৯ মাস পরে আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়েছেন, এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা : সারজিস

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :জাতীয় নাগরিক পার্টির (উত্তরাঞ্চল) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা। এজন্য সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ড. আসিফ নজরুলকে জবাবদিহি করা উচিত।

 

বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে তার নিজ জেলা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বারো আউলিয়ার মাজারে ওরশ উপলক্ষে মেলা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি এসব কথা বলেন। সারজিস বলেন, আওয়ামী লীগের যে কয়েকজন সুবিধাভোগী বাংলাদেশে ছিল তার মধ্যে আব্দুল হামিদ একজন।

 

ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি যা যা করেছেন তার অনেক উদাহরণ রয়েছে। তিনি বলেন, হাজারো শহীদ ও অর্ধলক্ষ আহতের রক্তের ওপর এই সরকার দাঁড়িয়ে আছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অথবা ড. মুহম্মদ ইউনুসকে এটা ভুলে গেলে চলবে না। এই সরকার এখন পর্যন্ত একটা হত্যা মামলার বিচার করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত একটা মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

 

এগুলো না করার পূর্বে নির্বাচনের কথা বললে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। নির্বাচনের সময় সীমা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা শুধু মৌলিক সংস্কার চাই। জনগণের রায় ছাড়া মানবিক করিডর নয় বলে মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক জায়গায় অবহেলা করছে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো জায়গায় করিডর দেওয়ার পূর্বে এদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলের রায় লাগবে। এর পূর্বে অনেক জায়গায় আমরা দেখেছি করিডরের নাম করে বিদেশি এজেন্ট এসেছে, বিভিন্ন দেশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঢুকেছে। এই সুযোগ আমরা বাংলাদেশে হতে দেবো না। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সরকার একা নিতে পারে না।
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে সারজিস বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দুই দেশে যুদ্ধে জড়ালে তৃতীয় দেশ হিসেবে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ।

 

আমরা কখনো চাই না প্রতিবেশী দুই দেশে যুদ্ধ লাগুক। তবে ধর্মীয় দিক থেকেও এই দুই দেশকে মাঝে মধ্যেই আমরা মুখোমুখি অবস্থানে যেতে দেখেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথা ও কাজে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ছোঁয়া পাই। তাদের সঙ্গে কেবল আমাদের বাণিজ্যিক ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ নয় পরিবেশটিও গুরুত্বপূর্ণ।

 

বিশ্বযুদ্ধ থেকে বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি তারা যখনই যুদ্ধে জড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা যেন তাদের জায়গা থেকে ধর্মীয় উসকানি যেন ব্যবহার না করে। হামলাটা কিন্তু ভারত আগে করেছে। আবার পেহেলগামে যখন হামলা হয়েছে কোন প্রমাণ ছাড়া পাকিস্তানকে দায়ী করা ঠিক নয়। পৃথিবীতে আমরা এমন অনেক ঘটনা দেখেছি যেখানে নিজেরা প্ল্যান করে ঘটিয়ে দেওয়া হয় পরে দায় চাপানো হয়। তবে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী শক্তিদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

 

তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে পুশইনের যে চেষ্টা চলছে তা মেনে নেওয়া হবে না। এরকম অপচেষ্টা সফল হতে দেওয়া যাবে না। এই দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিতে হবে। এই জায়গায় অবহেলা করার সুযোগ নেই। সারজিস বলেন, এই সময়ে বাংলাদেশের জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর ও মেট্রোপলিটনে এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হচ্ছে মিথ্যা মামলা। আমরা চাই ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের নামে মামলা হবে, বিচার হবে এবং দৃশ্যমান শাস্তি হবে। কিন্তু আমরা কখনো এটা চাই না যে একজন নিরপরাধ মানুষের নামে মামলা হোক।

 

তিনি বলেন, একটি মামলা সাজানোর পূর্বে একটি চক্র তৈরি হয়। প্রথম ধাপে ওই চক্রটি লিস্ট তৈরি করে নাম না দেওয়ার শর্তে টাকা দাবি করে। দ্বিতীয় মামলায় নাম দিয়ে নাম কাটানোর কথা বলে টাকা দাবি করে। মামলা যখন আদালতে চলে যায় তখন আরেক ধাপে টাকা নেয়া হয়। এই মামলা বাণিজ্য করছে রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের সহযোগিতা করছে পুলিশ। মামলায় বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করা হয়। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার মামলা বাণিজ্য চলছে। ব্যবসায়ীরা এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

 

আবার আওয়ামী লীগের দোসর, যারা অন্যায় করেছে তাদেরকে আবার শেল্টার দিয়ে বাঁচিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে আওয়ামী লীগের একজন নেতা আরেকটি বড় দলের নেতার তত্ত্বাবধানে থাকছে। আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এর দায় নিতে হবে। এখন তাদের অ্যাকশন নিতে হবে। কে ক্ষমতায় যাবে কে যাবে না। কার জনবল বেশি কার কম। এসব চিন্তা করে যদি তারা ছাড় দেয় তাহলে আগের অবস্থাই তৈরি হলো। তারা যদি অ্যাকশন না নেন তাহলে মনে রাখবেন, আপনার প্রতি যে জনমত তা পাল্টাতে বেশি সময় লাগবে না।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা হাসনাতের

» আমরা যারা ফ্যাসিস্ট বিরোধী দল আছি, তারা যেন ঐক্য ধরে রাখি: সারজিস

» সরকারের ইশারাতেই আবদুল হামিদ দেশ ছাড়েন : ভিপি নুর

» পলাশ থানা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি হলেন আলম মোল্লা

» ভোটের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চাই: মির্জা ফখরুল

» রাষ্ট্রপতির দেশ ত্যাগের দায় উপদেষ্টাদের নিতে হবে- ওসমান হাদী

» আমাদের লড়াইয়ের মূল বিষয় গণতন্ত্রের সংস্কার, যা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়ছি :মির্জা ফখরুল

» ৯ মাস পরে আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়েছেন, এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা : সারজিস

» দলের নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে যে ব্যবস্থা নিচ্ছে এনসিপি, জানালেন নাহিদ ইসলাম

» জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও পদ ছাড়লেন স্নিগ্ধ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

৯ মাস পরে আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়েছেন, এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা : সারজিস

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :জাতীয় নাগরিক পার্টির (উত্তরাঞ্চল) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা। এজন্য সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ড. আসিফ নজরুলকে জবাবদিহি করা উচিত।

 

বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে তার নিজ জেলা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বারো আউলিয়ার মাজারে ওরশ উপলক্ষে মেলা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি এসব কথা বলেন। সারজিস বলেন, আওয়ামী লীগের যে কয়েকজন সুবিধাভোগী বাংলাদেশে ছিল তার মধ্যে আব্দুল হামিদ একজন।

 

ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি যা যা করেছেন তার অনেক উদাহরণ রয়েছে। তিনি বলেন, হাজারো শহীদ ও অর্ধলক্ষ আহতের রক্তের ওপর এই সরকার দাঁড়িয়ে আছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অথবা ড. মুহম্মদ ইউনুসকে এটা ভুলে গেলে চলবে না। এই সরকার এখন পর্যন্ত একটা হত্যা মামলার বিচার করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত একটা মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

 

এগুলো না করার পূর্বে নির্বাচনের কথা বললে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। নির্বাচনের সময় সীমা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা শুধু মৌলিক সংস্কার চাই। জনগণের রায় ছাড়া মানবিক করিডর নয় বলে মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক জায়গায় অবহেলা করছে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো জায়গায় করিডর দেওয়ার পূর্বে এদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলের রায় লাগবে। এর পূর্বে অনেক জায়গায় আমরা দেখেছি করিডরের নাম করে বিদেশি এজেন্ট এসেছে, বিভিন্ন দেশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঢুকেছে। এই সুযোগ আমরা বাংলাদেশে হতে দেবো না। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সরকার একা নিতে পারে না।
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে সারজিস বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দুই দেশে যুদ্ধে জড়ালে তৃতীয় দেশ হিসেবে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ।

 

আমরা কখনো চাই না প্রতিবেশী দুই দেশে যুদ্ধ লাগুক। তবে ধর্মীয় দিক থেকেও এই দুই দেশকে মাঝে মধ্যেই আমরা মুখোমুখি অবস্থানে যেতে দেখেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথা ও কাজে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ছোঁয়া পাই। তাদের সঙ্গে কেবল আমাদের বাণিজ্যিক ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ নয় পরিবেশটিও গুরুত্বপূর্ণ।

 

বিশ্বযুদ্ধ থেকে বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি তারা যখনই যুদ্ধে জড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা যেন তাদের জায়গা থেকে ধর্মীয় উসকানি যেন ব্যবহার না করে। হামলাটা কিন্তু ভারত আগে করেছে। আবার পেহেলগামে যখন হামলা হয়েছে কোন প্রমাণ ছাড়া পাকিস্তানকে দায়ী করা ঠিক নয়। পৃথিবীতে আমরা এমন অনেক ঘটনা দেখেছি যেখানে নিজেরা প্ল্যান করে ঘটিয়ে দেওয়া হয় পরে দায় চাপানো হয়। তবে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী শক্তিদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

 

তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে পুশইনের যে চেষ্টা চলছে তা মেনে নেওয়া হবে না। এরকম অপচেষ্টা সফল হতে দেওয়া যাবে না। এই দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিতে হবে। এই জায়গায় অবহেলা করার সুযোগ নেই। সারজিস বলেন, এই সময়ে বাংলাদেশের জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর ও মেট্রোপলিটনে এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হচ্ছে মিথ্যা মামলা। আমরা চাই ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের নামে মামলা হবে, বিচার হবে এবং দৃশ্যমান শাস্তি হবে। কিন্তু আমরা কখনো এটা চাই না যে একজন নিরপরাধ মানুষের নামে মামলা হোক।

 

তিনি বলেন, একটি মামলা সাজানোর পূর্বে একটি চক্র তৈরি হয়। প্রথম ধাপে ওই চক্রটি লিস্ট তৈরি করে নাম না দেওয়ার শর্তে টাকা দাবি করে। দ্বিতীয় মামলায় নাম দিয়ে নাম কাটানোর কথা বলে টাকা দাবি করে। মামলা যখন আদালতে চলে যায় তখন আরেক ধাপে টাকা নেয়া হয়। এই মামলা বাণিজ্য করছে রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের সহযোগিতা করছে পুলিশ। মামলায় বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করা হয়। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার মামলা বাণিজ্য চলছে। ব্যবসায়ীরা এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

 

আবার আওয়ামী লীগের দোসর, যারা অন্যায় করেছে তাদেরকে আবার শেল্টার দিয়ে বাঁচিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে আওয়ামী লীগের একজন নেতা আরেকটি বড় দলের নেতার তত্ত্বাবধানে থাকছে। আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এর দায় নিতে হবে। এখন তাদের অ্যাকশন নিতে হবে। কে ক্ষমতায় যাবে কে যাবে না। কার জনবল বেশি কার কম। এসব চিন্তা করে যদি তারা ছাড় দেয় তাহলে আগের অবস্থাই তৈরি হলো। তারা যদি অ্যাকশন না নেন তাহলে মনে রাখবেন, আপনার প্রতি যে জনমত তা পাল্টাতে বেশি সময় লাগবে না।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com