মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে শিশুরা:রাজধানী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক মাঠ। ২ কোটি মানুষের এ মেগা সিটিতে শ্বাস নেওয়ার মতো জায়গা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। শিশু ও কিশোরদের খেলার জায়গা না থাকায় তারা কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে। গত দুই দশকে রাজধানী থেকে হারিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক মাঠ। চলতি শতকের শুরুতেও নগর কর্তৃপক্ষের অধীনে মাঠ ছিল ৬৮টি।
বর্তমানে দুই সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন মাঠ ২০টি। সে হিসেবে রাজধানী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে অন্তত ৪৮টি মাঠ। ২০০৩ সালে রাজধানীর খেলার মাঠ ও পার্ক বেদখলের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিট করেছিল বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পক্ষ থেকে ২০০৪ সালে একই বিষয়ে আরেকটি রিট হয়। এ দুই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর ৬৮টি খেলার মাঠ ও পার্কের জায়গা ১৫ দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। এ আদেশ পালনে গত দুই দশকে কোনো অগ্রগতি নেই। বরং একের পর এক মাঠ বেদখল হয়ে বাজার, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়সহ নানা স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধীন মাঠ ছাড়া আরও অন্তত ২০০ স্থান মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ২০১৯ সালে করা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের জরিপে উঠে আসে, কয়েক বছর আগেও ঢাকায় মাঠের সংখ্যা ছিল ২৩৫। এর মধ্যে ১৪১টি প্রাতিষ্ঠানিক মাঠ, যেগুলো ওই প্রতিষ্ঠানের কম্পাউন্ডের ভিতরে অবস্থিত। অর্ধশতাধিক জায়গা ছিল ব্যক্তিমালিকানাধীন। এসব খোলা জায়গা শিশুরা মাঠ হিসেবে ব্যবহার করত। পরে সেসব জায়গায় অট্টালিকা গড়ে ওঠে। ৪২টির মতো মাঠ ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত।
এর মধ্যে আবার ১৬টি বেদখল হয়ে পড়েছে। ফলে এখন রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ও আওতাবহির্ভূত উন্মুক্ত মাঠ আছে মাত্র ২৪টি। রাজধানীতে পর্যাপ্ত মাঠ বা খেলাধুলার জায়গা না থাকায় তা শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। মানসিকভাবে তাদের প্রতিবন্ধী করে তুলছে। এ বিষয়টি মনে রেখে যে মাঠগুলো এখনো টিকে আছে সেগুলো রক্ষার ও বেদখল হয়ে যাওয়া মাঠগুলো পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে।