হেপাটাইটিস ভাইরাস

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. এম শমশের আলী  :লিভারের ক্ষতি সাধিত হলে রক্তে বিলিরুবিন নামক এক ধরনের পদার্থের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি ঘটে থাকে। বিলিরুবিন হলুদ জাতীয় পদার্থ যার আধিক্যের জন্য সারা শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে বিশেষ করে চোখ, হাত-পায়ের তালুতে এই হলুদ বর্ণ প্রাথমিক অবস্থাতে পরিলক্ষিত হয় এবং প্রস্রাব গাঢ় বর্ণ ধারণ করে থাকে। ভাইরাসের দ্বারা লিভার আক্রান্ত হলে, পিত্তথলিতে অথবা পিত্তনালিতে পাথর থাকলে প্রদাহ সৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ হয়ে থাকে। আরও যে সব কারণে জন্ডিস হয়ে থাকে তা হলো লিভার বা পিত্তনালিতে টিউমার বা ক্যান্সার জাতীয় অসুস্থতা, পিত্তনালি কৃমির দ্বারা বন্ধ হয়ে যাওয়া, পেনক্রিয়াস নামক গ্রন্থিতে ক্যান্সার জাতীয় অসুস্থতা, পিত্তথলির বা পিত্তনালির অপারেশনের জটিলতা ইত্যাদি। ভাইরাল ইনফেকশনের ফলে লিভারের প্রদাহ সৃষ্টির মাধ্যমে জন্ডিস হওয়ার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। অনেক ধরনের ভাইরাস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে থাকে। হেপাটাইটিস (লিভারের প্রদাহ) ভাইরাসই জন্ডিসের জন্য মূলত দায়ী তবে অন্যান্য অনেক ভাইরাস হালকা ধরনের জন্ডিস সৃষ্টি করতে পারে। এ পর্যন্ত ৫ ধরনের হেপাটাইটিস ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে যাদের  A, B, C, D এবং E এভাবে নামকরণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে হেপাটাইটিস A ভাইরাস ও হেপাটাইটিস E ভাইরাস পানি বা খাদ্যের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে অসুস্থতার সৃষ্টি করে থাকে। অন্য ৩টি হেপাটাইটিস ভাইরাস যেমন B, C ও D ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে থাকে। সাধারণভাবে ইনজেকশন দেওয়ার সময় অন্যের শরীরে ব্যবহৃত সুই ব্যবহার করলে, কারও রক্তে ভাইরাস আছে এমন ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, কারও রক্ত জখমে লেগে গেলে। অন্যের ব্যবহৃত রেজার বা টুথব্রাশ ও দাঁত পরিষ্কার করার যন্ত্র ব্যবহার করলে। ট্যাটু বা উল্কি করার সুইয়ের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ সম্পর্ক করলে, ঝগড়া ফ্যাসাদের সময় কাউকে কামড়ে দিলে।

 

আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে গর্ভজাত সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে মারাত্মক এইডস ভাইরাসও ঠিক একই পদ্ধতিতে ছড়িয়ে থাকে। হেপাটাইটিস A ও E ভাইরাস স্বাভাবিকভাবে শিশু কালেই বেশি হয়ে থাকে। A ভাইরাস সাধারণ ধরনের জন্ডিস করে থাকে যা অল্প সময়ের মধ্যে রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য হয়ে যায়। তবে E ভাইরাস গঠিত জন্ডিস অনেক সময়ই মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং দীর্ঘ সময় বিদ্যমান থাকে। অনেক সময়ই E ভাইরাস জটিল আকার ধারণ করে বিশেষ করে  প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায়।

 

লেখক: চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।   সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মব করে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার সুযোগ নেই: সেনাসদর

» আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে, আলেমদের সতর্ক থাকতে হবে: মাহমুদুর রহমান

» এবার দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম

» দেশের লাভ হলে বিদেশিদের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দিতে সমস্যা নেই: সাখাওয়াত হোসেন

» সকল সাংবাদিকদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়: তথ্য উপদেষ্টা

» ডাকসু নির্বাচনে ২ হাজারের বেশি পুলিশ, সোয়াট টিম, ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত : ডিএমপি কমিশনার

» বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রিভোর ‘মেগা ক্যাশব্যাক’ অফার

» পাওনা টাকা পরিশোধের কথা বলে, যুবককে ডেকে নিয়ে গলাকেটে  হত্যা চেষ্টা, গ্রেফতার ২ 

» বনপাড়া শহর তৃনমুল নেতা-কর্মীদের সাথে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের মতবিনিময় 

» সেরা নারী চিফ টেকনোলজি অফিসার অ্যাওয়ার্ড জিতলেন ব্র্যাক ব্যাংকের নুরুন নাহার বেগম

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হেপাটাইটিস ভাইরাস

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. এম শমশের আলী  :লিভারের ক্ষতি সাধিত হলে রক্তে বিলিরুবিন নামক এক ধরনের পদার্থের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি ঘটে থাকে। বিলিরুবিন হলুদ জাতীয় পদার্থ যার আধিক্যের জন্য সারা শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে বিশেষ করে চোখ, হাত-পায়ের তালুতে এই হলুদ বর্ণ প্রাথমিক অবস্থাতে পরিলক্ষিত হয় এবং প্রস্রাব গাঢ় বর্ণ ধারণ করে থাকে। ভাইরাসের দ্বারা লিভার আক্রান্ত হলে, পিত্তথলিতে অথবা পিত্তনালিতে পাথর থাকলে প্রদাহ সৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ হয়ে থাকে। আরও যে সব কারণে জন্ডিস হয়ে থাকে তা হলো লিভার বা পিত্তনালিতে টিউমার বা ক্যান্সার জাতীয় অসুস্থতা, পিত্তনালি কৃমির দ্বারা বন্ধ হয়ে যাওয়া, পেনক্রিয়াস নামক গ্রন্থিতে ক্যান্সার জাতীয় অসুস্থতা, পিত্তথলির বা পিত্তনালির অপারেশনের জটিলতা ইত্যাদি। ভাইরাল ইনফেকশনের ফলে লিভারের প্রদাহ সৃষ্টির মাধ্যমে জন্ডিস হওয়ার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। অনেক ধরনের ভাইরাস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে থাকে। হেপাটাইটিস (লিভারের প্রদাহ) ভাইরাসই জন্ডিসের জন্য মূলত দায়ী তবে অন্যান্য অনেক ভাইরাস হালকা ধরনের জন্ডিস সৃষ্টি করতে পারে। এ পর্যন্ত ৫ ধরনের হেপাটাইটিস ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে যাদের  A, B, C, D এবং E এভাবে নামকরণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে হেপাটাইটিস A ভাইরাস ও হেপাটাইটিস E ভাইরাস পানি বা খাদ্যের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে অসুস্থতার সৃষ্টি করে থাকে। অন্য ৩টি হেপাটাইটিস ভাইরাস যেমন B, C ও D ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে থাকে। সাধারণভাবে ইনজেকশন দেওয়ার সময় অন্যের শরীরে ব্যবহৃত সুই ব্যবহার করলে, কারও রক্তে ভাইরাস আছে এমন ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, কারও রক্ত জখমে লেগে গেলে। অন্যের ব্যবহৃত রেজার বা টুথব্রাশ ও দাঁত পরিষ্কার করার যন্ত্র ব্যবহার করলে। ট্যাটু বা উল্কি করার সুইয়ের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ সম্পর্ক করলে, ঝগড়া ফ্যাসাদের সময় কাউকে কামড়ে দিলে।

 

আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে গর্ভজাত সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে মারাত্মক এইডস ভাইরাসও ঠিক একই পদ্ধতিতে ছড়িয়ে থাকে। হেপাটাইটিস A ও E ভাইরাস স্বাভাবিকভাবে শিশু কালেই বেশি হয়ে থাকে। A ভাইরাস সাধারণ ধরনের জন্ডিস করে থাকে যা অল্প সময়ের মধ্যে রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য হয়ে যায়। তবে E ভাইরাস গঠিত জন্ডিস অনেক সময়ই মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং দীর্ঘ সময় বিদ্যমান থাকে। অনেক সময়ই E ভাইরাস জটিল আকার ধারণ করে বিশেষ করে  প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায়।

 

লেখক: চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।   সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com