স্যার-ম্যাডাম নিয়ে কেন এত বিতর্ক

ছবি সংগৃহীত

 

নঈম নিজাম : স্যার, ম্যাডাম নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক চলছে। বিতর্কের সূত্রপাত রংপুর থেকে। বাকিটা জমেছে বগুড়ায়। রংপুরের একজন শিক্ষককে জেলা প্রশাসক স্যার বলতে নসিহত করেছিলেন। জবাবে সেই শিক্ষক অনশনে বসলেন। সঙ্গে নিলেন নিজের ছোট মেয়েটিকেও। সামাজিক মাধ্যমে পুরো বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।  মেইন স্ট্রিম মিডিয়াও সংবাদ পরিবেশন থেকে বাদ থাকল না। এখন ফেসবুক খুললেই স্যার, ম্যাডাম নিয়ে নানামুখী মতামত শুনছি। সামাজিক মাধ্যমে একটা কিছু শুরু হলেই হলো। এ নিয়ে জমিয়ে আলোচনা চলতেই থাকে। দুনিয়াতে সবকিছুর ভালোমন্দ থাকে। সমাজে একজনের দোষ বারো জনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ারও মানে নেই। তার পরও কোনো খুঁত পাওয়া গেলে সবাই সাধু সেজে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়ে। দিতে থাকে মতামত। একবারও ভাবে না আমলাতন্ত্রের দাপট শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা দুনিয়াতেই সিস্টেম বলে একটা কথা আছে। সেই সিস্টেমের বেড়াজালে আমলাতন্ত্র তৈরি হয়। মাঝে মাঝে আমলাতন্ত্র ভার্সেস রাজনীতিবিদ, আবার কখনো আমলাতন্ত্র ভার্সেস আমজনতার লড়াই হয়।

 

কানাডার আমলাতন্ত্র নিয়ে প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগরের ফেসবুকে একটা লেখা পড়েছিলাম। সাগর লিখেছেন, ‘টরন্টোর সিটি কাউন্সিলর জোস ম্যাটলরের ১০ দিনের বেতন কাটার নির্দেশ দিয়েছেন ইন্টিগ্রিটি কমিশনার। এটি তার শাস্তি। জোস ম্যাটলরের অপরাধ কী? তিনি সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তাকে সমালোচনা করে সামাজিক মাধ্যম টুইটারে পোস্ট দিয়েছিলেন। তার শাস্তি এই জনপ্রতিনিধির ১০ দিনের “পে সাসপেনশন”।’ সমস্যা শুরু হয়েছিল সিটি পরিচালিত পার্কগুলোয় ওয়াশরুম খুলে দেওয়া নিয়ে। এ নিয়ে সিটির কাছে তথ্য চেয়েছিলেন কাউন্সিলর। সেই তথ্যে তিনি খুশি হতে পারেননি। টুইট করেন, সিটি ম্যানেজার তাকে মিথ্যা বলেছেন। সেই ম্যানেজার চলে গিয়ে এলেন আরেকজন। আবার টুইট করলেন কাউন্সিলর। লিখলেন, একজন অযোগ্য লোককে ম্যানেজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক ও বর্তমান ম্যানেজার এক হলেন। তারা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন ইন্টিগ্রিটি কমিশনে। তদন্ত শেষে দোষী সাব্যস্ত হলেন জনপ্রতিনিধি। তার বেতন কাটার নির্দেশ এলো। কানাডার সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক হইচইয়ের খবর পাইনি।

