ছবি সংগৃহীত
ডেস্ক রিপোর্ট :কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময় গত বছর ১৪ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হল থেকে বেরিয়ে যে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তা ‘আওয়ামী লীগের রাজাকার ন্যারেটিভ’ ভেঙে দিয়েছে এবং সেই রাতেই ‘বাংলাদেশের সবকিছু বদলে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে একথা বলেন তিনি।
সামান্তা শারমীন বলেন, ‘১৪ জুলাই পুরা বাংলাদেশের সবকিছু বদলায় গেছে, শুধুমাত্র ১৪ জুলাই রাতের জন্য— এটা আমাদেরকে বলতেই হবে। ১৪ জুলাই প্রত্যেকটা হলের মেয়েরা আওয়ামী লীগের একমাত্র ন্যারেটিভ রাজাকার.. একমাত্র ন্যারেটিভকে ভেঙে দিছে মেয়েরা। আমাদের আপ্রাইজিংয়ের বাঁকে বাঁকে অনেক ধরনের টার্নিং মোমেন্ট ছিল, যেখানে আসলে আমরা হয়তো হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম, আবার আমরা আপলিফট হয়েছি। কিন্তু আপ্রাইজিংয়ের পুরো ন্যারেটিভটা বদলায় দিছে.. এটার পুরোটার দিক নির্দেশনা দিছে হচ্ছে মেয়েরা— এটা আমাদেরকে বলতে পারতেই হবে এবং সেটা ঘটেছে ১৪ জুলাই।’
গত বছর ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ কোটা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা পাবে না তো রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি ‘আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলেছেন’— এই দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর তা দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৪ জুলাই গভীর রাতে রাজপথে নেমে আসেন রোকেয়া হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী। তাদের মুখে স্লোগান ছিলো ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’।
তবে, শেখ হাসিনা পরে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি করেছিলেন, তার মন্তব্যের প্রেক্ষাপট না বুঝে ভুলভাবে উপস্থাপন করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিক্ষোভ তৈরি করা হয়েছে। তিনি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলেননি। কিন্তু তাতে বিক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের পালে নতুন হাওয়া লাগে, সেটি সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয় আওয়ামী লীগ সরকার। অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা।
নারী দিবস সামনে রেখে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘নারীর লড়াই, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব ও সমাজের বাধা’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে প্রথম আলো। আলোচনায় অংশ নিয়ে এনসিপি নেতা সামান্তা বলেন, ‘আমি একেবারেই চাই না যে ফর সেক অব উইমেন পার্টিসিপেশন, কেউ হচ্ছে যোগ্যতা না থাকলেও কোথাও যাক— এটা আমি চাই না। এটা ক্লাউড এন্ড ক্লিয়ার— এটা আমি চাই না। তার মানে হচ্ছে আমাদের কাজ হচ্ছে মেয়েদেরকে যোগ্য করে তোলা… যত রকমের প্রসেস নেওয়া যায় এবং একদম ব্যক্তিগত পার্টিসিপেশন থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে শুরু করে যতভাবে মেয়েদেরকে এখানে পলিটিক্যালি গ্রুমিং করা যায়, পলিটিক্যালি এস্টাবলিশ করা যায় তাদের।
নারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থার করার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে সামান্তা বলেন, ‘এটা আমাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। এটা স্টেটের কাজ, এটা আমাদের করার কথা না। কিন্তু তারপরও যখন করতে হচ্ছে আমরা করব। কারণ, এটা যদি না করি তাহলে আবার দেখা যাবে আমরা পুরোনো গ্যারাকলে পড়ে যাচ্ছি। তো এই গ্যারাকলে আমরা আর পড়তে চাই না। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই যোগ্যতার ভিত্তিতে নারী নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। যোগ্য নয়, কিন্তু তারপরও বসিয়ে দিলে এটা আমাদের জন্য খুবই খুবই.. এটা লং টার্মে আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, যোগ্য করে তুলতে হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে বসাতে হবে।
সামান্তা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের আনাচকানাচে নারীদের কথা বলার জন্য এবং তাঁদের অভিজ্ঞতা শোনার জন্য নানা ধরনের আয়োজন দেখতে পাচ্ছি। এসব আয়োজন আমাদের নানা মাত্রায় নিতে হবে। আলোচনা-সমালোচনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, এর সঙ্গে রাজনীতিও গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের জাতিগত একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখানে সবার মধ্যে একধরনের বোধের জন্ম হয়েছে যে আমাদের একতা প্রয়োজন। এটি এখনো অস্পষ্ট, দৃশ্যমান হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার আপাতত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলে একে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছে। প্রতিটি সেক্টরের মধ্যে সংযোগের মাধ্যমে একতা গড়া প্রয়োজন। নারীদের ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সামান্তা বলেন, ‘মনোনয়নের মাধ্যমে যেসব নারী সংসদে আসছেন, তাঁরা নারী সমাজকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন না। বরং তাঁরা দলীয় স্বার্থকেই তুলে ধরেন। সংরক্ষিত ও মনোনীত নারী আসন আসলে নারী নেতৃত্ব তৈরির উল্টো পথ। সরাসরি মানুষের ভোটে জয়লাভ করে উঠে আসার মধ্যে দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাস কাজ করে।’