৬১ বছর ধরে বাঁশির সুরেই চলে নিজাম উদ্দিনের সংসার

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, জামালপুর প্রতিনিধি \ জামালপুরের ইসলামপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা আশি উর্দ্ধ বংশীবাদক নিজাম উদ্দিন। বয়স যখন দশ কি বার, তখন শখ থেকেই বাঁশি বাজানো শুরু। এক সময় বাঁশির সুর নেশায় পরিণত হয় এবং এটিই হয়ে ওঠে নিজাম উদ্দিনের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন।
বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি এক সময় বাঁশি বানিয়ে হাটবাজারে বিক্রি করতেন তিনি। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে এখন আর বাঁশি বানাতে পারেন না। কিন্তু এখনো তার বাঁশির সুরের মূর্ছনা বিমোহিত করে স্থানীয়দের।

 

নিজাম উদ্দিন জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার ফকিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বাবা-মা শিশু বয়সেই হামিদা বেগমের সাথে নিজাম উদ্দিনের প্রথম বিয়ে দেয়, পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন নিজের ইচ্ছায়। এখন দুই স্ত্রীকে নিয়ে ওই এলাকায় বসবাস করছেন তিনি। ছেলে-মেয়েরা যে যার সংসার করছেন। তাই তেমন একটা খোঁজ-খবর রাখেন না তারা। তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই নিজাম উদ্দিনের।

 

নিজাম উদ্দিন জানান, শখ করেই এই পেশায় এসেছিলেন। যুবক বয়সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি বাঁশি বানিয়ে বিক্রি করতেন। তখন আয় রোজগারও ভালো ছিল। দিনে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা রোজগার হতো। সেই রোজগার দিয়ে ছেলে মেয়েদের বড় করেছেন। কিন্তু এখন বয়স বেড়েছে। শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধায় আগের মতো আর বাঁশি বানাতেও পারেন না, বাজাতেও পারেন না। তারপরও পেটের দায়ে যতটুকু পারেন বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বাঁশি বাজান। তার বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে যে যা দেন তাই দিয়েই দুই স্ত্রী নিয়ে কোনোরকম খেয়ে-পরে বেঁচে আছেন। আগে সরকারি কিছু অনুদান পেলেও এখন সেই অনুদান আর পাইনা, তাই এখন সংসার চালানোও কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।

 

নিজাম উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী হামিদা বেগম বলেন, আগে বাঁশি বানিয়ে বিক্রি করে ভালোই আয়-রোজগার করতেন স্বামী। কিন্তু এখন বয়স বাড়ায় আগের মতো আর বাঁশি বানাতে পারেন না। আর এখন প্রায় অসুস্থ থাকায় বাঁশিও বাজাতে পারেন না। এখন খুব কষ্টে আমাদের সংসার চলাতে হয়। আগে সরকারিভাবে কিছু টাকা-পয়সা পেলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে।

 

স্থানীয়রা জানান, নিজাম উদ্দিন এই এলাকার পরিচিত মুখ। ছোটবেলা থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে হর রেলওয়ে স্টেশনে বাঁশি বাজান। হাট-বাজার, রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা মেলে তার। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা তার বাঁশির সুর শুনে এখানে সময় কাটান। নিজাম উদ্দিন ছোটকাল থেকেই বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে। তবে এখন আগের মতো শরীর চলে না। বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরা যা দেন তাতেই চলে সংসার। তার বাঁশির সুরে পাগল হন দ্বিতীয় স্ত্রী ফুলি বেগম। স্ত্রী-সন্তান আছে জেনেও নিজামকে বিয়ে করে ঘর বাঁধেন।

 

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, বাঁশিওয়ালা নিজাম উদ্দিনের কথা জানতে পেরেছি, তার অনুদান বন্ধের বিষয়টিও আমার জানা নেই, তবে কেন বন্ধ হলো সেটি অবশ্যই দেখবো এবং তাকে সহযোগিতা করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» পাকিস্তান সীমান্তের কাছে মহড়া চালাবে ভারতের বিমানবাহিনী

» এনসিপির রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান হলেন আদীব

» জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করার প্রস্তাব করেছি: সারজিস আলম

