সংগৃহীত ছবি
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদ এখনো মাঠে সক্রিয় রয়েছে। এর দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে ‘স্বৈরাচার থেকে ফ্যাসিবাদ, মুজিব থেকে হাসিনা : ফ্যাসিবাদ ফিরে আসায় হুমকি ও বিপ্লব রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মাহমুদুর রহমান।
এ সময় মাহমুদুর রহমান বলেন, দেশে একজন ফ্যাসিস্ট পলায়ন করেছেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো সক্রিয়। তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিটকে বিনষ্ট করার জন্য নানাভাবে চক্রান্ত করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত চিহ্নিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিতপূর্বক মূলোৎপাটন করা।
তিনি আরও বলেন, হাসিনার ফ্যাসিবাদের আইকন ছিল মুজিব। হাসিনার ফ্যাসিবাদী টার্মগুলো নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কে কারা দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল সেটা খুঁজে বের করতে হবে। একাত্তর থেকে পচাত্তরের ইতিহাস ঘাটলে দেখতে পাই মুজিব ও তার পোষ্য সন্ত্রাসীরা কীভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যা শুরু করেছিল। সেই হত্যার প্রথম শিকার সিরাজ শিকদার। দেশের ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি যিনি সিরাজ শিকদারকে হত্যা করার পর সংসদে গিয়ে দম্ভ করেছিল।
স্টেট টেরোরিজম এর উত্থানকারী মুজিব উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের ভাষা বাবার থেকে শেখা। এই দেশে কারচুপির ভোট শুধু হাসিনা করেছে এমনটি নয়। প্রথম ভোট কারচুপি বাকশাল কায়েমের মধ্যদিয়ে গণহত্যার পথ তৈরি করেছিল মুজিব। স্ট্রেট টেরোরিজম তার হাতেই প্রথম উত্থান হয়েছিল। দেশে সন্ত্রাসবাদ কায়েমের জন্য তিনি রক্ষি বাহিনী গঠন করেছিল। আর এই অপকর্মের সঙ্গী ছিল শেখ মনি। তার ভাষা এমন ছিল যে, ‘দেশে আইনের নয় মুজিবের শাসন চাই’। এভাবে মুজিব ও তার অনুসারীরা দেশে ফ্যাসিবাদের পথ রচনা করেছিল।
মুজিব গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কেড়ে নিয়েছিল বলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম একদলীয় শাসন করেছিল মুজিব। তখনকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে এনেছিল তিনি। সবগুলো পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে মাত্র ৪টি পত্রিকা তিনি চালু রেখেছিল শুধুমাত্র মুজিব বন্দনার জন্য। শেখ হাসিনার ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকালকেও হার মানিয়েছিল মুজিবের সাড়ে তিন বছরের শাসনকাল। বিপ্লবত্তোর বাংলাদেশে আমাদের প্রধান কাজ হতে হবে ফ্যাসিবাদের আইকনকে ছুড়ে ফেলা। দেশের একজন ফ্যাসিস্ট ভারতের দালাল গেছে কিন্তু ফ্যাসিবাদ নির্মূল হয়নি। ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি রাখার আহ্বান জানান।
ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়ায়ের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একজন ভাল নাগরিক হতে হলে একজন ভারতবিরোধী মানুষ হতে হবে। আমাদের ভাবনার মধ্যে রাখতে হবে ভারত আমাদের জাতশত্রু। তাদের সাথে ব্যবসা, পড়াশোনার বিষয়ে সমঝোতা থাকলেও তাদের বিরোধীতার কথাটি ভুললে চলবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের ত্রুটি তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি বিপ্লবী সরকার যেমন হওয়া উচিত বিদ্যমান সরকারের মধ্যে তার প্রতিফলন নেই। এত বড় বিপ্লবের পর কীভাবে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ব্যাংকে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তারা নিরুঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে। কীভাবে এই বিপ্লবী সরকার গঠনের পর তারা নিরুঙ্কুশ বিজয় লাভ করতে পারে। বাংলাদেশের আর্থিক খাত খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জোন। এই জোনে তাদের দোসরদের বসিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বাইরে পাচার করেছে আওয়ামী দোসররা। আমরা এখনো ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনকারীদের যদি নির্মূল না করতে পারি সেটা হবে আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। অর্থনৈতিক খাত ভেঙে পড়লে বিপ্লব বেহাত হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
সভায় আমার বাংলাদেশ পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জবান ম্যাগাজিনের সম্পাদক রেজাউল করিম রনি, শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আতিয়া রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন