সমালোচনাকারীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা নাই নাই, গেল গেল, হায় হায় করে বেড়াচ্ছে— এই হায় হায় পার্টি হায় হায় করতে থাকুক। মাঝে মাঝে তো একটু তাদের বলতে দিতে হবে। আর আমরা আমাদের কাজ করে যাই, দেশ এগিয়ে যাক। রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২’ উদযাপন এবং ‘জাতীয় মৎস্য পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ এগিয়ে যাবে, জনগণের ওপর আমাদের ভরসা আছে। জনগণ আমাদের পাশে আছে। বাংলাদেশকে জাতির পিতাই তো বলে গেছেন, কেউ দাবায় রাখতে পারবা না। কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। পদ্মা সেতুতে বাধা দিয়েছিল সে বাধা অতিক্রম করে এই সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করে বিশ্বকে আমরা এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি যে বাংলাদেশ পারে। আমরাও পারি। সবাই মাছে ভাতে, সবাই সুস্থ থাকুন। সুন্দর জীবন হোক। এই মৎস্য প্রক্রিয়াজাত করা বা এদিকে সবাই এগিয়ে আসুন।
তিনি বলেন, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। এই মাছে ভাতে বাঙালি হিসেবেই যেন আমরা থাকতে পারি। এখন মাছের কাটা একটা সমস্যা। অনেকে মাছ খেতে চায় না। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত করলে এই কাটা কিন্তু নরম করে ফেলা যায় এবং খাওয়া যায়। সেটা খুব বেশি কঠিন না, এমনকি ঘরে ঘরে করতে পারেন। আপনারা যদি প্রেসার কুকারে মাছ এক ঘণ্টা ১০ মিনিট সেদ্ধ করেন, মাছের কিন্তু কাটা নরম হয়ে যায়। মাছ মাছের মতোই থাকবে কিন্তু কাটা নরম হয়ে যাবে। আপনারা সেটা বাচ্চাদেরও খাওয়াতে পারবেন। এতে কোনো অসুবিধা হয় না। কাজেই এটা কিন্তু আমরা করি। একটু রেসিপিও দিয়ে দিলাম সঙ্গে। যাতে আপনাদের ঘরে কাটার সমস্যাটা না থাকে। বিশেষ করে ইলিশ মাছে একটু বেশি সময় লাগে, সমুদ্রের মাছ। অন্যান্য মাছ আরও কম সময়ে হয়ে যায়।
সরকার প্রধান বলেন, আমি বলছি যেটা ওটা হলো ঘরে। কিন্তু আমরা যদি এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রি করি, এই যে প্রেসার দিয়ে মাছের কাটাগুলো নরম থাকবে, মাছ যেমন আছে তেমনই থাকবে। সেইভাবে যদি আমরা টিনজাত করতে পারি, প্রক্রিয়াজাত করতে পারি এবং দেশে-বিদেশে রপ্তানি করতে পারি, পৃথিবীর বহু দেশ এই মাছ কিন্তু নেবে। মাছের বিভিন্ন পণ্য আমরা তৈরি করে রপ্তানি করতে পারব। আমি মনে করি, আমাদের নতুন প্রজন্ম, তারা আরও এগিয়ে আসবে। তাতে কর্মসংস্থান যেমন হবে, দেশে বেকারত্ব দূর হবে। সেই সঙ্গে সঙ্গে দেশও রপ্তানিযোগ্য পণ্য পাবে। আর দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও মিটবে। কাজেই সেভাবেই আমাদের দেশকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই যে সমুদ্রসীমায় বিশেষ করে সি-ইড এটা কিন্তু অনেক মূল্যবান একটা সম্পদ। এটা যত বেশি উৎপাদন করতে পারব, বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। আমাদের দেশেও চাহিদা বাড়ছে। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যে ঝিনুক, একসময় আমাদের মেঘনা নদীতে পিং পার্ল হতো। সেটা নিয়েও গবেষণা আমরা করছি। কিন্তু সেটা খুব বেশি একটা সাফল্যে আসতে পারছে না। সেদিকটা আরেকটু নজর দেওয়া দরকার। যদিও আমাদের খুব বড় সাইজের আসে না, আমাদের ঝিনুক অনেক ছোট। কিন্তু আমাদের রাইস পার্ল যেটা এটারও কিন্তু অনেক মূল্য আছে। এটা আমাদের খুব ভালো একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। কাজেই সেদিকেও একটু দৃষ্টি দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার-কুয়াকাটাসহ সমুদ্র এলাকায় যেখানে মানুষ নেট দিয়ে চিংড়ির পোনা আহরণ করে, এটা বন্ধ করতে হবে। সেই সব জায়গায় হ্যাচারি তৈরি করে দিতে হবে। কারণ কক্সবাজারে হ্যাচারি ছিল না, আমরা এসে সেখানে হ্যাচারি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মনে হয় এই দিকটায় একটু বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। শুধু চিংড়ির পোনা উৎপাদন করলে হবে না। সেটা যেন স্বাস্থ্যসম্মতভাবে, যেখানে চিংড়ির চাষ হয় সেই সব এলাকায় যেন পৌঁছে যেতে পারে। কারণ আমাদের বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা- খুলনা বিভাগে ভালো ভালো চিংড়ি উৎপাদন হয়। মিঠা পানিতেও আমাদের চিংড়ি যথেষ্ট হয়।
সবাইকে মৎস্য উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি সবাই যার যেখানে জলাধার আছে, যার যেখানে একটু জলাধার আছে সেখানে আপনারা মাছের চাষ করেন। খুব স্বাভাবিকভাবে তারা খেতে পারে কিন্তু আপনার নিজেরও লাভ হবে। মাছে ভাতে বাঙালি এইভাবেই আমাদের জীবনটা আরও উন্নত হোক— এই আকাঙ্ক্ষা আমি করি।