» ১৭ বছর পর মাকে স্পর্শ করলেন জোবাইদা

» রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট চায় এনসিপি

» পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো সহায়তা চাননি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» তরুণদের রাজনীতিতে আরও বেশি অংশগ্রহণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» তরুণদের এআই প্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে সরকার : আসিফ মাহমুদ

» জামালপুরে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক জনসচেতনতামূলক কার্মশালা

» দেওয়ানগঞ্জে হরিণের কস্তুরী ও ভারতীয় প্রসাধনীসহ একজন গ্রেপ্তার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

৬১ বছর ধরে বাঁশির সুরেই চলে নিজাম উদ্দিনের সংসার

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, জামালপুর প্রতিনিধি \ জামালপুরের ইসলামপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা আশি উর্দ্ধ বংশীবাদক নিজাম উদ্দিন। বয়স যখন দশ কি বার, তখন শখ থেকেই বাঁশি বাজানো শুরু। এক সময় বাঁশির সুর নেশায় পরিণত হয় এবং এটিই হয়ে ওঠে নিজাম উদ্দিনের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন।
বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি এক সময় বাঁশি বানিয়ে হাটবাজারে বিক্রি করতেন তিনি। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে এখন আর বাঁশি বানাতে পারেন না। কিন্তু এখনো তার বাঁশির সুরের মূর্ছনা বিমোহিত করে স্থানীয়দের।

 

নিজাম উদ্দিন জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার ফকিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বাবা-মা শিশু বয়সেই হামিদা বেগমের সাথে নিজাম উদ্দিনের প্রথম বিয়ে দেয়, পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন নিজের ইচ্ছায়। এখন দুই স্ত্রীকে নিয়ে ওই এলাকায় বসবাস করছেন তিনি। ছেলে-মেয়েরা যে যার সংসার করছেন। তাই তেমন একটা খোঁজ-খবর রাখেন না তারা। তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই নিজাম উদ্দিনের।

 

নিজাম উদ্দিন জানান, শখ করেই এই পেশায় এসেছিলেন। যুবক বয়সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি বাঁশি বানিয়ে বিক্রি করতেন। তখন আয় রোজগারও ভালো ছিল। দিনে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা রোজগার হতো। সেই রোজগার দিয়ে ছেলে মেয়েদের বড় করেছেন। কিন্তু এখন বয়স বেড়েছে। শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধায় আগের মতো আর বাঁশি বানাতেও পারেন না, বাজাতেও পারেন না। তারপরও পেটের দায়ে যতটুকু পারেন বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বাঁশি বাজান। তার বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে যে যা দেন তাই দিয়েই দুই স্ত্রী নিয়ে কোনোরকম খেয়ে-পরে বেঁচে আছেন। আগে সরকারি কিছু অনুদান পেলেও এখন সেই অনুদান আর পাইনা, তাই এখন সংসার চালানোও কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।

 

নিজাম উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী হামিদা বেগম বলেন, আগে বাঁশি বানিয়ে বিক্রি করে ভালোই আয়-রোজগার করতেন স্বামী। কিন্তু এখন বয়স বাড়ায় আগের মতো আর বাঁশি বানাতে পারেন না। আর এখন প্রায় অসুস্থ থাকায় বাঁশিও বাজাতে পারেন না। এখন খুব কষ্টে আমাদের সংসার চলাতে হয়। আগে সরকারিভাবে কিছু টাকা-পয়সা পেলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে।

 

স্থানীয়রা জানান, নিজাম উদ্দিন এই এলাকার পরিচিত মুখ। ছোটবেলা থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে হর রেলওয়ে স্টেশনে বাঁশি বাজান। হাট-বাজার, রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা মেলে তার। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা তার বাঁশির সুর শুনে এখানে সময় কাটান। নিজাম উদ্দিন ছোটকাল থেকেই বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে। তবে এখন আগের মতো শরীর চলে না। বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরা যা দেন তাতেই চলে সংসার। তার বাঁশির সুরে পাগল হন দ্বিতীয় স্ত্রী ফুলি বেগম। স্ত্রী-সন্তান আছে জেনেও নিজামকে বিয়ে করে ঘর বাঁধেন।

 

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, বাঁশিওয়ালা নিজাম উদ্দিনের কথা জানতে পেরেছি, তার অনুদান বন্ধের বিষয়টিও আমার জানা নেই, তবে কেন বন্ধ হলো সেটি অবশ্যই দেখবো এবং তাকে সহযোগিতা করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com