়ছে লেপ তোশক জাজিম তৈরির খরচ। প্রতি কেজি কার্পাস তুলা ৩৫০-৪০০ টাকা, শিমুল তুলা ৫০০-৭০০শত টাকা, আঙ্গুরি তুলা ১২০-১৪০ টাকা, জুট ৮০-১০০ টাকা।
লেপ তৈরী করতে আসা গাবতলা গ্রামের দিনমজুর আবদুল লতিফ শেখ জানান, আমরা গরীব মানুষ কম্বল কেনার সামর্থ্য আমাদের নাই, দিনের বেলা শীত কম থাকলেও রাতে অনেক শীত পরে তাই অল্প টাকায় লেপ তৈরী করে নিচ্ছি।
মোরেলগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতার কথা চিন্তা করে শীতের মোকাবেলায় আগেবাগেই লেপ জাজিম বানিয়ে দোকানে রেখে দিয়েছি । কারণ শীত বাড়ার সাথে সাথে লেপ-তোষকের চাহিদাও বেড়ে যায় তখন সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হয়।
কারিগরা জানান আমরা একটি লেপ তোশক তৈরীতে ২৫০থেকে ৩০০ টাকা মজুরি নেই। আকার অনুযায়ী ২-৩ ঘন্টা সময় লাগে। তাই এই মৌসুম শুরু থেকে আমাদের দম ফেলানোর সময় থাকে না। বাজারের ব্যাবসায়ীরা জানান,পুরো বছরের চেয়ে শীতের মৌসুমের এই তিন মাস বেচা কেনা একটু বেশি হয়।
তাই সাধারণ মানুষের কথা ভেবে গুনগত মান বজায় রেখে রেডিমেট জিনিসও তৈরি করে বিক্রি করছি। সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধির কারনে এবছর লেপ, তোশক, জাজিম,বালিশ তৈরীতে ব্যায় আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাধারণত লেপের কাভারের রঙ লাল হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস। বাংলায় লেপের প্রাচীনত্ব খুঁজে পাওয়া যায় মুর্শিদকুলি খাঁর আমল থেকে, যিনি ছিলেন বাংলার প্রথম নবাব। সেই সময় মুর্শিদাবাদ কারুকার্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। লম্বা আঁশের কার্পাস তুলাকে বীজ ছাড়িয়ে লাল রঙে চুবিয়ে শুকিয়ে নরম সিল্ক বা মখমলের কাভারে ভরা হতো। সেই থেকে লাল রঙের ঐতিহ্য রূপ নিয়েছে।
শুধু তাই নয়, লেপে সুগন্ধির জন্য আতরও ব্যবহার করা হতো, যা একসময় লেপকে শুধু উষ্ণ রাখাই হতো না, বরং তার মর্যাদা ও সৌন্দর্যও বাড়িয়ে তোলা হতো। সেই সময় বিহারসহ অবিভক্ত বাংলার নবাবরাও এ রীতিটি অনুসরণ করতেন।
নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর মেয়ের জামাই নবাব সুজাউদ্দিন মখমলের পরিবর্তে সিল্ক কাপড় ব্যবহার শুরু করেছিলেন। কিন্তু রঙের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। লালই থেকে গেছে।
সময়ের বিবর্তনে মখমল ও সিল্কের কাপড় সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল হলেও পরবর্তী সময় সাধারণ কাপড়ের ব্যবহারও শুরু হয়। তবু লেপের রঙ লালই থেকে যায়, যা আজও বাংলাদেশের শীতকালীন লেপের একটি ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্য হিসেবে সমাদৃত।”ছবি সংযুক্ত আছে।







