সংগৃহীত ছবি
ধর্ম ডেস্ক : গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, আল্লাহর দরবারে চোখের পানিতে ক্ষমা চাওয়া- এটাই প্রকৃত তাওবা। তাওবা হলো অন্ধকার পথ ছেড়ে আল্লাহর হেদায়াতের আলোয় ফিরে আসার নাম। কিন্তু তাওবার পর কীভাবে এই আলো জ্বেলে রাখা যায়? নিচের ১৩টি আমল সেই পথ দেখাবে, যা আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে ইনশাআল্লাহ।
১. আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন
প্রথমেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। কেননা তিনিই আপনাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছেন। আন্তরিক তাওবাকারীর পাপগুলো আল্লাহ পুণ্যে রূপান্তরিত করেন। তাই তাওবার সুযোগ লাভ তাঁর এক বিরাট নেয়ামত; এর শুকরিয়া আদায় করা জরুরি।
২. খারাপ বন্ধু ত্যাগ করুন
যেসব বন্ধু খারাপ কাজে উৎসাহিত করে, তাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করুন। তাদের নম্বর মুছে ফেলুন, তাদের স্মৃতি জাগানিয়া জিনিসপত্র দূরে রাখুন। কারণ, খারাপ সঙ্গী মানুষকে ধ্বংসের দিকে টেনে নেয়।
৩. সর্বদা সততার পথ অবলম্বন করুন
তাওবার পরের জীবন হোক সততার আদর্শ। আল্লাহর সঙ্গে সততা অবলম্বন করলে তিনিও বান্দাকে সততার প্রতিদান দেন। কথায় ও কাজে সত্যবাদিতা অবলম্বন করুন।
৪. দৃঢ়তার জন্য দোয়া ও ধৈর্য ধরুন
প্রথমদিকে গুনাহ বর্জন কঠিন লাগতে পারে। এ সময় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন, ধৈর্য ধরুন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করুন- يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ (হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখুন)।
৫. নবী ও সাহাবাদের জীবনী পড়ুন
নবী-রাসুলদের কাহিনি এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনচরিত পড়ুন ও চিন্তা করুন। এসব ইতিহাস ঈমানি শক্তি বাড়ায় এবং সঠিক পথে অবিচল থাকতে সাহায্য করে।
৬. উপহাস ও সমালোচনা উপেক্ষা করুন
সৎপথে ফেরার পর অনেকেই উপহাস ও সমালোচনার মুখোমুখি হন। এসব উপেক্ষা করে দ্বীনের পথে অটল থাকুন। আল্লাহর কিতাব ও রাসুল (স.)-এর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরুন।
৭. অসুস্থদের সেবা ও মৃতের দাফনে অংশ নিন
অসুস্থ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের দেখভাল করুন, মৃতের দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ করুন এবং কবরস্থান জিয়ারত করুন। এসব কাজ অন্তরকে নরম করে এবং আখিরাতের স্মরণ জাগ্রত রাখে।
৮. আলেম-ওলামার সোহবত লাভ করুন
হক্কানি আলেমদের সান্নিধ্য ও তাদের জ্ঞানীয় আলোচনায় অংশ নিন। তারা দ্বীনের রক্ষক, আর তাদের সংসর্গ ঈমানি চেতনা বাড়িয়ে দেয়।
৯. নফল ইবাদতে যত্নবান হোন
নফল রোজা, তাহাজ্জুদ, কোরআন তেলাওয়াত, দান-খয়রাত ইত্যাদি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করুন। নফল ইবাদতই বান্দাকে আল্লাহর প্রিয়পাত্রে পরিণত করে।
১০. শয়তানের ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকুন
শাহওয়াত (কুপ্রবৃত্তি) ও শুবুহাত (সন্দেহ)—শয়তানের এই দুই ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকুন। কোনো প্রকার গুনাহের দিকে এগুতে চেষ্টা করবেন না; শুরুই যেন না হয়।
১১. প্রজ্ঞার সঙ্গে অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন
অন্যায় দেখলে তা পরিবর্তন করতে চেষ্টা করুন, কিন্তু প্রজ্ঞা ও ভারসাম্য বজায় রাখুন। সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকুন।
১২. ঈমানি সফর করুন
ওমরা বা দ্বীনি সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য সফর করুন। আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিদের সান্নিধ্য ও ইবাদতের পরিবেশ আপনার ঈমানকে করবে সুদৃঢ়।
১৩. মানুষের হক আদায় করুন
কারো প্রতি জুলুম করে থাকলে, কারো সম্পদ বা অধিকার নষ্ট করে থাকলে, তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিন এবং হক আদায় করুন। নতুবা কেয়ামতের দিন আপনার নেকি তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তাওবা শুধু অতীত মুছে ফেলার নাম নয়; এটি নতুন করে আল্লাহর ভালোবাসায় জীবন সাজানোর সুযোগ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আন্তরিক তাওবার তাওফিক দিন এবং তাওবার পরের প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁর রহমত ও হেদায়াত বর্ষণ করুন। আমিন। সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম







