সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা

সংগৃহীত ছবি

 

মোস্তফা কামাল :জাতীয়-আন্তর্জাতিক অনেক দিবসই পালন হয় বাংলাদেশে। প্রায় প্রতিদিনই থাকছে কোনো না কোনো দিবস। সেই দিনলিপিতে ২১ নভেম্বর গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বছরের ৩২৫তম (অধিবর্ষে ৩২৬তম) দিন। বছর শেষ হতে বাকি থাকে ৪০ দিন। বিশ্ব ইতিহাসে এ দিনের আলোচিত ঘটনা অনেক। জন্ম-মৃত্যুসহ কিছু ঘটনা আশীর্বাদের, কিছু অভিশাপের। ঘটনা বিবেচনায় চলে আসে ১৭৮৩ সালে মন্টগোলফার ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রথম বেলুনে আকাশে উড্ডয়নের কথা। ঐতিহাসিক বার্লিন আদেশ জারি করা হয় ১৮০৬ সালের এ দিনটিতে। ১৮৭৭ সালের এ দিনেই থমাস এডিসন গ্রামোফোন আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। উগ্রপন্থিদের মক্কায় কাবা মসজিদ দখল ১৯৭৯ সালের এ দিনেই। ১৬৯৪ সালে এ দিনে ফরাসি লেখক ও দার্শনিক ভলতেয়ারের জন্ম, আবার ১৯৯৬ সালের এ দিনে নোবেল জয়ী পাকিস্তানি তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী আবদুস সালামের মৃত্যু। আর দেশীয় পরিমণ্ডলে দিনটি বিখাত সশস্ত্র বাহিনী দিবসের জন্য। এর প্রেক্ষিত ও হেতু বেশ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শৌর্যময়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ আন্দোলনের আকারে শুরু হয় যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় প্রাথমিকভাবে দমন করে এবং পরবর্তী সময়ে এটি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে, বর্তমানে বাংলাদেশে বিস্তৃত হয়। দিনটিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবলীলার জবাবে অস্ত্র তুলে নেন বিপ্লবী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার ও অন্য সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে এগিয়ে আসেন পূর্ব পাকিস্তানের কর্মরত বাঙালি নাবিক ও নৌ-অফিসার, সেনা ও বিমান কর্মকর্তারা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার যুবক। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ধারণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ বাহিনী থেকে মুক্তিবাহিনী নামে পরিচিতি পায়। একপর্যায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের নিজ নিজ ইউনিট ত্যাগ করে বাংলাদেশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ভারতীয় সীমান্তের ওপারে নিয়মিত ইউনিটে তাঁদের সংগঠিত করে, প্রাথমিকভাবে স্থলবাহিনী হিসেবে। নৌ কমান্ডোদের একটি ছোট দল নৌ শাখাও খোলে। কয়েকজন পাইলট এবং বিমানসেনা মিলে গঠন করেন বিমান শাখা। কিছু দিন পর পুনর্গঠনপর্ব। একাত্তরের ৭ জুলাই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম, তৃতীয় এবং অষ্টম ব্যাটালিয়ন নিয়ে ব্রিগেড গঠন। সেনা, নৌ, বিমান মেলানো সেই অভিযাত্রা গা শিহরণের মতো। হয় মৃত্যু, নয় স্বাধীনতার মন্ত্রে একাত্তরের ২১ নভেম্বর তিনটি বাহিনীই একযোগে যৌথ অভিযানে নামে। যা জলে, স্থলে ও অন্তরিক্ষে ম্যাজিকের মতো আবহ বদলে দেয়।

যার সুবাদে প্রতিদিন সীমান্তের বিশাল এলাকা মুক্ত হতে থাকে। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঘনিয়ে আসে প্রায় তিরানব্বই হাজার প্রশিক্ষিত যুদ্ধবিদ্যায় চৌকশ পাকিস্তানি বাহিনীর সেনাসদস্যের আত্মসমর্পণে আকাঙ্ক্ষিত বিজয়ের ১৬ ডিসেম্বর। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্ব ইতিহাসেই বিশেষ জায়গা করে নেয় তিন বাহিনীর সম্মিলনের ২১ নভেম্বর। সারা দেশকে বিভক্ত করা হয় ১১টি সেক্টরে, যার নেতৃত্ব দেওয়া হয় একেকজন সুশিক্ষিত পেশাদার সেনা কর্মকর্তাকে। আট মাস পর একাত্তর সালের ২১ নভেম্বর চূড়ান্তভাবে সম্মিলিত আক্রমণের পরিকল্পনা হয়। যা বিজয়ের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। সম্মিলিত ওই তৎপরতার কারণেই দৃশ্যমান বৃহত্তর সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা। কৌশলগত সামরিক স্থাপনা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম ধ্বংস, রসদ সরবরাহ ব্যবস্থায় ভাঙন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক অকেজো করে দেওয়ার মাধ্যমে দখলদার হানাদার বাহিনীর সামরিক সক্ষমতা ও মনোবল দুর্বল করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক অভিযানগুলো বিশেষভাবে কার্যকর ছিল। এর আগে সামরিক স্থাপনাগুলোর সবই ছিল দখলদার হানাদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। যুদ্ধের প্রতিটি পর্যায়েই ছিল অকুতোভয় বাঙালি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যক্ষ অবদান, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করতে একাত্তরে যে চেতনার জন্ম হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের পরবর্তী ৫৪ বছরে তার আলোতেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে ধারাবাহিক সাফল্য ও দেশসেবার পরতে পরতে সেই অনন্য দৃষ্টান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী তাদের অনবদ্য অবদানের সাক্ষ্য। একটা সময় পর্যন্ত ২৫ মার্চ সেনা, ১০ ডিসেম্বর নৌ এবং বিমানবাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর আলাদাভাবে দিবস পালন করত। পরে ১৯৮০ সাল থেকে ২১ নভেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে গোটা সশস্ত্র বাহিনীর অসাধারণ লড়াই আর ত্যাগের ইতিহাসকে স্মরণ রাখতে এই দিবস পালন। যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অবদানকে দেশের আপামর জনগণের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর অবলুপ্ত হয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থাপিত হয় তিন বাহিনীর জন্য পৃথক সদর দপ্তর।

মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর অবদানকে সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয় এই দিবসটিতে। যুদ্ধ শেষে বিজয় দিয়েই সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব শেষ হয়নি। বরং আরও বেড়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নেও রেখে চলছে উল্লেখযোগ্য অবদান। মহলবিশেষের কাছে তা ঈর্ষণীয়, অসহ্য। সেনারা মাঠে থাকাতে অঘটন ঘটাতে না পারার যন্ত্রণায় এ অঘটনপটীয়সীরা। বিভিন্ন সংকট-বিপদে সশস্ত্র বাহিনী এ দেশের মানুষের পাশে থেকেছে, এখনো থাকছে। ঘটনাপ্রবাহে বছর খানেকের বেশি সময় ধরে রয়েছে আরও দায়িত্ব নিয়ে। কেবল ঝড়-তুফান-বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নেই নয়, জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায়ও রয়েছে মাঠেঘাটে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম, পেশাদারত্ব এবং উন্নত নৈতিকতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তাদের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে যাচ্ছে। এর সুবাদে বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে পৃথিবীর বহু দেশে আজ যে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে সগৌরবে।

পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন বাহিনীর ধ্যানধারণা, চিন্তাচেতনার বিস্তর আধুনিকায়ন হয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকেই সম্মানিত করেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে শুধু সেসব দেশে শান্তি ফিরিয়েই আনেনি, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রসহ পুনর্বাসন ক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যার জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। ১৯৮৮ সালের ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে প্রথম দেশের সেনাবাহিনী যোগদান করে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়। এই শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও সশস্ত্র বাহিনীর আর্তমানবতার সেবা এগিয়ে চলছে।

জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের ৫৪টিতেই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, নামিবিয়া, কঙ্গো, উগান্ডা, হাইতি, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, তাজিকিস্তান প্রভৃতি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। বাংলাদেশে ছবিসহ ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরি করে দেশে-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। সর্বশেষ চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল অনন্য। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনী সমর্থন না দিলে ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। জনগণের এই শেষ ভরসার জায়গা থেকেই দেশের ক্রান্তিলগ্নে সশস্ত্র বাহিনীর জনগণের পাশে এসে দাঁড়ানোর এই চর্চা। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা, শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা প্রদানসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অস্ত্র উদ্ধারসহ সব কার্যক্রমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর এ ভূমিকা কেবল বাংলাদেশ নয়, সমসাময়িক বিশ্বে মোটাদাগের রেখাপাত। দেশের প্রয়োজনে পরিস্থিতির ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছে, ইতিহাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ নজির থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পেশাদার ও আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর যেমন বিকল্প নেই, তেমনি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনন্য গতিতে এগিয়ে চলা আজকের বাংলাদেশের বড় আস্থা ও ভরসা হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীরও নিশ্চল থেমে থাকার সুযোগ নেই। তারা ধাতস্থ এভাবেই।

সশস্ত্র বাহিনীর যাবতীয় শিক্ষা-প্রশিক্ষণ পারার জন্য, না পারার জন্য নয়। আরও পরিষ্কার করে বললে সাফল্যের জন্যই তাদের যত দীক্ষা। না পারা বা ব্যর্থতা থাকতেই পারে- এ মন্ত্র তাদের দেওয়া হয় না। সাফল্য ও জয়ের তালিমে কেবল সামনে এগোয় তারা, পেছনে তাকায় না। তা সমতলে বা পাহাড়ে, দেশে বা বিদেশে। এ গুণ-বৈশিষ্ট্যের জন্যই জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের প্রশংসায় ‘শান্তির কূটনীতির মোরসাল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর নারী সদস্যরাও শান্তিরক্ষী হিসেবে গৌরবের সঙ্গে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। জননিরাপত্তা, অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কারসাজি রুখে দেওয়া, মিল-কারখানা সচল রাখা, রাষ্ট্রের কেপিআই এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলোকে রক্ষা, সড়ক-মহাসড়ক বাধামুক্ত রাখা, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ সেনাবাহিনী যেভাবে করে যাচ্ছে, তা বিবেকবানরা উপলব্ধি করছেন মর্মে মর্মে। মাদক কারবারি ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, বিভিন্ন চিহ্নিত অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা-পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি কাজও করে চলছে সেনাবাহিনী।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ বিশ্বসভার সদস্যদের প্রতিক্রিয়ায়ও। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জনগণের ওপর দমনপীড়নকে রোধ করতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

এবারের পট পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কী রকমের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হয়েছে, কত সড়ক-মহাসড়কে অবরোধ হয়েছে, কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, সরকারি সংস্থা অথবা অফিসসংক্রান্ত জটিলতা হয়েছে, অনেকেরই এ-সংক্রান্ত ধারণা নেই। সেনাসদস্যরা সেগুলো ফয়সালা করেছেন। টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে অপ্রীতিকর ঘটনার সমাধানও করেছে। গণ আন্দোলনের আগে ও পরে দেশের পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা অনেকেরই অজানা।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট  । সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সশস্ত্র বাহিনী জাতির আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে: তারেক রহমান

» আজ সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া

» ভূমিকম্প নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা

» মালয়েশিয়ায় ১৭৪ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

» সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত হচ্ছে

» মাছের বাজারে চড়া দাম, মুরগি-ডিমে কিছুটা স্বস্তি

» ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে একজনের মৃত্যু, আহত অর্ধশত

» কুমিল্লায় ভূমিকম্পে ৮০ নারী শ্রমিক হাসপাতালে

» সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা

» আজ থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা

সংগৃহীত ছবি

 

মোস্তফা কামাল :জাতীয়-আন্তর্জাতিক অনেক দিবসই পালন হয় বাংলাদেশে। প্রায় প্রতিদিনই থাকছে কোনো না কোনো দিবস। সেই দিনলিপিতে ২১ নভেম্বর গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বছরের ৩২৫তম (অধিবর্ষে ৩২৬তম) দিন। বছর শেষ হতে বাকি থাকে ৪০ দিন। বিশ্ব ইতিহাসে এ দিনের আলোচিত ঘটনা অনেক। জন্ম-মৃত্যুসহ কিছু ঘটনা আশীর্বাদের, কিছু অভিশাপের। ঘটনা বিবেচনায় চলে আসে ১৭৮৩ সালে মন্টগোলফার ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রথম বেলুনে আকাশে উড্ডয়নের কথা। ঐতিহাসিক বার্লিন আদেশ জারি করা হয় ১৮০৬ সালের এ দিনটিতে। ১৮৭৭ সালের এ দিনেই থমাস এডিসন গ্রামোফোন আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। উগ্রপন্থিদের মক্কায় কাবা মসজিদ দখল ১৯৭৯ সালের এ দিনেই। ১৬৯৪ সালে এ দিনে ফরাসি লেখক ও দার্শনিক ভলতেয়ারের জন্ম, আবার ১৯৯৬ সালের এ দিনে নোবেল জয়ী পাকিস্তানি তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী আবদুস সালামের মৃত্যু। আর দেশীয় পরিমণ্ডলে দিনটি বিখাত সশস্ত্র বাহিনী দিবসের জন্য। এর প্রেক্ষিত ও হেতু বেশ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শৌর্যময়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ আন্দোলনের আকারে শুরু হয় যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় প্রাথমিকভাবে দমন করে এবং পরবর্তী সময়ে এটি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে, বর্তমানে বাংলাদেশে বিস্তৃত হয়। দিনটিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবলীলার জবাবে অস্ত্র তুলে নেন বিপ্লবী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার ও অন্য সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে এগিয়ে আসেন পূর্ব পাকিস্তানের কর্মরত বাঙালি নাবিক ও নৌ-অফিসার, সেনা ও বিমান কর্মকর্তারা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার যুবক। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ধারণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ বাহিনী থেকে মুক্তিবাহিনী নামে পরিচিতি পায়। একপর্যায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের নিজ নিজ ইউনিট ত্যাগ করে বাংলাদেশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ভারতীয় সীমান্তের ওপারে নিয়মিত ইউনিটে তাঁদের সংগঠিত করে, প্রাথমিকভাবে স্থলবাহিনী হিসেবে। নৌ কমান্ডোদের একটি ছোট দল নৌ শাখাও খোলে। কয়েকজন পাইলট এবং বিমানসেনা মিলে গঠন করেন বিমান শাখা। কিছু দিন পর পুনর্গঠনপর্ব। একাত্তরের ৭ জুলাই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম, তৃতীয় এবং অষ্টম ব্যাটালিয়ন নিয়ে ব্রিগেড গঠন। সেনা, নৌ, বিমান মেলানো সেই অভিযাত্রা গা শিহরণের মতো। হয় মৃত্যু, নয় স্বাধীনতার মন্ত্রে একাত্তরের ২১ নভেম্বর তিনটি বাহিনীই একযোগে যৌথ অভিযানে নামে। যা জলে, স্থলে ও অন্তরিক্ষে ম্যাজিকের মতো আবহ বদলে দেয়।

যার সুবাদে প্রতিদিন সীমান্তের বিশাল এলাকা মুক্ত হতে থাকে। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঘনিয়ে আসে প্রায় তিরানব্বই হাজার প্রশিক্ষিত যুদ্ধবিদ্যায় চৌকশ পাকিস্তানি বাহিনীর সেনাসদস্যের আত্মসমর্পণে আকাঙ্ক্ষিত বিজয়ের ১৬ ডিসেম্বর। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্ব ইতিহাসেই বিশেষ জায়গা করে নেয় তিন বাহিনীর সম্মিলনের ২১ নভেম্বর। সারা দেশকে বিভক্ত করা হয় ১১টি সেক্টরে, যার নেতৃত্ব দেওয়া হয় একেকজন সুশিক্ষিত পেশাদার সেনা কর্মকর্তাকে। আট মাস পর একাত্তর সালের ২১ নভেম্বর চূড়ান্তভাবে সম্মিলিত আক্রমণের পরিকল্পনা হয়। যা বিজয়ের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। সম্মিলিত ওই তৎপরতার কারণেই দৃশ্যমান বৃহত্তর সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা। কৌশলগত সামরিক স্থাপনা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম ধ্বংস, রসদ সরবরাহ ব্যবস্থায় ভাঙন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক অকেজো করে দেওয়ার মাধ্যমে দখলদার হানাদার বাহিনীর সামরিক সক্ষমতা ও মনোবল দুর্বল করার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক অভিযানগুলো বিশেষভাবে কার্যকর ছিল। এর আগে সামরিক স্থাপনাগুলোর সবই ছিল দখলদার হানাদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। যুদ্ধের প্রতিটি পর্যায়েই ছিল অকুতোভয় বাঙালি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যক্ষ অবদান, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করতে একাত্তরে যে চেতনার জন্ম হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের পরবর্তী ৫৪ বছরে তার আলোতেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে ধারাবাহিক সাফল্য ও দেশসেবার পরতে পরতে সেই অনন্য দৃষ্টান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী তাদের অনবদ্য অবদানের সাক্ষ্য। একটা সময় পর্যন্ত ২৫ মার্চ সেনা, ১০ ডিসেম্বর নৌ এবং বিমানবাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর আলাদাভাবে দিবস পালন করত। পরে ১৯৮০ সাল থেকে ২১ নভেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে গোটা সশস্ত্র বাহিনীর অসাধারণ লড়াই আর ত্যাগের ইতিহাসকে স্মরণ রাখতে এই দিবস পালন। যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অবদানকে দেশের আপামর জনগণের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর অবলুপ্ত হয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থাপিত হয় তিন বাহিনীর জন্য পৃথক সদর দপ্তর।

মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন বাহিনীর অবদানকে সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয় এই দিবসটিতে। যুদ্ধ শেষে বিজয় দিয়েই সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব শেষ হয়নি। বরং আরও বেড়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নেও রেখে চলছে উল্লেখযোগ্য অবদান। মহলবিশেষের কাছে তা ঈর্ষণীয়, অসহ্য। সেনারা মাঠে থাকাতে অঘটন ঘটাতে না পারার যন্ত্রণায় এ অঘটনপটীয়সীরা। বিভিন্ন সংকট-বিপদে সশস্ত্র বাহিনী এ দেশের মানুষের পাশে থেকেছে, এখনো থাকছে। ঘটনাপ্রবাহে বছর খানেকের বেশি সময় ধরে রয়েছে আরও দায়িত্ব নিয়ে। কেবল ঝড়-তুফান-বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নেই নয়, জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায়ও রয়েছে মাঠেঘাটে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম, পেশাদারত্ব এবং উন্নত নৈতিকতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তাদের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে যাচ্ছে। এর সুবাদে বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে পৃথিবীর বহু দেশে আজ যে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে সগৌরবে।

পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন বাহিনীর ধ্যানধারণা, চিন্তাচেতনার বিস্তর আধুনিকায়ন হয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকেই সম্মানিত করেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে শুধু সেসব দেশে শান্তি ফিরিয়েই আনেনি, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রসহ পুনর্বাসন ক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যার জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। ১৯৮৮ সালের ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে প্রথম দেশের সেনাবাহিনী যোগদান করে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার প্রচেষ্টায় যুক্ত হয়। এই শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও সশস্ত্র বাহিনীর আর্তমানবতার সেবা এগিয়ে চলছে।

জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের ৫৪টিতেই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, নামিবিয়া, কঙ্গো, উগান্ডা, হাইতি, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, তাজিকিস্তান প্রভৃতি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। বাংলাদেশে ছবিসহ ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরি করে দেশে-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। সর্বশেষ চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল অনন্য। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনী সমর্থন না দিলে ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। জনগণের এই শেষ ভরসার জায়গা থেকেই দেশের ক্রান্তিলগ্নে সশস্ত্র বাহিনীর জনগণের পাশে এসে দাঁড়ানোর এই চর্চা। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা, শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা প্রদানসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অস্ত্র উদ্ধারসহ সব কার্যক্রমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর এ ভূমিকা কেবল বাংলাদেশ নয়, সমসাময়িক বিশ্বে মোটাদাগের রেখাপাত। দেশের প্রয়োজনে পরিস্থিতির ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছে, ইতিহাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ নজির থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পেশাদার ও আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর যেমন বিকল্প নেই, তেমনি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনন্য গতিতে এগিয়ে চলা আজকের বাংলাদেশের বড় আস্থা ও ভরসা হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীরও নিশ্চল থেমে থাকার সুযোগ নেই। তারা ধাতস্থ এভাবেই।

সশস্ত্র বাহিনীর যাবতীয় শিক্ষা-প্রশিক্ষণ পারার জন্য, না পারার জন্য নয়। আরও পরিষ্কার করে বললে সাফল্যের জন্যই তাদের যত দীক্ষা। না পারা বা ব্যর্থতা থাকতেই পারে- এ মন্ত্র তাদের দেওয়া হয় না। সাফল্য ও জয়ের তালিমে কেবল সামনে এগোয় তারা, পেছনে তাকায় না। তা সমতলে বা পাহাড়ে, দেশে বা বিদেশে। এ গুণ-বৈশিষ্ট্যের জন্যই জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের প্রশংসায় ‘শান্তির কূটনীতির মোরসাল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর নারী সদস্যরাও শান্তিরক্ষী হিসেবে গৌরবের সঙ্গে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। জননিরাপত্তা, অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কারসাজি রুখে দেওয়া, মিল-কারখানা সচল রাখা, রাষ্ট্রের কেপিআই এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলোকে রক্ষা, সড়ক-মহাসড়ক বাধামুক্ত রাখা, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ সেনাবাহিনী যেভাবে করে যাচ্ছে, তা বিবেকবানরা উপলব্ধি করছেন মর্মে মর্মে। মাদক কারবারি ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, বিভিন্ন চিহ্নিত অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা-পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি কাজও করে চলছে সেনাবাহিনী।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ বিশ্বসভার সদস্যদের প্রতিক্রিয়ায়ও। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জনগণের ওপর দমনপীড়নকে রোধ করতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

এবারের পট পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কী রকমের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হয়েছে, কত সড়ক-মহাসড়কে অবরোধ হয়েছে, কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, সরকারি সংস্থা অথবা অফিসসংক্রান্ত জটিলতা হয়েছে, অনেকেরই এ-সংক্রান্ত ধারণা নেই। সেনাসদস্যরা সেগুলো ফয়সালা করেছেন। টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে অপ্রীতিকর ঘটনার সমাধানও করেছে। গণ আন্দোলনের আগে ও পরে দেশের পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা অনেকেরই অজানা।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট  । সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com