হার্টে ব্লক : ওষুধ কতদিন খাবেন?

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. মাহবুবর রহমান :হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানান ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকে অ্যাটাককে স্ট্রোক বলে থাকেন। আসলে স্ট্রোক হলো মস্তিষ্ক বা ব্রেনের রোগ। যার জন্য প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগের প্রকাশ ঘটে থাকে।

 

মোদ্দা কথায়, হার্ট অ্যাটাক মানে হলো হার্টের কোনো না কোনো রক্তনালি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া। ফলে হার্টের মাংসপেশির যে অংশ উক্ত রক্তনালির মাধ্যমে অক্সিজেন পেত তা দ্রুত ধ্বংস হতে শুরু করে। রক্তনালির ব্লকটি অপসারণ করতে না পারলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হার্টের ওই অংশটির মৃত্যু ঘটে।

এতে দুটো ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। ১। রোগীর আশু মৃত্যু ঘটতে পারে, ফুসফুসে পানি জমে তীব্র শ্বাসকষ্ট বা প্রকট হার্ট ফেইল্যুর হতে পারে। ২। হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক হার্ট ফেইল্যুরের জন্ম দিতে পারে। বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যাবে, আর যতদিন রোগী বেঁচে থাকবেন ততদিন এক যন্ত্রণাকাতর জীবনযাপন করতে হবে।

 

এবারে আসি হার্টের কী কী ওষুধ অবিরামভাবে খেয়ে যেতে হবে এবং কেন খেতে হবে সে সম্পর্কে কিছু বলি। হার্টের রক্তনালির দেয়ালে বিভিন্ন কারণে চর্বি জমে নালি সরু হতে থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ধূমপানসহ তামাকজাত দ্রব্য, নিয়মিত ব্যায়াম না করা, অতিরিক্ত ওজন, চর্বিযুক্ত প্রাণিজ মাংস ভক্ষণ, রাত জাগা, অতিরিক্ত টেনশন করা ইত্যাদি কারণে রক্তনালির চর্বি ফেটে যেতে পারে।

 

চর্বির দলা ফেটে গেলে সেখানে রক্তের অনুচক্রিকা (Platelets) এসে রক্ত জমাট বাঁধতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে চর্বির দলা একটি রক্তের দলায় পরিণত হয়ে পুরো রক্তনালি বন্ধ করে দেয়। তখনই রোগী বুকে চাপ, ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, আতঙ্ক ইত্যাদি উপসর্গে আক্রান্ত হয়।

প্রতিরোধের উপায় : 

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে হলে উপরে বর্ণিত রোগ এবং ঝুঁকির প্রবণতাগুলো দূর করতে হবে। আর যদি ওষুধের প্রশ্ন আসে তাহলে হার্ট অ্যাটাক, রিং লাগানো বা বাইপাস সার্জারির পর দুটো ওষুধ অবিরামভাবে, প্রয়োজনে সারা জীবন খেয়ে যেতে হবে।

 

একটি হলো চর্বির  দলা প্রতিরোধ, আরেকটি হলো অনুচক্রিকা প্রতিরোধ, যাতে রক্তকে জমাট করতে না পারে। চর্বির দলা প্রতিরোধে স্ট্যাটিন জাতীয়  ওষুধ এবং রক্তজমাট প্রতিরোধে রক্ত পাতলা করার ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মতো অবিরামভাবে খেয়ে যেতে হবে। তাই এসব নিয়ে সচেতন হতে হবে।

 

লেখক : সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» এসির আউটডোর ইউনিট কোথায় লাগালো উচিত?

» ফ্যাসিস্ট সরকার ১৬ বছর ঈদ করতে দেয়নি: এ্যানি

» ভার্চুয়ালি ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমান

» মায়ের হঠাৎ অসুস্থতার খবরে দেশে আসলেন কোকোর স্ত্রী

» শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য তামিমদের ক্যাম্প শুরু ঈদের পরই

» জুলাই-আগস্টে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচার হতেই হবে : জামায়াত আমির

» আগামীতে আরও বড় পরিসরে ঈদ উৎসবের আয়োজন করা হবে : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

» নতুন বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

» বাসের সঙ্গে মিনিবাসের সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজন নিহত

» জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করলেন প্রধান উপদেষ্টা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হার্টে ব্লক : ওষুধ কতদিন খাবেন?

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. মাহবুবর রহমান :হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানান ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকে অ্যাটাককে স্ট্রোক বলে থাকেন। আসলে স্ট্রোক হলো মস্তিষ্ক বা ব্রেনের রোগ। যার জন্য প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগের প্রকাশ ঘটে থাকে।

 

মোদ্দা কথায়, হার্ট অ্যাটাক মানে হলো হার্টের কোনো না কোনো রক্তনালি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া। ফলে হার্টের মাংসপেশির যে অংশ উক্ত রক্তনালির মাধ্যমে অক্সিজেন পেত তা দ্রুত ধ্বংস হতে শুরু করে। রক্তনালির ব্লকটি অপসারণ করতে না পারলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হার্টের ওই অংশটির মৃত্যু ঘটে।

এতে দুটো ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। ১। রোগীর আশু মৃত্যু ঘটতে পারে, ফুসফুসে পানি জমে তীব্র শ্বাসকষ্ট বা প্রকট হার্ট ফেইল্যুর হতে পারে। ২। হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক হার্ট ফেইল্যুরের জন্ম দিতে পারে। বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যাবে, আর যতদিন রোগী বেঁচে থাকবেন ততদিন এক যন্ত্রণাকাতর জীবনযাপন করতে হবে।

 

এবারে আসি হার্টের কী কী ওষুধ অবিরামভাবে খেয়ে যেতে হবে এবং কেন খেতে হবে সে সম্পর্কে কিছু বলি। হার্টের রক্তনালির দেয়ালে বিভিন্ন কারণে চর্বি জমে নালি সরু হতে থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ধূমপানসহ তামাকজাত দ্রব্য, নিয়মিত ব্যায়াম না করা, অতিরিক্ত ওজন, চর্বিযুক্ত প্রাণিজ মাংস ভক্ষণ, রাত জাগা, অতিরিক্ত টেনশন করা ইত্যাদি কারণে রক্তনালির চর্বি ফেটে যেতে পারে।

 

চর্বির দলা ফেটে গেলে সেখানে রক্তের অনুচক্রিকা (Platelets) এসে রক্ত জমাট বাঁধতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে চর্বির দলা একটি রক্তের দলায় পরিণত হয়ে পুরো রক্তনালি বন্ধ করে দেয়। তখনই রোগী বুকে চাপ, ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, আতঙ্ক ইত্যাদি উপসর্গে আক্রান্ত হয়।

প্রতিরোধের উপায় : 

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে হলে উপরে বর্ণিত রোগ এবং ঝুঁকির প্রবণতাগুলো দূর করতে হবে। আর যদি ওষুধের প্রশ্ন আসে তাহলে হার্ট অ্যাটাক, রিং লাগানো বা বাইপাস সার্জারির পর দুটো ওষুধ অবিরামভাবে, প্রয়োজনে সারা জীবন খেয়ে যেতে হবে।

 

একটি হলো চর্বির  দলা প্রতিরোধ, আরেকটি হলো অনুচক্রিকা প্রতিরোধ, যাতে রক্তকে জমাট করতে না পারে। চর্বির দলা প্রতিরোধে স্ট্যাটিন জাতীয়  ওষুধ এবং রক্তজমাট প্রতিরোধে রক্ত পাতলা করার ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মতো অবিরামভাবে খেয়ে যেতে হবে। তাই এসব নিয়ে সচেতন হতে হবে।

 

লেখক : সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।

সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com