১৫ বছরেও শেষ হবে না গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার: ইউএনআরডব্লিউএ

ছবি সংগৃহীত

 

ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যা টানা ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। এই হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, এবং গাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে গাজায় যে মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তা পরিষ্কার করতে ১৫ বছর সময় লাগবে।ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এই তথ্য  জানিয়েছে ।

 

মঙ্গলবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে গাজা উপত্যকায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে ১৫ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (ইউএনআরডব্লিউএ)।

 

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) মূল্যায়নের বরাত দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, গাজার পরিচ্ছন্নতার জন্য ৪০ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করতে হবে। ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, বিভিন্ন অবকাঠামোর ধ্বংসাবশেষ গাজার মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে, কারণ এতে অবিস্ফোরিত অস্ত্র এবং ক্ষতিকারক বিভিন্ন পদার্থ থাকতে পারে।

 

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ অপসারণের জন্য ১০০টিরও বেশি ট্রাকের প্রয়োজন হবে এবং এতে খরচ হবে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। ইউএনইপি বলেছে, গাজার কিছু ধ্বংসাবশেষ অ্যাসবেস্টস দ্বারা দূষিত, যা বিষাক্ত এবং ক্যান্সারসহ ফুসফুসের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। গাজার ভবনগুলোর ধ্বংসাবশেষের নিচে বিপুল সংখ্যক মানুষের দেহাবশেষ চাপা পড়ে আছে।

 

২০১৪ সালের ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর গাজায় প্রায় ২৪ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সরানো হয়েছিল। কিন্তু এবার গাজা উপত্যকায় সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ ২০০৮ সাল থেকে গাজায় অন্যান্য সংঘাতের জেরে উৎপন্ন সমস্ত ধ্বংসাবশেষের সম্মিলিত যোগফলের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি বলে ইউএনইপি জানিয়েছে।

 

ইসরায়েলের নিরলস আগ্রাসনের কারণে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকটসহ গাজার বিস্তীর্ণ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গত মাসে সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরায়েলের আর্মি রেডিও বলেছিল, গত মাসের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজায় প্রায় ৫০ হাজার বোমা ফেলেছে এবং এর মধ্যে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার বোমা বিস্ফোরিত হয়নি।

 

ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) গত মে মাসে জানিয়েছিল, গাজার বাড়িঘর পুনর্নির্মাণে ২০৪০ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ইউএনডিপির আরব রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক আবদুল্লাহ আল-দারদারি বলেন, গাজার সামগ্রিক পুনর্গঠনের জন্য কমপক্ষে ৪০ বিলিয়ন থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে। তিনি আরও বলেন, ১৯৪৫ সাল থেকে এরকম কিছু দেখা যায়নি।

 

ইউএনডিপি ধারণা করছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা এতটাই প্রকট যে গাজায় মানব উন্নয়ন সূচক ৪০ বছর পিছিয়ে গেছে। আল-দারদারি বলেছেন, গত ৪০ বছরে গাজায় মানব উন্নয়নে হওয়া সমস্ত বিনিয়োগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা প্রায় ৮০-এর দশকে ফিরে গেছি।

সূএ:আল জাজিরার

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে ভারত: নীরব

» খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে

» ভিডিও বার্তায় মইন ইউ আহমেদ মুন্নি সাহার লাইভ বিডিআর বিদ্রোহ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে

» ক্ষমতায় গেলে দেশের সকল ফরম থেকে ধর্মালম্বী অপশন তুলে দেওয়া হবে—- ড. মঈন খান

» পলাশে হামলা ভাংচুরের পর বন্ধ হয়ে গেল জনতা জুটমিল, কর্মহীন হয়ে পড়েছে ৭ হাজার শ্রমিক

» বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার এক সপ্তাহ পরেও যে কারণে পর্যটক নেই

» হাতীবান্ধা রিপোর্টার্স ক্লাবের কমিটি গঠন সভাপতি মোস্তফা সম্পাদক রহিম

» ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইসলামপুর উপজেলা কার্যালয় উদ্বোধন

» এক্সিম ব্যাংকে ডাকাতি চেষ্টার অভিযোগে ১০ জন আটক

» ‘লুকিয়ে রাখা’ পুতিনের দুই ছেলের তথ্য ফাঁস!

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

১৫ বছরেও শেষ হবে না গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার: ইউএনআরডব্লিউএ

ছবি সংগৃহীত

 

ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যা টানা ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। এই হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, এবং গাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে গাজায় যে মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তা পরিষ্কার করতে ১৫ বছর সময় লাগবে।ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এই তথ্য  জানিয়েছে ।

 

মঙ্গলবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে গাজা উপত্যকায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে ১৫ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (ইউএনআরডব্লিউএ)।

 

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) মূল্যায়নের বরাত দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, গাজার পরিচ্ছন্নতার জন্য ৪০ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করতে হবে। ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, বিভিন্ন অবকাঠামোর ধ্বংসাবশেষ গাজার মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে, কারণ এতে অবিস্ফোরিত অস্ত্র এবং ক্ষতিকারক বিভিন্ন পদার্থ থাকতে পারে।

 

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ অপসারণের জন্য ১০০টিরও বেশি ট্রাকের প্রয়োজন হবে এবং এতে খরচ হবে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। ইউএনইপি বলেছে, গাজার কিছু ধ্বংসাবশেষ অ্যাসবেস্টস দ্বারা দূষিত, যা বিষাক্ত এবং ক্যান্সারসহ ফুসফুসের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। গাজার ভবনগুলোর ধ্বংসাবশেষের নিচে বিপুল সংখ্যক মানুষের দেহাবশেষ চাপা পড়ে আছে।

 

২০১৪ সালের ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর গাজায় প্রায় ২৪ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সরানো হয়েছিল। কিন্তু এবার গাজা উপত্যকায় সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ ২০০৮ সাল থেকে গাজায় অন্যান্য সংঘাতের জেরে উৎপন্ন সমস্ত ধ্বংসাবশেষের সম্মিলিত যোগফলের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি বলে ইউএনইপি জানিয়েছে।

 

ইসরায়েলের নিরলস আগ্রাসনের কারণে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকটসহ গাজার বিস্তীর্ণ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গত মাসে সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরায়েলের আর্মি রেডিও বলেছিল, গত মাসের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজায় প্রায় ৫০ হাজার বোমা ফেলেছে এবং এর মধ্যে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার বোমা বিস্ফোরিত হয়নি।

 

ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) গত মে মাসে জানিয়েছিল, গাজার বাড়িঘর পুনর্নির্মাণে ২০৪০ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ইউএনডিপির আরব রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক আবদুল্লাহ আল-দারদারি বলেন, গাজার সামগ্রিক পুনর্গঠনের জন্য কমপক্ষে ৪০ বিলিয়ন থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে। তিনি আরও বলেন, ১৯৪৫ সাল থেকে এরকম কিছু দেখা যায়নি।

 

ইউএনডিপি ধারণা করছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা এতটাই প্রকট যে গাজায় মানব উন্নয়ন সূচক ৪০ বছর পিছিয়ে গেছে। আল-দারদারি বলেছেন, গত ৪০ বছরে গাজায় মানব উন্নয়নে হওয়া সমস্ত বিনিয়োগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা প্রায় ৮০-এর দশকে ফিরে গেছি।

সূএ:আল জাজিরার

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com