বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের শুনানির জন্যে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রয়েছে।
আজ বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজিবের সমন্বয়ে বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি শুনানির জন্য রয়েছে।
এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্যে হাইকোর্টের একই বেঞ্চের কার্যতালিকায় উঠেছিল।
হাইকোর্টের বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি কার্যতালিকায় মামলাটি শুনানির জন্য এক নম্বর ক্রমিকে ছিলো।
এরও আগে ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি ভবাণি প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। এরপরে এখন আবারও আপিলটি শুনানির জন্য উঠে হাইকোর্টের তালিকায়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। সিআইডি পুলিশ দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে। বিচারও একসঙ্গে শুরু হয়।
এরপর ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ মামলার রায় দেন। রায়ে চোরাচালানের ঘটনায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ১৪ জনকে মৃ্ত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি অস্ত্র আইনের পৃথক দুটি ধারায় ১৪ জনের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন ও সাত বছর করে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় বিচারিক আদালতের ৫১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
দুটি মামলার মধ্যে একটিতে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
বাবর, নিজামী ও পরেশ বড়ুয়া ছাড়া ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপ-পরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিন, অস্ত্র বহনকারী ট্রলারের মালিক হাজি সোবহান, চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান এবং অস্ত্র খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ।
তাদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া ও নুরুল আমিন পলাতক। ওই মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়। পরে ওই মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে।
২০১৮ সালের ২২ মার্চ ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথরেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি আলোচিত এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। হাইকোর্টের বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ অপারগতা প্রকাশ করেন।
সংশ্লিষ্ট কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাটি বিচারিক আদালতে চলাকালে বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ সেখানে বিচারক হিসেবে কয়েকদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফলে হাইকোর্টের বিচারপতি হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি তাকে এ মামলার শুনানির দায়িত্ব দিলে নৈতিক কারণ দেখিয়ে তিনি মামলাটি শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই নিয়মানুসারে মামলাটির নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। তারপর প্রধান বিচারপতি মামলাটির শুনানি করতে হাইকোর্টের নতুন বেঞ্চ গঠন করে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নতুন বেঞ্চে শুনানির জন্যে আসে।