নিয়ম-অনিয়ম, ক্ষমতার বেড়াজাল সবখানেই কমবেশি আছে। একদা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। সেই ব্রিটিশরা পৃথিবী শাসন করতে গিয়ে শক্তিশালী আমলাতন্ত্র তৈরি করে। সামন্তবাদী চিন্তা প্রবেশ করিয়ে দেয় মানুষের ভিতরে। ব্রিটিশের সেই দিন এখন নেই। তারা আমেরিকার পেটে ঢুকে পড়েছে। এতদিনে ভুলে গেছে একসময় তারা আমেরিকা শাসন করত। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, ভারত সবখানেই ছিল তাদের পতাকা। এখন একজন ভারতীয় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। তিনজন বাঙালি নারী দাপুটে এমপি। দুনিয়াতে পরিবর্তন আছেই। ব্রিটিশের নিজের দেশ ছাড়া তাদের তৈরি আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন হয়নি আর কোনো দেশে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ উপমহাদেশ এখনো আমলাতন্ত্রের জ্বরে ভুগছে। কেউ বুঝতে চায় না কাজের মধ্য দিয়ে অনেক বেশি সম্মান অর্জন সম্ভব। এখনো অনেক জেলা শহরের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে অনেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে মনে রেখেছে। তাদের রেখে যাওয়া কাজের স্মৃতিকে সম্মান জানাচ্ছে। অনেক আমলা জেলা-উপজেলা ছাড়েন আন্দোলনের মুখে। আবার কারও কারও বদলির আদেশ এলে সাধারণ মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। এমপি, মন্ত্রীর কাছে যায় তদবির করে বদলি ঠেকাতে। স্যার, ম্যাডাম নিয়ে সবাইকে একভাবে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। কর্ম মূল্যায়নেই মানুষকে দেখা উচিত। স্যার অথবা ম্যাডাম চেয়ারের প্রতি একটা সম্মানের ব্যাপার। অনেক নামজাদা কবি-সাহিত্যিককে তাদের ভক্তরা স্যার ডাকতেন। এতে জাত চলে যাওয়ার কিছু নেই। আমেরিকায় দেখেছি, ট্যাক্সিচালক, কিংবা সাধারণ পেশাজীবীর কাজে খুশি হয়ে অনেকে ধন্যবাদ দিতে গিয়ে স্যার ডাকেন। এ নিয়ে অন্যজনকে হাসিঠাট্টা করতে দেখিনি।

 

সময় পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট অনেক কিছু বলে দেয়। পারিবারিক শিক্ষা এখানে অনেক বড় বিষয়। বগুড়ায় নিজের কিশোরী মেয়ের আবদার রাখতে বিদ্যালয়ে গিয়ে হম্বিতম্বি করে বিপাকে পড়েছেন জেলা অতিরিক্ত বিচারক। অতিরিক্ত বিচারকের মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সেই স্কুলের নিয়ম শিক্ষার্থীরা একদিন শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশ নেবে। বিচারককন্যা এতে অস্বস্তিবোধ করল। সম্মত হলো না সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নিতে। তার ক্লাসের বন্ধুরা বলল, আমরা সবাই মিলে এ কাজ করব। কোনো সমস্যা নেই। তুমি সবার সঙ্গে আসো। এ প্রস্তাবও মেয়েটির ভালো লাগেনি। পরিচ্ছন্নতা কাজে মেয়েটি অংশ নেয়নি। স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির ক্ষোভে বাড়িতে গিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বসল। ফেসবুকে লিখল, ‘আমার মা একজন বিচারক। তোরা হচ্ছিস বস্তির মেয়ে। আমার সমান হতে হলে তোদের মাকে আগে বিচারক হতে হবে।’ এ স্ট্যাটাস পড়ে স্কুল সহপাঠীরা ব্যথিত হলো। তারাও আরেক ধাপ এগিয়ে কমেন্ট করতে থাকল বিভিন্ন ধরনের। স্কুলের বাচ্চাদের এ যুদ্ধে এবার শরিক হতে থাকলেন অভিভাবকরা। বিচারক ভদ্রমহিলা সন্তানকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে এলেন। ডাকলেন অন্য মেয়েদের মায়েদের। বললেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য দুঃখজনক। রাষ্ট্রে এ নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে। মামলা করতে পারি। মামলা করলে সবার জেল হবে। ক্ষমা করতে পারি কমেন্ট করা মেয়েদের মায়েরা যদি পা ধরে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।’ এই বাড়াবাড়িটুকু তিনি না করলেই পারতেন। একজন অভিভাবক হিসেবে সবাইকে একত্র করে বুঝিয়ে দিলেই পারতেন। একরোখা নীতির কাছে শেষ পর্যন্ত অসহায় অন্য মায়েরা ক্ষমা চাইলেন। পা ধরলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিবাদ জানান সব ছাত্রী ও অভিভাবক। সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে। জাতীয় মিডিয়ায়ও খবর প্রকাশিত হয়। তীব্র সমালোচনার মুখে সেই বিচারককে প্রত্যাহার করে নেয় আইন মন্ত্রণালয়।

 

স্বাধীনতার এত বছর পার হলো। তার পরও আমরা বের হতে পারিনি অসুস্থ মানসিকতা থেকে। ব্রিটিশের পর পাকিস্তানিরা আমাদের ভিতরে প্রভু সাজার প্রবণতা নীরবে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেই মানসিকতা আমরা বহন করছি। আমাদের পেশাজীবী থেকে আমলা কেউই অতীতকে অতিক্রম করতে পারছি না। কীভাবে অতিক্রম করব? ১৯৬৭ সালের জুনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী শাহাবুদ্দিন বললেন, পাকিস্তানের আদর্শের সঙ্গে মিল না থাকায় বেতার-টিভিতে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করা হবে। আর যায় কোথায়! বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা নেমে পড়লেন প্রচারে। সবার আগে মন্ত্রীর বক্তব্যের পক্ষে জনমত গড়তে মাঠে নেমেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষক নিষিদ্ধের পক্ষে বিবৃতিও দিয়েছিলেন। তাদের সেই বিবৃতি পত্রিকায় প্রকাশও পেয়েছিল। ১৯৭১ সালে সেই শিক্ষকরা পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েছিলেন ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতার পর তিনি সংবাদপত্রেও যোগ দেন। তিনি সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন। ’৯০ সালে অবজারভারের সম্পাদক হয়েছিলেন। তবে ১৮ জন বুদ্ধিজীবী দাঁড়িয়েছিলেন রবীন্দ্রসংগীত প্রশ্নে সরকারি ভূমিকার তীব্র সমালোচনায়। এই ১৮ জনের বিপক্ষে আরেকটি বিবৃতি দেন ৪০ জন। তারা সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনসহ প্রথম পাঁচজনের সঙ্গে একাত্ম হলেন। সরকারি নির্দেশ ও বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনে বেতার-টিভিতে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ হয়। আমলারা নির্দেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুগের ধারাবাহিকতা মনের ভিতরে ধারণ করেই আমরা চলি। ভিতরে চাটুকারিতা, ঔপনিবেশিক মানসিকতা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। সম্মান অর্জন কর্ম দিয়ে আসে। জোর করে কোনো কিছু হয় না।

 

দুই. বঙ্গবন্ধু কাপ-২০২৩ আন্তর্জাতিক কাবাডির ফাইনাল দেখতে গিয়েছিলাম ২১ মার্চ মঙ্গলবার ভরদুপুরে। আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান। তিনি পুলিশের অতিরিক্ত আইজি। ফেডারেশন সভাপতি পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। পুলিশে একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে আবদুল্লাহ আল মামুনের সুনাম আছে। তিনি মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি নিয়েই আছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। প্রয়াত রাজনীতিবিদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সন্তান রাসেল। আহসান উল্লাহ মাস্টারের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ভালো ছিল। তিনি বড় মাপের একজন সংগঠক ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। সে সময় বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করতাম এটিএন বাংলায়। আওয়ামী লীগের অনেক লোক তখন ভয়ে কথা বলতেন না। টক শোতে আনতে কষ্ট হতো। আহসান উল্লাহ মাস্টারকে যখনই আমন্ত্রণ জানাতাম টক শোতে, তিনি আসতেন। কথা বলতেন বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন তান্ডবের বিরুদ্ধে। সোচ্চার কণ্ঠে কথা বলা মানুষটিকে নিষ্ঠুরভাবে তখন গুলি করে হত্যা করা হয়। কেন এই ভয়াবহতা আজও জবাব পাইনি। পিতার পথ ধরে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন রাসেল। বাবার মতোই কোনো অহমিকা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কোনো বদনামও শুনিনি সমালোচকদের মুখে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে রাসেল ভালো করছেন। বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির ফাইনালে বিশেষ অতিথি ছিলাম আমি ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু। চোখ ধাঁধানো এ আয়োজনে পুরো দুই ঘণ্টা সবাই উচ্ছ্বাস নিয়ে খেলা ও অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম।

 

পরিচ্ছন্ন গোছানো আয়োজন। কোথাও হুড়োহুড়ি নেই। পুলিশ বিভাগে দক্ষতা নিয়ে কাজ করার সাফল্য হাবিবের দীর্ঘদিনের। তিনি পুলিশের এসপি, অতিরিক্ত ডিআইজি, ঢাকার ডিআইজি হিসেবেও অনেক কাজ করেছেন। পদোন্নতি পেয়ে এখনো করছেন। অবহেলিত বেদে সম্প্রদায়ের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছেন। তাদের পুনর্বাসনে কাজ করছেন ধারাবাহিকতা নিয়ে। একটা সময় গ্রামেগঞ্জে সাপের খেলা, বানরের নাচ, শিঙ্গা লাগানোর কাজ করত বেদেরা। থাকত নৌকাতে। আবার অনেকের ছিল যাযাবর জীবন। এখন সেসব দিন নেই। অনেক কষ্টে তাদের জীবন চালাতে হয়। অভাব-অনটনে কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। বেদেদের জীবন বদলাতেই কাজ করছেন হাবিব। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে পারা অনেক বড় বিষয়। সবাই পারে না। হাবিব ২০১৪ সালে উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে সাভার, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নাটেরের সিংড়ায় কাজ শুরু করেন। শুধু বেদে ও হিজড়াদের পুনর্বাসন নয়, সন্ত্রাস, মাদক, ইভ টিজিং নিয়েও হাবিব কাজ করেছেন। নিজের গ্রাম গোপালগঞ্জের চন্দ্রদীঘলিয়াতেও করেছেন অনেক সামাজিক কাজ। ঢাকার ডিআইজি থাকার সময় তার অধীন থানাগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনেন। থানা পুলিশ নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে ভীতি কমাতেই তার চেষ্টা। উত্তরণ ফাউন্ডেশন এখন হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, বুটিক, কম্পিউটার ট্রেনিং, ফ্যাশন হাউস প্রতিষ্ঠাসহ অনেক ধরনের কাজ করছে।

 

সমাজে পথ চলে সবাই। পথ দেখায় কেউ কেউ। কিছু মানুষ একটা জীবন কাটিয়ে দেয় কাজ করে। আবার কিছু মানুষের জীবন চলে অন্যের সমালোচনা আর কুৎসা রটনায়। সমালোচনা করা, গালাগাল করা সহজ। মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানবতার জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরে ঢুকে কাজ করতে পারা অনেক কঠিন।  এ কঠিনকে যারা জয় করতে পারে তারা সামাজিকভাবে সর্বজনীনভাবে সম্মান অর্জন করে। এ সম্মান জোর করে পেতে হয় না। মানুষের ভিতর থেকেই আসে।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুই-এক বছর দেখতে চাই : নুর

» চোখের সেবা সম্প্রসারণে অরবিসের সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ আগ্রহী : ইউনূস

» ভারতে বসে হাসিনা ষড়যন্ত্র করছেন : এ্যানি

» স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ২০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দে ইইউর সমর্থন চাইল বাংলাদেশ

» ধাপে ধাপে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে সরকার : হাসান আরিফ

