স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে ১৪ বছর টার্মিনালে

হলিউডের দ্য টার্মিনাল সিনেমাটি দেখেছেন নিশ্চয়? ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া টম হ্যাংকস অভিনীত সেই সিনেমার কাহিনি দর্শকদের মনে গেঁথে আছে এখনো। তিনি ভিক্টর নাভোরস্কি নামে এক পর্যটকের ভূমিকা পালন করেছিলেন।

 

সিনেমায় দেখা যায়, পূর্ব ইউরোপের এক দেশ থেকে আমেরিকায় এসে পৌঁছান ভিক্টর। কিন্তু তার ভিসায় কিছু সমস্যা থাকায় তাকে নিউ ইয়ার্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। এদিকে তিনি যে দেশে ফিরে যাবেন, সেই উপায়ও নেই। কারণ সেখানে তখন সামরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে! এই অবস্থায় বিমানবন্দরেই থেকে যান ভিক্টর!

এই কাহিনি কিন্তু বাস্তব থেকেই নেওয়া। বাস্তবের মেহরান কারিমি নাসেরের জীবনের এই ঘটনা থেকেই সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে প্যারিসের বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে টানা ১৮ বছর কেটেছিলমেহরানের। তিনি ছিলেন ইরানের বাসিন্দা।

 

তবে এই ঘটনা শুধু মেহরানের জীবনেই নয়, ঘটেছেন চীনের বেইজিংয়ের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী ওয়েই জিনগুও-এর সঙ্গেও। ১৪ বছর ধরে বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। ফিরতে পারেননি আপনজনদের কাছে!

211po

সময়টা ২০০৮ সাল। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছাড়েন ওয়েই জিনগুও। এরপর তিনি বিভিন্ন রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দরে ঘুমাতে শুরু করেন। এরপর একদিন চলে আসেন বেজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানেই ঘুরেফিরে তার বেশ ভালোই লাগে। এখানেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করেন। সেই থেকে এখানেই জীবন কাটছে তার।

এই বিমানবন্দরে মোট তিনটি টার্মিনাল রয়েছে। এর মধ্যে ২ নম্বর টার্মিনালকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছেন ওয়েই। কারণ এই স্থানটি বেশ উষ্ণ। আর বাইরে থাকতে হলে ঠান্ডায় কষ্ট পেতে হবে। এরপর ১৪ বছর ধরে এটাই তার আস্তানা, তার একার সংসারের ঠিকানা!

 

ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েই নিজের জীবনের কাহিনি শুনিয়েছেন। ওয়েইয়ের বাড়ি বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১২ মাইল দূরে। কিন্তু তিনি বাড়ি ফিরে যেতে চান না। তার কথায়, আমি আমার বাড়িতে ফিরে যেতে পারব না। কারণ সেখানে আমার কোনো স্বাধীনতা নেই। আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে বলেছে, আমি যদি আমার বাড়িতে থাকতে চাই, তাহলে আমাকে মদ্যপান এবং ধূমপান ছাড়তে হবে।

 

আর যদি আমি যদি নেশা না ছাড়তে পারি, তাহলে সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে যে ১ হাজার ইউয়ান ভাতা পাই। তার পুরোটাই আমার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিতে হবে। আর সেটা যদি আমি করি তাহলে আমি আমর সিগারেট, মদ কোথা থেকে কীভাবে কিনব?

bbbb

বিমানবন্দর চত্বরেই গুছিয়ে সংসার পেতেছেন এই ওয়েই। যেখানে বিমানযাত্রী ও তাদের আত্মীয়রা অপেক্ষা করেন, সেই আসনের সারির মাঝেই রয়েছে তার ছোট্ট রান্নাঘর! তার কাছে একটি ইলেক্ট্রিক কুকার রয়েছে। যেটা তিনি তার বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন।

 

এছাড়াও প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র ও স্লিপিং ব্যাগ সেট আপ করেছেন সেখানে। সাধারণত সারা দিনটা বিমানবন্দরের এদিক সেদিক ঘুরেই কাটিয়ে দেন ওয়েই। নিজের প্রয়োজনের জিনিসপত্র কেনেন। সারাদিন ধরে কত মানুষ এখানে আসেন, তাদের দেখেন! এভাবেই কেটে যায় গোটা দিন। তারপর রাত হলে খাওয়া সেরে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। রান্নাঘর তখন শোওয়ার ঘর হয়ে যায়! এভাবেই এক এক করে কেটে গেছে ১৪ বছর।

 

তবে ইরানের মেহরান করিমি নাসেরি কিংবা চীনের ওয়েই জিনগুও নয়, আরও অনেকেই বিমানবন্দরে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন। তবে তারা বেশিরভাগই থাকে গৃহহীন। খুব বেশি দিন তারা এক স্থানে থাকেনও না।

 

তাদের মতো আরও একজন তুরস্কের বায়রাম টেপেলি। তিনি আতাতুর্ক বিমানবন্দরে ২৭ বছর কাটিয়েছেন। ১৯৯১ সালে পারিবারিক সমস্যার কারণে এই বিমানবন্দরে চলে এসেছিলেন। সূত্র: ডেইলি মেইল

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ওয়ানশুটার গান ও দেশীয় অস্ত্রসহ তিনজন আটক

» রাজনৈতিক দলের বিচারে ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ

» নিজের আকিকা করা যাবে?

» যুবককে কুপিয়ে হত্যা

» হাতিয়ায় ইলিশসহ দুই ট্রলারের ৩০ জেলেকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড

» সুস্থ খালেদা জিয়াকে কাছে পেয়ে উৎফুল্ল স্বজনরা

» প্রেম বিয়ে সংসার নিয়ে মুখ খুললেন জয়া আহসান!

