২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবাস করা সেই আলোচিত মো. জালাল ওরফে জজ মিয়া অবশেষে হাইকোর্টে রিট করলেন। চাইলেন ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। তিনি বলেছেন, ‘সোমবার হাইকোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করা হয়েছে।
রিটে জজ মিয়া নাটকের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বোর্ড একটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন হুমায়ূন কবির। স্বরাষ্ট্র সচিব,আইজিপি, ঢাকার ডিসি এবং মতিঝিল ও সেনবাগ থানার ওসিকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে গত ১১ আগস্ট এ বিষয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান জজ মিয়া। যেখানে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক আইজিপি খোদাবক্স চৌধুরী, সাবেক এএসপি আব্দুর রশিদ, মুন্সি আতিকুর রহমান, সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিনসহ জড়িতদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা থেকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করে দিতে বলা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আইভি রহমানসহ নিহত হন ২৪ জন। আহত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
হামলার পরদিন রাজধানীর মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তড়িঘড়ি করে মামলা দুটি হস্তান্তর করেন সিআইডি পুলিশের কাছে।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান জোট সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. জালালকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়। তাকে জজ মিয়া নাম দিয়ে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সাজানো হয় ‘জজ মিয়া নাটক’।
দিনমজুর জজ মিয়াকে তার পুরো পরিবারের আজীবন ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার লোভ দেখায় সিআইডি। এ প্রস্তাবে রাজি হননি জজ মিয়া। এরপর তার ওপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন। সিআইডির কথামতো না চললে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানোর ভয় দেখানো হয়।
তাতেও রাজি না হলে জালাল ওরফে জজ মিয়াকে চোখ বেঁধে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যান জজ মিয়া। শেষ পর্যন্ত তিনি সিআইডির প্রস্তাবে রাজি হন।
জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ার পর সিআইডি অফিসে দীর্ঘদিন আদর-আপ্যায়নে রাখা জজ মিয়াকে। মুখস্থ করানো হয় জবানবন্দি। তার পরিবারকে পাঠানো হয় মাসোহারা। জজ মিয়াকে দিয়ে আদালতে গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এরপর আদালত জজ মিয়াকে কারাগারে পাঠায়।
২০০৭ সালে রাজনৈতিক পালাবদলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু হয়। নির্দোষ প্রমাণিত হন জজ মিয়া। ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই কারামুক্ত হন তিনি। এরপর এ মামলার সাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেন। তাতে ’জজ মিয়া নাটক’ সাজানোয় তিন সিআইডি কর্মকর্তার নাম উঠে আসে।
জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহ এবং মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে তিন সিআইডি কর্মকর্তাকে আসামি করে পল্টন মডেল থানায় মামলা হয় ২০০৯ সালের ৩০ মার্চ। গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিট দাখিলকারী কর্মকর্তা সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এরপর ওই তিন সিআইডি কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এছাড়া তাদের ২১ আগস্ট হামলার মূল মামলায় আসামি করা হয়। ১৪ বছর পর ২০১৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় ১৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
সূএ: ঢাকাটাইমস ডটকম