» বিমান বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা

» অনলাইনে আয়কর পরিশোধ সহজ করতে এনবিআর-এর সাথে পার্টনারশিপ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক

» বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন; ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

» ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি খালেদা জিয়াকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি আলালের

» থানায় এসে কেউ যেন সেবা বঞ্চিত না হয়: ডিএমপি কমিশনার

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

স্যার-ম্যাডাম নিয়ে কেন এত বিতর্ক

ছবি সংগৃহীত

 

নঈম নিজাম : স্যার, ম্যাডাম নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক চলছে। বিতর্কের সূত্রপাত রংপুর থেকে। বাকিটা জমেছে বগুড়ায়। রংপুরের একজন শিক্ষককে জেলা প্রশাসক স্যার বলতে নসিহত করেছিলেন। জবাবে সেই শিক্ষক অনশনে বসলেন। সঙ্গে নিলেন নিজের ছোট মেয়েটিকেও। সামাজিক মাধ্যমে পুরো বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।  মেইন স্ট্রিম মিডিয়াও সংবাদ পরিবেশন থেকে বাদ থাকল না। এখন ফেসবুক খুললেই স্যার, ম্যাডাম নিয়ে নানামুখী মতামত শুনছি। সামাজিক মাধ্যমে একটা কিছু শুরু হলেই হলো। এ নিয়ে জমিয়ে আলোচনা চলতেই থাকে। দুনিয়াতে সবকিছুর ভালোমন্দ থাকে। সমাজে একজনের দোষ বারো জনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ারও মানে নেই। তার পরও কোনো খুঁত পাওয়া গেলে সবাই সাধু সেজে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়ে। দিতে থাকে মতামত। একবারও ভাবে না আমলাতন্ত্রের দাপট শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা দুনিয়াতেই সিস্টেম বলে একটা কথা আছে। সেই সিস্টেমের বেড়াজালে আমলাতন্ত্র তৈরি হয়। মাঝে মাঝে আমলাতন্ত্র ভার্সেস রাজনীতিবিদ, আবার কখনো আমলাতন্ত্র ভার্সেস আমজনতার লড়াই হয়।

 

কানাডার আমলাতন্ত্র নিয়ে প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগরের ফেসবুকে একটা লেখা পড়েছিলাম। সাগর লিখেছেন, ‘টরন্টোর সিটি কাউন্সিলর জোস ম্যাটলরের ১০ দিনের বেতন কাটার নির্দেশ দিয়েছেন ইন্টিগ্রিটি কমিশনার। এটি তার শাস্তি। জোস ম্যাটলরের অপরাধ কী? তিনি সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তাকে সমালোচনা করে সামাজিক মাধ্যম টুইটারে পোস্ট দিয়েছিলেন। তার শাস্তি এই জনপ্রতিনিধির ১০ দিনের “পে সাসপেনশন”।’ সমস্যা শুরু হয়েছিল সিটি পরিচালিত পার্কগুলোয় ওয়াশরুম খুলে দেওয়া নিয়ে। এ নিয়ে সিটির কাছে তথ্য চেয়েছিলেন কাউন্সিলর। সেই তথ্যে তিনি খুশি হতে পারেননি। টুইট করেন, সিটি ম্যানেজার তাকে মিথ্যা বলেছেন। সেই ম্যানেজার চলে গিয়ে এলেন আরেকজন। আবার টুইট করলেন কাউন্সিলর। লিখলেন, একজন অযোগ্য লোককে ম্যানেজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক ও বর্তমান ম্যানেজার এক হলেন। তারা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন ইন্টিগ্রিটি কমিশনে। তদন্ত শেষে দোষী সাব্যস্ত হলেন জনপ্রতিনিধি। তার বেতন কাটার নির্দেশ এলো। কানাডার সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক হইচইয়ের খবর পাইনি।

