৪০০ মানুষ আশ্রয় নেওয়া স্কুল গুঁড়িয়ে দিল রাশিয়া

ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরীর ওই স্কুলে ৪০০ জন সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং শনিবার (১৯ মার্চ) সেখানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। রোববার (২০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

 

টেলিগ্রামে দেওয়া হালনাগাদ তথ্যে মারিউপোল শহর কাউন্সিল জানিয়েছে, শহরের একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। ৪০০ জন সাধারণ মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

 

কর্মকর্তারা বলছেন, রুশ সেনাদের হামলায় স্কুল ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছেন। রাশিয়ার জোরদার হামলার মুখে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

 

অবশ্য হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে এখনও পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। এছাড়া মারিউপোলের সাথে যোগাযোগ এখন খুবই কঠিন হওয়ায় স্কুলে রাশিয়ার হামলার দাবিটি বিবিসি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

 

এছাড়া রোববার পৃথক এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর তীব্র এই হামলা ও পাল্টা হামলার মধ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিউপোলের রাস্তায় লড়াই চলছে। এই পরিস্থিতিতে মারিউপোল শহরের রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মরদেহ। এছাড়া বহু বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আগুনে।

 

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মারিউপোল শহরের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। প্রায় ৩ লাখ বেসামরিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে শহর থেকে বের হতে পারেননি। অল্প কিছু বেসামরিক নাগরিক যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন তারা মারিউপোলের ভয়ানক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জানিয়েছেন, খাবার সরবরাহ ফুরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

 

ইউক্রেনীয় আইনপ্রণেতা ইয়ারোস্লাভ ঝেলজনিয়াকের বোনও কয়েকদিন আগে মারিউপোল শহর থেকে পালিয়ে যান। ঝেলজনিয়াক বিবিসিকে বলেন, ‘(রুশ আক্রমণ শুরুর) দুই সপ্তাহ পরে তাদের কোনো খাবার ছিল না। এছাড়া দোকানও বন্ধ ছিল। আর তাই সে (ঝেলজনিয়াকের বোন) জানিয়েছিল, চুরির মাধ্যমে কিছু খাবার জোগাড় করা বা না খেয়ে মারা যাওয়া; এই দু’টির মধ্যে একটিকে আমাদের বেছে নিতে হতো।

 

তিনি আরও বলেছেন, ‘মানুষ সবসময় ভয়ে থাকে যে কোনো বোমা, কোনো অস্ত্র বা কোনো বিস্ফোরণ তাদের হত্যা করবে। শহরের রাস্তায় রাস্তায় অনেক লাশ পড়ে আছে, অনেক বাড়ি-ঘরে আগুন লেগেছে, অনেক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি ভেতরে আশ্রিত মানুষসহ অনেক বোমা শেল্টার বা আশ্রয়কেন্দ্রও ধ্বংস হয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার মারিউপোল শহরটি দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর কাছেই অবস্থিত।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সরকার পরিবর্তনের ডাক দিয়ে যুক্তরাজ্যে নতুন ভোটের আহ্বান মাস্কের

» পিকেএসএফ ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

» সারাদেশে টানা পাঁচদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা, কমতে পারে তাপমাত্রা

» আজ রবিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট-দোকানপাট বন্ধ থাকবে

» ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন শিক্ষা দিয়েছে রাজনীতিতে দম্ভের পতন অনিবার্য: রুহুল আমিন হাওলাদার

» জাকসুতেও শিবিরের জয়জয়কার

» ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রাকসু ভোট গণনাসহ ১২ দফা দাবি ছাত্রদলসহ ২ প্যানেলের

» জাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের ফল প্রকাশ, ভিপি জিতু ও জিএস মাজহারুল ইসলাম

» দেশে গণতন্ত্র না থাকায় অনেকের মধ্যে অসহিষ্ণুতা জন্ম নিয়েছে : তারেক রহমান

» জনগণ রায় দিলে দেশকে ৫ বছরেই ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করা সম্ভব: জামায়াত আমির

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

৪০০ মানুষ আশ্রয় নেওয়া স্কুল গুঁড়িয়ে দিল রাশিয়া

ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরীর ওই স্কুলে ৪০০ জন সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং শনিবার (১৯ মার্চ) সেখানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। রোববার (২০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

 

টেলিগ্রামে দেওয়া হালনাগাদ তথ্যে মারিউপোল শহর কাউন্সিল জানিয়েছে, শহরের একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। ৪০০ জন সাধারণ মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

 

কর্মকর্তারা বলছেন, রুশ সেনাদের হামলায় স্কুল ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছেন। রাশিয়ার জোরদার হামলার মুখে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

 

অবশ্য হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে এখনও পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। এছাড়া মারিউপোলের সাথে যোগাযোগ এখন খুবই কঠিন হওয়ায় স্কুলে রাশিয়ার হামলার দাবিটি বিবিসি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

 

এছাড়া রোববার পৃথক এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর তীব্র এই হামলা ও পাল্টা হামলার মধ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিউপোলের রাস্তায় লড়াই চলছে। এই পরিস্থিতিতে মারিউপোল শহরের রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মরদেহ। এছাড়া বহু বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আগুনে।

 

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মারিউপোল শহরের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। প্রায় ৩ লাখ বেসামরিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে শহর থেকে বের হতে পারেননি। অল্প কিছু বেসামরিক নাগরিক যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন তারা মারিউপোলের ভয়ানক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জানিয়েছেন, খাবার সরবরাহ ফুরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

 

ইউক্রেনীয় আইনপ্রণেতা ইয়ারোস্লাভ ঝেলজনিয়াকের বোনও কয়েকদিন আগে মারিউপোল শহর থেকে পালিয়ে যান। ঝেলজনিয়াক বিবিসিকে বলেন, ‘(রুশ আক্রমণ শুরুর) দুই সপ্তাহ পরে তাদের কোনো খাবার ছিল না। এছাড়া দোকানও বন্ধ ছিল। আর তাই সে (ঝেলজনিয়াকের বোন) জানিয়েছিল, চুরির মাধ্যমে কিছু খাবার জোগাড় করা বা না খেয়ে মারা যাওয়া; এই দু’টির মধ্যে একটিকে আমাদের বেছে নিতে হতো।

 

তিনি আরও বলেছেন, ‘মানুষ সবসময় ভয়ে থাকে যে কোনো বোমা, কোনো অস্ত্র বা কোনো বিস্ফোরণ তাদের হত্যা করবে। শহরের রাস্তায় রাস্তায় অনেক লাশ পড়ে আছে, অনেক বাড়ি-ঘরে আগুন লেগেছে, অনেক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি ভেতরে আশ্রিত মানুষসহ অনেক বোমা শেল্টার বা আশ্রয়কেন্দ্রও ধ্বংস হয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার মারিউপোল শহরটি দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর কাছেই অবস্থিত।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com