হবু মায়ের ব্যায়াম | প্রেগনেন্সিতে ফিটনেসের জন্য ব্যায়াম করা কতটা জরুরি?

খুব বেশি দিন আগের কথা না, যখন প্রেগনেন্সির সময় হবু মায়েরা ব্যায়াম করা বন্ধ করে দিতেন, এমন কী শারীরিক কাজকর্ম থেকে দূরে থাকতেন। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। গবেষণায় জানা গেছে, প্রেগনেন্সিতে যারা ব্যায়াম করেন, তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা কম হয় এবং প্রসবকালীন সময় সহজ হয়। অনাগত সন্তানকে নিয়ে হবু মায়েদের চিন্তার যেন শেষ নেই। এই সময়ে ব্যায়াম মায়েদের ফিজিক্যাল ফিটনেসের পাশাপাশি স্ট্রেস কমিয়ে রিল্যাক্স থাকতেও সাহায্য করে। হবু মায়ের ব্যায়াম তাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। প্রেগনেন্সিতে ফিজিক্যাল ও মেন্টাল ফিটনেসের জন্য হবু মায়েরা কীভাবে ব্যায়াম করবেন এবং কী কী সতর্কতা মেনে চলবেন, সেটা জেনে নিন এখনই।

প্রেগনেন্সিতে ব্যায়াম করার বেনিফিটস

প্রেগনেন্সিতে ফিটনেসের জন্য ব্যায়াম করা কতটা জরুরি, সেটা অনেকেই জানেন না! চলুন এক নজরে দেখে নেই সেগুলো-

  • মা ও শিশুর দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়
  • পিঠের ব্যথা কমাতে ব্যায়াম খুব ভালো ভূমিকা রাখে
  • কোমর, পা ইত্যাদি ব্যথার উপশমে সাহায্য করে
  • শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট, লিগামেন্ট, মাংসপেশীকে শিথিল করে
  • প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস বা GDM রোধ করে
  • ফিজিক্যাল ফিটনেস বাড়ায়
  • দৈনন্দিন কাজ করার সক্ষমতা বাড়ায়
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি থেকে বাঁচায়
  • পরিপূর্ণ ও গভীর ঘুমে সাহায্য করে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি দূর করে
  • হাত-পা ফুলে যাওয়া রোধ করে
  • এনার্জি বাড়ায়
  • মুড ভালো থাকে, এই সময় মায়েদের খুব বেশি মুড সুয়িং হয়
  • পিঠ বেঁকে সামনে ঝুঁকে যাওয়া প্রতিরোধ করে
  • অতিরিক্ত ওজন বহন করার জন্য মাংসপেশির শক্তি ও সামর্থ্য বাড়ে
  • নরমাল ডেলিভারি হবার সম্ভাবনা বাড়ে
  • ডেলিভারির পর শরীর দ্রুত পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে

হবু মায়ের ব্যায়াম ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

 

ব্যায়াম শুরুর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। নানা কারণে চিকিৎসক আপনাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলতে পারেন, সে সময় ব্যায়াম করা যাবে না। দেখে নিন কীভাবে ঘরে বসেই এই কাজটি সহজেই আপনি করতে পারেন।

১) ব্যায়াম শুরু করার আগে ওয়ার্ম আপ এবং পরে স্ট্রেচিং করে নিতে হবে।

 

২) সাধারণত যারা সবসময় ব্যায়াম করেন, তারা মোটামুটি সব ব্যায়াম করতে পারবেন। তবে এ সময় নতুন ব্যায়াম শুরু না করাই ভালো।

৩) আপনি যদি আগে থেকেই হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়ামে অভ্যস্ত থাকেন, তবে তা চালিয়ে নিতে পারেন। তবে পেটের ওপর চাপ পড়ে এমন কোনো ব্যায়াম করা যাবে না। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, যিনি প্রেগনেন্সিসময়কালীন ব্যায়াম সম্পর্কে জানেন এমন কারও কাছে পরামর্শ নিতে পারেন।

 

৪) ব্যায়ামের সময় হালকা ও ঢিলেঢালা আরামদায়ক সুতির পোশাক পরুন। পায়ের জুতা নরম ও মাপমতো হওয়া উচিত।

 

৫) প্রথমে খানিকটা হালকা ধরনের ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন। হাঁপিয়ে ওঠার মতো বা কষ্টকর ব্যায়াম দরকার নেই। প্রয়োজনে গতি কমান। অস্বস্তি, খারাপ লাগা থাকলে ব্যায়াম বন্ধ করুন।

 

৬) ব্যায়ামের দুই ঘণ্টা আগে দুই গ্লাস পানি পান করবেন, ১৫ মিনিট পরও দুই গ্লাস।

 

৭) ধীরে ধীরে অবস্থান পরিবর্তন করুন, যেন ভারসাম্য না হারায়। ব্যায়াম শেষে হালকা হাঁটাহাঁটি করুন, তারপর কিছুটা বিশ্রাম নিন।

৮) মনে রাখবেন এটা ওজন কমানোর সময় না। এই সময় ব্যায়াম আপনাকে এবং আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। তাই বেশ সর্তকতার সাথে কী ধরনের ব্যায়াম করবেন সেটা সিলেক্ট করতে হবে।

কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন?

২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যায়াম করাই এই সময়ে যথেষ্ট। অতিরিক্ত ব্যায়াম শিশু এবং মায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

 

কখন ব্যায়াম করা নিষেধ?

১) উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, হৃদপিন্ড ও ফুসফুসের রোগ, গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ, গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা বা প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে ব্যায়াম নিষেধ।

 

২) আগে গর্ভপাত হওয়ার ইতিহাস থাকলেও ঝুঁকি নেবেন না।

 

৩) জিমন্যাস্টিক, হকি, কারাতে, সাইক্লিং, নেট বল প্র্যাকটিস বা পাহাড়ে ওঠা জাতীয় পরিশ্রম এই সময়ে করা যাবে না।

হবু মায়ের ব্যায়াম নিয়ে সর্তকতা

ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে আপনার গাইনী ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন আপনার হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি কিনা কিংবা কোনো জটিলতা আছে কিনা!

 

এক এক ট্রাইমেস্টারের জন্য ব্যায়াম যেমন আলাদা, তেমনি সবার শরীরও একই ব্যায়াম করতে পারদর্শী না। তাই জেনে বুঝে আপনার ব্যায়ামের তালিকা বানাবেন। হবু মায়ের ব্যায়াম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আজ আমরা জেনে নিলাম। নারীর জন্য মা হওয়া অনেক আনন্দের একটি জার্নি। গর্ভবতী মায়েদের এই সময়টি আনন্দে এবং নিরাপদে কাটুক। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।সূএ:সাজগোজ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিএনপি নেতাদের সতর্ক থাকার আহ্বান রিজভীর

» বাংলাদেশ ভ্রমণে কানাডার সতর্কতা জারি

» জনগণের ৭০ ভাগ পিআরের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে: মতিউর রহমান আকন্দ

» বদরুদ্দীন উমর ছিলেন বহু রাজনীতিবীদের শিক্ষক: মির্জা ফখরুল

» বিএনপি সেই গণতন্ত্রের কথা বলে, যে গণতন্ত্রে মানুষ ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে  : ড. মঈন খান

» সুন্দরবনের উপকূলের বাগেরহাটে শাপলা বিক্রি করেই চলছে দিনমজুর হানিফের সংসার, সরকারী সহায়তা বঞ্চিত!

» লালমনিরহাটে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রস্তুত ৪ শত ৬৮ টি পূজা মন্ডব

» আগৈলঝাড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয় মুখ ললিতা সরকার শিক্ষা ও নৃত্যকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত

» ঢাকা থেকে জামালপুরের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

» গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিল না করলে সরকারকে বাধ্য করার হুমকি ওলামা পরিষদের

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হবু মায়ের ব্যায়াম | প্রেগনেন্সিতে ফিটনেসের জন্য ব্যায়াম করা কতটা জরুরি?

খুব বেশি দিন আগের কথা না, যখন প্রেগনেন্সির সময় হবু মায়েরা ব্যায়াম করা বন্ধ করে দিতেন, এমন কী শারীরিক কাজকর্ম থেকে দূরে থাকতেন। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। গবেষণায় জানা গেছে, প্রেগনেন্সিতে যারা ব্যায়াম করেন, তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা কম হয় এবং প্রসবকালীন সময় সহজ হয়। অনাগত সন্তানকে নিয়ে হবু মায়েদের চিন্তার যেন শেষ নেই। এই সময়ে ব্যায়াম মায়েদের ফিজিক্যাল ফিটনেসের পাশাপাশি স্ট্রেস কমিয়ে রিল্যাক্স থাকতেও সাহায্য করে। হবু মায়ের ব্যায়াম তাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। প্রেগনেন্সিতে ফিজিক্যাল ও মেন্টাল ফিটনেসের জন্য হবু মায়েরা কীভাবে ব্যায়াম করবেন এবং কী কী সতর্কতা মেনে চলবেন, সেটা জেনে নিন এখনই।

প্রেগনেন্সিতে ব্যায়াম করার বেনিফিটস

প্রেগনেন্সিতে ফিটনেসের জন্য ব্যায়াম করা কতটা জরুরি, সেটা অনেকেই জানেন না! চলুন এক নজরে দেখে নেই সেগুলো-

  • মা ও শিশুর দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়
  • পিঠের ব্যথা কমাতে ব্যায়াম খুব ভালো ভূমিকা রাখে
  • কোমর, পা ইত্যাদি ব্যথার উপশমে সাহায্য করে
  • শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট, লিগামেন্ট, মাংসপেশীকে শিথিল করে
  • প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস বা GDM রোধ করে
  • ফিজিক্যাল ফিটনেস বাড়ায়
  • দৈনন্দিন কাজ করার সক্ষমতা বাড়ায়
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি থেকে বাঁচায়
  • পরিপূর্ণ ও গভীর ঘুমে সাহায্য করে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি দূর করে
  • হাত-পা ফুলে যাওয়া রোধ করে
  • এনার্জি বাড়ায়
  • মুড ভালো থাকে, এই সময় মায়েদের খুব বেশি মুড সুয়িং হয়
  • পিঠ বেঁকে সামনে ঝুঁকে যাওয়া প্রতিরোধ করে
  • অতিরিক্ত ওজন বহন করার জন্য মাংসপেশির শক্তি ও সামর্থ্য বাড়ে
  • নরমাল ডেলিভারি হবার সম্ভাবনা বাড়ে
  • ডেলিভারির পর শরীর দ্রুত পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে

হবু মায়ের ব্যায়াম ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

 

ব্যায়াম শুরুর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। নানা কারণে চিকিৎসক আপনাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলতে পারেন, সে সময় ব্যায়াম করা যাবে না। দেখে নিন কীভাবে ঘরে বসেই এই কাজটি সহজেই আপনি করতে পারেন।

১) ব্যায়াম শুরু করার আগে ওয়ার্ম আপ এবং পরে স্ট্রেচিং করে নিতে হবে।

 

২) সাধারণত যারা সবসময় ব্যায়াম করেন, তারা মোটামুটি সব ব্যায়াম করতে পারবেন। তবে এ সময় নতুন ব্যায়াম শুরু না করাই ভালো।

৩) আপনি যদি আগে থেকেই হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়ামে অভ্যস্ত থাকেন, তবে তা চালিয়ে নিতে পারেন। তবে পেটের ওপর চাপ পড়ে এমন কোনো ব্যায়াম করা যাবে না। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, যিনি প্রেগনেন্সিসময়কালীন ব্যায়াম সম্পর্কে জানেন এমন কারও কাছে পরামর্শ নিতে পারেন।

 

৪) ব্যায়ামের সময় হালকা ও ঢিলেঢালা আরামদায়ক সুতির পোশাক পরুন। পায়ের জুতা নরম ও মাপমতো হওয়া উচিত।

 

৫) প্রথমে খানিকটা হালকা ধরনের ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন। হাঁপিয়ে ওঠার মতো বা কষ্টকর ব্যায়াম দরকার নেই। প্রয়োজনে গতি কমান। অস্বস্তি, খারাপ লাগা থাকলে ব্যায়াম বন্ধ করুন।

 

৬) ব্যায়ামের দুই ঘণ্টা আগে দুই গ্লাস পানি পান করবেন, ১৫ মিনিট পরও দুই গ্লাস।

 

৭) ধীরে ধীরে অবস্থান পরিবর্তন করুন, যেন ভারসাম্য না হারায়। ব্যায়াম শেষে হালকা হাঁটাহাঁটি করুন, তারপর কিছুটা বিশ্রাম নিন।

৮) মনে রাখবেন এটা ওজন কমানোর সময় না। এই সময় ব্যায়াম আপনাকে এবং আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। তাই বেশ সর্তকতার সাথে কী ধরনের ব্যায়াম করবেন সেটা সিলেক্ট করতে হবে।

কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন?

২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যায়াম করাই এই সময়ে যথেষ্ট। অতিরিক্ত ব্যায়াম শিশু এবং মায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

 

কখন ব্যায়াম করা নিষেধ?

১) উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, হৃদপিন্ড ও ফুসফুসের রোগ, গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ, গর্ভফুল নিচের দিকে থাকা বা প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে ব্যায়াম নিষেধ।

 

২) আগে গর্ভপাত হওয়ার ইতিহাস থাকলেও ঝুঁকি নেবেন না।

 

৩) জিমন্যাস্টিক, হকি, কারাতে, সাইক্লিং, নেট বল প্র্যাকটিস বা পাহাড়ে ওঠা জাতীয় পরিশ্রম এই সময়ে করা যাবে না।

হবু মায়ের ব্যায়াম নিয়ে সর্তকতা

ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে আপনার গাইনী ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন আপনার হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি কিনা কিংবা কোনো জটিলতা আছে কিনা!

 

এক এক ট্রাইমেস্টারের জন্য ব্যায়াম যেমন আলাদা, তেমনি সবার শরীরও একই ব্যায়াম করতে পারদর্শী না। তাই জেনে বুঝে আপনার ব্যায়ামের তালিকা বানাবেন। হবু মায়ের ব্যায়াম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আজ আমরা জেনে নিলাম। নারীর জন্য মা হওয়া অনেক আনন্দের একটি জার্নি। গর্ভবতী মায়েদের এই সময়টি আনন্দে এবং নিরাপদে কাটুক। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।সূএ:সাজগোজ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com