নিয়ম-অনিয়ম, ক্ষমতার বেড়াজাল সবখানেই কমবেশি আছে। একদা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। সেই ব্রিটিশরা পৃথিবী শাসন করতে গিয়ে শক্তিশালী আমলাতন্ত্র তৈরি করে। সামন্তবাদী চিন্তা প্রবেশ করিয়ে দেয় মানুষের ভিতরে। ব্রিটিশের সেই দিন এখন নেই। তারা আমেরিকার পেটে ঢুকে পড়েছে। এতদিনে ভুলে গেছে একসময় তারা আমেরিকা শাসন করত। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, ভারত সবখানেই ছিল তাদের পতাকা। এখন একজন ভারতীয় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। তিনজন বাঙালি নারী দাপুটে এমপি। দুনিয়াতে পরিবর্তন আছেই। ব্রিটিশের নিজের দেশ ছাড়া তাদের তৈরি আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন হয়নি আর কোনো দেশে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ উপমহাদেশ এখনো আমলাতন্ত্রের জ্বরে ভুগছে। কেউ বুঝতে চায় না কাজের মধ্য দিয়ে অনেক বেশি সম্মান অর্জন সম্ভব। এখনো অনেক জেলা শহরের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে অনেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে মনে রেখেছে। তাদের রেখে যাওয়া কাজের স্মৃতিকে সম্মান জানাচ্ছে। অনেক আমলা জেলা-উপজেলা ছাড়েন আন্দোলনের মুখে। আবার কারও কারও বদলির আদেশ এলে সাধারণ মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। এমপি, মন্ত্রীর কাছে যায় তদবির করে বদলি ঠেকাতে। স্যার, ম্যাডাম নিয়ে সবাইকে একভাবে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। কর্ম মূল্যায়নেই মানুষকে দেখা উচিত। স্যার অথবা ম্যাডাম চেয়ারের প্রতি একটা সম্মানের ব্যাপার। অনেক নামজাদা কবি-সাহিত্যিককে তাদের ভক্তরা স্যার ডাকতেন। এতে জাত চলে যাওয়ার কিছু নেই। আমেরিকায় দেখেছি, ট্যাক্সিচালক, কিংবা সাধারণ পেশাজীবীর কাজে খুশি হয়ে অনেকে ধন্যবাদ দিতে গিয়ে স্যার ডাকেন। এ নিয়ে অন্যজনকে হাসিঠাট্টা করতে দেখিনি।

 

সময় পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট অনেক কিছু বলে দেয়। পারিবারিক শিক্ষা এখানে অনেক বড় বিষয়। বগুড়ায় নিজের কিশোরী মেয়ের আবদার রাখতে বিদ্যালয়ে গিয়ে হম্বিতম্বি করে বিপাকে পড়েছেন জেলা অতিরিক্ত বিচারক। অতিরিক্ত বিচারকের মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সেই স্কুলের নিয়ম শিক্ষার্থীরা একদিন শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশ নেবে। বিচারককন্যা এতে অস্বস্তিবোধ করল। সম্মত হলো না সহপাঠীদের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নিতে। তার ক্লাসের বন্ধুরা বলল, আমরা সবাই মিলে এ কাজ করব। কোনো সমস্যা নেই। তুমি সবার সঙ্গে আসো। এ প্রস্তাবও মেয়েটির ভালো লাগেনি। পরিচ্ছন্নতা কাজে মেয়েটি অংশ নেয়নি। স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির ক্ষোভে বাড়িতে গিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বসল। ফেসবুকে লিখল, ‘আমার মা একজন বিচারক। তোরা হচ্ছিস বস্তির মেয়ে। আমার সমান হতে হলে তোদের মাকে আগে বিচারক হতে হবে।’ এ স্ট্যাটাস পড়ে স্কুল সহপাঠীরা ব্যথিত হলো। তারাও আরেক ধাপ এগিয়ে কমেন্ট করতে থাকল বিভিন্ন ধরনের। স্কুলের বাচ্চাদের এ যুদ্ধে এবার শরিক হতে থাকলেন অভিভাবকরা। বিচারক ভদ্রমহিলা সন্তানকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে এলেন। ডাকলেন অন্য মেয়েদের মায়েদের। বললেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য দুঃখজনক। রাষ্ট্রে এ নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে। মামলা করতে পারি। মামলা করলে সবার জেল হবে। ক্ষমা করতে পারি কমেন্ট করা মেয়েদের মায়েরা যদি পা ধরে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।’ এই বাড়াবাড়িটুকু তিনি না করলেই পারতেন। একজন অভিভাবক হিসেবে সবাইকে একত্র করে বুঝিয়ে দিলেই পারতেন। একরোখা নীতির কাছে শেষ পর্যন্ত অসহায় অন্য মায়েরা ক্ষমা চাইলেন। পা ধরলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিবাদ জানান সব ছাত্রী ও অভিভাবক। সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে। জাতীয় মিডিয়ায়ও খবর প্রকাশিত হয়। তীব্র সমালোচনার মুখে সেই বিচারককে প্রত্যাহার করে নেয় আইন মন্ত্রণালয়।

 

স্বাধীনতার এত বছর পার হলো। তার পরও আমরা বের হতে পারিনি অসুস্থ মানসিকতা থেকে। ব্রিটিশের পর পাকিস্তানিরা আমাদের ভিতরে প্রভু সাজার প্রবণতা নীরবে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেই মানসিকতা আমরা বহন করছি। আমাদের পেশাজীবী থেকে আমলা কেউই অতীতকে অতিক্রম করতে পারছি না। কীভাবে অতিক্রম করব? ১৯৬৭ সালের জুনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী শাহাবুদ্দিন বললেন, পাকিস্তানের আদর্শের সঙ্গে মিল না থাকায় বেতার-টিভিতে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করা হবে। আর যায় কোথায়! বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা নেমে পড়লেন প্রচারে। সবার আগে মন্ত্রীর বক্তব্যের পক্ষে জনমত গড়তে মাঠে নেমেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষক নিষিদ্ধের পক্ষে বিবৃতিও দিয়েছিলেন। তাদের সেই বিবৃতি পত্রিকায় প্রকাশও পেয়েছিল। ১৯৭১ সালে সেই শিক্ষকরা পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েছিলেন ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতার পর তিনি সংবাদপত্রেও যোগ দেন। তিনি সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন। ’৯০ সালে অবজারভারের সম্পাদক হয়েছিলেন। তবে ১৮ জন বুদ্ধিজীবী দাঁড়িয়েছিলেন রবীন্দ্রসংগীত প্রশ্নে সরকারি ভূমিকার তীব্র সমালোচনায়। এই ১৮ জনের বিপক্ষে আরেকটি বিবৃতি দেন ৪০ জন। তারা সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনসহ প্রথম পাঁচজনের সঙ্গে একাত্ম হলেন। সরকারি নির্দেশ ও বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনে বেতার-টিভিতে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ হয়। আমলারা নির্দেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুগের ধারাবাহিকতা মনের ভিতরে ধারণ করেই আমরা চলি। ভিতরে চাটুকারিতা, ঔপনিবেশিক মানসিকতা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। সম্মান অর্জন কর্ম দিয়ে আসে। জোর করে কোনো কিছু হয় না।

 

দুই. বঙ্গবন্ধু কাপ-২০২৩ আন্তর্জাতিক কাবাডির ফাইনাল দেখতে গিয়েছিলাম ২১ মার্চ মঙ্গলবার ভরদুপুরে। আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান। তিনি পুলিশের অতিরিক্ত আইজি। ফেডারেশন সভাপতি পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। পুলিশে একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে আবদুল্লাহ আল মামুনের সুনাম আছে। তিনি মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি নিয়েই আছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। প্রয়াত রাজনীতিবিদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সন্তান রাসেল। আহসান উল্লাহ মাস্টারের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ভালো ছিল। তিনি বড় মাপের একজন সংগঠক ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। সে সময় বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করতাম এটিএন বাংলায়। আওয়ামী লীগের অনেক লোক তখন ভয়ে কথা বলতেন না। টক শোতে আনতে কষ্ট হতো। আহসান উল্লাহ মাস্টারকে যখনই আমন্ত্রণ জানাতাম টক শোতে, তিনি আসতেন। কথা বলতেন বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন তান্ডবের বিরুদ্ধে। সোচ্চার কণ্ঠে কথা বলা মানুষটিকে নিষ্ঠুরভাবে তখন গুলি করে হত্যা করা হয়। কেন এই ভয়াবহতা আজও জবাব পাইনি। পিতার পথ ধরে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন রাসেল। বাবার মতোই কোনো অহমিকা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কোনো বদনামও শুনিনি সমালোচকদের মুখে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে রাসেল ভালো করছেন। বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির ফাইনালে বিশেষ অতিথি ছিলাম আমি ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু। চোখ ধাঁধানো এ আয়োজনে পুরো দুই ঘণ্টা সবাই উচ্ছ্বাস নিয়ে খেলা ও অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম।

 

পরিচ্ছন্ন গোছানো আয়োজন। কোথাও হুড়োহুড়ি নেই। পুলিশ বিভাগে দক্ষতা নিয়ে কাজ করার সাফল্য হাবিবের দীর্ঘদিনের। তিনি পুলিশের এসপি, অতিরিক্ত ডিআইজি, ঢাকার ডিআইজি হিসেবেও অনেক কাজ করেছেন। পদোন্নতি পেয়ে এখনো করছেন। অবহেলিত বেদে সম্প্রদায়ের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছেন। তাদের পুনর্বাসনে কাজ করছেন ধারাবাহিকতা নিয়ে। একটা সময় গ্রামেগঞ্জে সাপের খেলা, বানরের নাচ, শিঙ্গা লাগানোর কাজ করত বেদেরা। থাকত নৌকাতে। আবার অনেকের ছিল যাযাবর জীবন। এখন সেসব দিন নেই। অনেক কষ্টে তাদের জীবন চালাতে হয়। অভাব-অনটনে কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। বেদেদের জীবন বদলাতেই কাজ করছেন হাবিব। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে পারা অনেক বড় বিষয়। সবাই পারে না। হাবিব ২০১৪ সালে উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে সাভার, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নাটেরের সিংড়ায় কাজ শুরু করেন। শুধু বেদে ও হিজড়াদের পুনর্বাসন নয়, সন্ত্রাস, মাদক, ইভ টিজিং নিয়েও হাবিব কাজ করেছেন। নিজের গ্রাম গোপালগঞ্জের চন্দ্রদীঘলিয়াতেও করেছেন অনেক সামাজিক কাজ। ঢাকার ডিআইজি থাকার সময় তার অধীন থানাগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনেন। থানা পুলিশ নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে ভীতি কমাতেই তার চেষ্টা। উত্তরণ ফাউন্ডেশন এখন হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, বুটিক, কম্পিউটার ট্রেনিং, ফ্যাশন হাউস প্রতিষ্ঠাসহ অনেক ধরনের কাজ করছে।

 

সমাজে পথ চলে সবাই। পথ দেখায় কেউ কেউ। কিছু মানুষ একটা জীবন কাটিয়ে দেয় কাজ করে। আবার কিছু মানুষের জীবন চলে অন্যের সমালোচনা আর কুৎসা রটনায়। সমালোচনা করা, গালাগাল করা সহজ। মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানবতার জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরে ঢুকে কাজ করতে পারা অনেক কঠিন।  এ কঠিনকে যারা জয় করতে পারে তারা সামাজিকভাবে সর্বজনীনভাবে সম্মান অর্জন করে। এ সম্মান জোর করে পেতে হয় না। মানুষের ভিতর থেকেই আসে।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com