» অনলাইনেও নিষিদ্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বন্ধ হবে সব পেজ

» নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে অনেক সময় লাগবে : আইন উপদেষ্টা

» যারা মানুষ মা’রে, তাদের অনলাইনেও থাকার অধিকার নেই: রাফি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে ১৪ বছর টার্মিনালে

হলিউডের দ্য টার্মিনাল সিনেমাটি দেখেছেন নিশ্চয়? ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া টম হ্যাংকস অভিনীত সেই সিনেমার কাহিনি দর্শকদের মনে গেঁথে আছে এখনো। তিনি ভিক্টর নাভোরস্কি নামে এক পর্যটকের ভূমিকা পালন করেছিলেন।

 

সিনেমায় দেখা যায়, পূর্ব ইউরোপের এক দেশ থেকে আমেরিকায় এসে পৌঁছান ভিক্টর। কিন্তু তার ভিসায় কিছু সমস্যা থাকায় তাকে নিউ ইয়ার্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। এদিকে তিনি যে দেশে ফিরে যাবেন, সেই উপায়ও নেই। কারণ সেখানে তখন সামরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে! এই অবস্থায় বিমানবন্দরেই থেকে যান ভিক্টর!

এই কাহিনি কিন্তু বাস্তব থেকেই নেওয়া। বাস্তবের মেহরান কারিমি নাসেরের জীবনের এই ঘটনা থেকেই সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে প্যারিসের বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে টানা ১৮ বছর কেটেছিলমেহরানের। তিনি ছিলেন ইরানের বাসিন্দা।

 

তবে এই ঘটনা শুধু মেহরানের জীবনেই নয়, ঘটেছেন চীনের বেইজিংয়ের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী ওয়েই জিনগুও-এর সঙ্গেও। ১৪ বছর ধরে বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। ফিরতে পারেননি আপনজনদের কাছে!

211po

সময়টা ২০০৮ সাল। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছাড়েন ওয়েই জিনগুও। এরপর তিনি বিভিন্ন রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দরে ঘুমাতে শুরু করেন। এরপর একদিন চলে আসেন বেজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানেই ঘুরেফিরে তার বেশ ভালোই লাগে। এখানেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করেন। সেই থেকে এখানেই জীবন কাটছে তার।

এই বিমানবন্দরে মোট তিনটি টার্মিনাল রয়েছে। এর মধ্যে ২ নম্বর টার্মিনালকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছেন ওয়েই। কারণ এই স্থানটি বেশ উষ্ণ। আর বাইরে থাকতে হলে ঠান্ডায় কষ্ট পেতে হবে। এরপর ১৪ বছর ধরে এটাই তার আস্তানা, তার একার সংসারের ঠিকানা!

 

ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েই নিজের জীবনের কাহিনি শুনিয়েছেন। ওয়েইয়ের বাড়ি বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১২ মাইল দূরে। কিন্তু তিনি বাড়ি ফিরে যেতে চান না। তার কথায়, আমি আমার বাড়িতে ফিরে যেতে পারব না। কারণ সেখানে আমার কোনো স্বাধীনতা নেই। আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে বলেছে, আমি যদি আমার বাড়িতে থাকতে চাই, তাহলে আমাকে মদ্যপান এবং ধূমপান ছাড়তে হবে।

 

আর যদি আমি যদি নেশা না ছাড়তে পারি, তাহলে সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে যে ১ হাজার ইউয়ান ভাতা পাই। তার পুরোটাই আমার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিতে হবে। আর সেটা যদি আমি করি তাহলে আমি আমর সিগারেট, মদ কোথা থেকে কীভাবে কিনব?

bbbb

বিমানবন্দর চত্বরেই গুছিয়ে সংসার পেতেছেন এই ওয়েই। যেখানে বিমানযাত্রী ও তাদের আত্মীয়রা অপেক্ষা করেন, সেই আসনের সারির মাঝেই রয়েছে তার ছোট্ট রান্নাঘর! তার কাছে একটি ইলেক্ট্রিক কুকার রয়েছে। যেটা তিনি তার বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন।

 

এছাড়াও প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র ও স্লিপিং ব্যাগ সেট আপ করেছেন সেখানে। সাধারণত সারা দিনটা বিমানবন্দরের এদিক সেদিক ঘুরেই কাটিয়ে দেন ওয়েই। নিজের প্রয়োজনের জিনিসপত্র কেনেন। সারাদিন ধরে কত মানুষ এখানে আসেন, তাদের দেখেন! এভাবেই কেটে যায় গোটা দিন। তারপর রাত হলে খাওয়া সেরে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। রান্নাঘর তখন শোওয়ার ঘর হয়ে যায়! এভাবেই এক এক করে কেটে গেছে ১৪ বছর।

 

তবে ইরানের মেহরান করিমি নাসেরি কিংবা চীনের ওয়েই জিনগুও নয়, আরও অনেকেই বিমানবন্দরে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন। তবে তারা বেশিরভাগই থাকে গৃহহীন। খুব বেশি দিন তারা এক স্থানে থাকেনও না।

 

তাদের মতো আরও একজন তুরস্কের বায়রাম টেপেলি। তিনি আতাতুর্ক বিমানবন্দরে ২৭ বছর কাটিয়েছেন। ১৯৯১ সালে পারিবারিক সমস্যার কারণে এই বিমানবন্দরে চলে এসেছিলেন। সূত্র: ডেইলি মেইল

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com