হাসিনা আকতার নিগার: ৩০’ মানুষের জীবনে বিশেষ একটা সংখ্যা। আয়ুর হিসাবে বলা যায় এটা মধ্য বয়সের সূচনালগ্ন। আর মনস্তাত্ত্বিকভাবে মেধা প্রজ্ঞা আর চিন্তাবোধের বিকাশ ঘটে ৩০ থেকেই। প্রবাদে আছে, ৩০ বছর বয়সে মানুষ নিজেকে বুঝতে ও জানতে পারে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের মূল উদ্দেশ্যকে সফল করার যাত্রা।
প্রবাদের কথার বাস্তবিক মিল পাওয়া যায় নারী পুরুষের যাপিত জীবনে। ৩০ পার করা পরপরই একজন নারী সামাজিক ও পারিবারিকভাবে অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে তার জীবনযাত্রায়। সংসার, সন্তান, কর্মক্ষেত্র সবটাই সামলায় দশভূজা হয়ে। কিন্তু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার মত সময় থাকে না নিজের হাতে। সবার ভালো থাকাতেই নিজের ভালো থাকার চেষ্টাই যেন হয় জীবনের ধ্যান জ্ঞান। এ হলো বাঙালী নারীর চিরাচরিত রূপ।
তারপর দিনের সকল কাজের শেষে আয়নাতে নিজেকে দেখে বিষন্ন হয়ে পড়ে। ভাবতে পারে না কেন তার ২০ বছরের সেই কোমলতা সিগ্ধতা নেই শরীরে। শরীরের প্রচন্ড ক্লান্তি দেখে নিজের মনের কোনে প্রশ্ন জাগে, ‘তবে কি ফুরিয়ে যাচ্ছে? ‘
এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে ৩০ বছর পরবর্তী নারীদের নিজের শরীরের বিশেষ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরী। আধুনিক নারীদের অনেকে হয়তো মনে করে পার্লারে গিয়ে কেবল ত্বক, মুখ আর চুলের যত্ন নিলেই নিজেকে ঠিক রাখা যায়। ধারণাটা ভুল। বরং এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় মনে রাখা উচিত বয়সের সাথে সাথে মানুষের শারীরিক কিছু পরিবর্তন আসে। সেখানে ৩০ পার হবার পরে ২০ বছরের মত দেখতে লাগবে তেমনটা আশা না করাই শ্রেয়।
সুতরাং বয়সের সাথে সাথে জীবনের সফলতাকে প্রস্ফুটিত করতে হলে অবশ্যই নিজের জন্য ভাবতে হবে। আর সে ভাবনাতে প্রথমেই লক্ষ্য দিতে হবে নিজের শরীরের প্রতি। সুস্থ শরীর সুস্থ মন। আর এর জন্য ৩০ বছর পরবর্তী নারীদেরকে শারীরিক বিষয় সচেতন হবার পাশাপাশি নিয়ম করে চলতে হবে অবশ্যই ।
সাধারণত দেখা যায় ৩০ এর পরে নারীদের শরীর খুব তাড়াতাড়ি মোটা হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। অনেক সময় ডায়েট করেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আসলে শুধুমাত্র খাবারের কারণে ফ্যাটি বা মোটা হয় তা কিন্তু নয়। এর পেছনে নানা কারণ থাকে। যেমন – দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করা, জন্ম নিরোধক পিল সেবন, হরমোন সমস্যা। মোটা হবার এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে দিনের কিছুটা সময় হাঁটার চেষ্টা করতে হবে। নিয়ম করে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা এ বয়সে প্রথম সচেতনতা শরীরের জন্য।
একদিকে মোটা হবার দুশ্চিন্তা অন্যদিকে শরীরের নানা জায়গাতে ব্যাথা বেদনা নিত্যদিনের সাথী হয়। বিশেষ করে ব্যাক পেইনের কথা প্রায় এ বয়সকালীন সকল নারীদের মুখে শোনা যায়। মূলত নারীদের হাড় এবং মাংস পেশীর ক্ষয় খুব দ্রুত হতে দেখা দেয়। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার অবশ্যই খেতে হবে। তার সাথে যে কাজটি জরুরি তা হলো ব্যায়াম।
শরীর মোটা, হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি দেখা যায় কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশার সমস্যা। এসব সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ব্যস্ত জীবনে হতে একটু সময় বের করে অন্তত বছরে দু একবার সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
কৈশোরে মাসিক বা ঋতু চক্রের মধ্য দিয়ে যে শারীরিক পরির্বতন ঘটে, তার আবার কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় বয়স ৩০ পার হবার পর। একজন নারীর এ বয়সে সাধারণত শারীরিক সম্পর্কে থাকে এবং সন্তানের জন্ম দেয়। কিংবা কেউ সন্তান নিতে চায়। তাই সন্তান নেবার ক্ষেত্রে ৪০ এর আগেই উপযুক্ত। সন্তানের জন্য এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
এ সময়ে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে নানা ভাবে। আবার ক্রমশ হরমোন উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। যার প্রভাব পড়ে ঋতুচক্র সহ শরীরের অন্য প্রক্রিয়াতে। যেমন – মোটা হয়ে যাওয়া, চর্মরোগ, যৌন সমস্যা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে হেলাফেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ক্যান্সার নামের আতংকিত রোগটি অনেক সময় নারীর শরীরের নীরবে দানা বাঁধে। একজন সচেতন নারীকে বছরে একবার হলেও প্যাপ টেস্ট করানো উচিত। একই সাথে স্তন ক্যান্সারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে নিজেই লক্ষ্য রাখতে হবে শরীরে কোন চাকা অনুভব করে কিনা। বা বিকৃত রঙের কোন গুটা বা চিহ্ন দেখলে চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে।
বয়সের সাথে সাথে শরীর নামের যন্ত্রটি বিগড়ে যাবে কিন্তু তাই বলে নিজেকে অসচেতন হলে চলবে না। একটু সচেতন হলেই বয়স থাকে নিজের মুঠোতে।
নারী মানেই সাজ সজ্জাতে মোহনীয় রূপ। সে রূপের ছটাতে প্রথমেই চোখ পড়ে মুখের লাবন্যতা, বাহারি চুল আর মৃসন ত্বকে। তাই ৩০ পেরোলেই নারীদের যত চিন্তা মুখ, চুল আর হাত পায়ের চামড়া নিয়ে। গায়ের রং কালো শ্যামলা বা ফর্সা যাই হোক না কেন তা টান টান আর দাগহীন রাখতে চায় সকলে। আর এ ক্ষেত্রে নিজের সতেজ রূপ লাবন্য ধরে রাখতে হলে একটু সচেতন হয়েই ব্যবহার করতে হবে প্রসাধনী।বয়স বুঝে করতে হবে রূপচর্চা। মনে রাখতে হবে বিজ্ঞাপনের মন ভুলানো কথা সবার বেলাতে প্রযোজ্য নয়।
তাই শরীরের বাহিক্য রূপকে বিকশিত করতে হলে সবার আগে আভ্যন্তরীণ কাঠামোকে ঠিক রাখতে হবে। ৩০ বছর পরবর্তী নারীদের জীবনের নতুন ধাপে শরীরে প্রতি সচেতনা ছাড়া গত্যন্তর নেই। নিয়ম করে চলাফেরা, খাবারের সঠিক নিয়ম আর সচেতনতা থেকেই আসবে প্রাণের উচ্ছ্বাস। আর সে উচ্ছ্বাসই প্রকাশিত হবে আপন ব্যক্তিত্বের সাজ সজ্জাতে।
লেখক: কলাম লেখক।
সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন