স্ত্রীকে খুন করে হয়ে যায় ‘সাংবাদিক’ ১৭ বছর পালিয়ে বেড়ানোর পর ধরা

২০০৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল (৪৭)। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে সাংবাদিক ছদ্মবেশ ধারণ করে ১৭ বছর আত্মগোপনে ছিল আশরাফ হোসেন। এ সময় ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে আত্মগোপন করে সে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার সাভার এলাকা থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
গতকাল সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। খন্দকার আল মঈন জানান, সোনারগাঁয়ের একটি হত্যা মামলার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করি। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশালে অভিযান পরিচালনা করা হয়, সেখানে তাকে ধরা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু র‌্যাবের কর্মকর্তারা  থেমে থাকেননি। তদন্তের একপর্যায়ে সোনারগাঁয়ে র‌্যাবের কর্মকর্তারা গিয়ে সেই সময়কার আশরাফ হোসেনের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তার অবস্থান এবং পরিচয় জানতে পারেন।

 

তিনি আরও জানান, কামাল তার স্ত্রী সানজিদাকে হত্যার পর সিলিং ফ্যানের সঙ্গে সানজিদার লাশ ঝুঁঁলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায় আশরাফ। এ সংক্রান্তে অপমৃত্যু মামলা হয়। লাশের সুরতহাল শেষে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় আসামিকে ফৌজদারী কার্যবিধি’র ৫৪ ধারা মোতাবেক গ্রেপ্তারপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। সে ১২ দিন পর তার শশুরের সহায়তায় জামিন পায়। জামিন পাওয়ার পরপরই হঠাৎ করে একদিন সে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনকালীন কখনই সে নিজ স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালী ও কর্মস্থল, নিজ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি।

 

তিনি আরও জানান, কামাল শ্বশুরবাড়ির লোকদের বোঝাতে সক্ষম হয় তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ কারণে তারাই তার জামিনের ব্যবস্থা করে। জামিন পাওয়ার পরপরই আশরাফ আত্মগোপনে চলে যায়। জেলা ও দায়রা জজ আদালত নারায়ণগঞ্জে বিচার শেষে পলাতক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় এবং হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ৩৬৮ ধারায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, আশরাফ হোসেন ১৯৯৮ সালে হিসাব বিজ্ঞান থেকে বিকম পাস করে নারায়ণগঞ্জের  সোনারগাঁয়ে একটি সিমেন্ট কোম্পানিতে ২০০১ সালে চাকরি শুরু করেন। ২০০৩ সালে সানজিদা আক্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরে তারা কোম্পানির স্টাফ কোয়ার্টারে থাকা শুরু করেন। প্রথম স্ত্রীর কাছে গোপন রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি।

 

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, জামিন পাওয়ার পর পালিয়ে এসে ২০০৬ সাল থেকে আশুলিয়া এলাকায় অবস্থান করে কামাল। সাপ্তাহিক মহানগর বার্তার সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেয়। ২০০৯ সালে আশুলিয়া  প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ পায়। ২০১৩-১৪ সালে প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়। ২০২০ সাল থেকে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করে। বর্তমানে আশরাফ প্রেস ক্লাবের সদস্য এবং স্বদেশ বিচিত্রা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে সে সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন গার্মেন্ট ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছে। তার একটি কনসালটেন্সি ফার্ম রয়েছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ যাচাই করা হতো। তার বাবার নাম নুরুল গনি। তার গ্রামের বাড়ি  নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ এলাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি আনম ইমরান খান ইমন ও এএসপি মো. আল-আমিন প্রমুখ।  সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আ.লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে তথ্য উপদেষ্টার ‘কয়েকটি কথা’

» আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশে জনতার ঢল, এখনও চলছে বিক্ষোভ

» প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের জুমার নামাজ আদায়

» আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সাগর গ্রেপ্তার

» আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংলাপ চান: রাশেদ খান

» আ. লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না, সেটি বিএনপির বিষয় নয় : মঈন খান

» আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে: সারজিস

» জুলাই ফাউন্ডেশনে নতুন সিইও, শহিদের বাবা বললেন ‘মানি না’

» মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন ১৫০ জন, আটক ১৫ জন

» খেলার জার্সি পরে যমুনার সামনে রমনার ডিসি মাসুদ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

স্ত্রীকে খুন করে হয়ে যায় ‘সাংবাদিক’ ১৭ বছর পালিয়ে বেড়ানোর পর ধরা

২০০৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল (৪৭)। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে সাংবাদিক ছদ্মবেশ ধারণ করে ১৭ বছর আত্মগোপনে ছিল আশরাফ হোসেন। এ সময় ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে আত্মগোপন করে সে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার সাভার এলাকা থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
গতকাল সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। খন্দকার আল মঈন জানান, সোনারগাঁয়ের একটি হত্যা মামলার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করি। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশালে অভিযান পরিচালনা করা হয়, সেখানে তাকে ধরা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু র‌্যাবের কর্মকর্তারা  থেমে থাকেননি। তদন্তের একপর্যায়ে সোনারগাঁয়ে র‌্যাবের কর্মকর্তারা গিয়ে সেই সময়কার আশরাফ হোসেনের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তার অবস্থান এবং পরিচয় জানতে পারেন।

 

তিনি আরও জানান, কামাল তার স্ত্রী সানজিদাকে হত্যার পর সিলিং ফ্যানের সঙ্গে সানজিদার লাশ ঝুঁঁলিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায় আশরাফ। এ সংক্রান্তে অপমৃত্যু মামলা হয়। লাশের সুরতহাল শেষে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় আসামিকে ফৌজদারী কার্যবিধি’র ৫৪ ধারা মোতাবেক গ্রেপ্তারপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। সে ১২ দিন পর তার শশুরের সহায়তায় জামিন পায়। জামিন পাওয়ার পরপরই হঠাৎ করে একদিন সে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনকালীন কখনই সে নিজ স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালী ও কর্মস্থল, নিজ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি।

 

তিনি আরও জানান, কামাল শ্বশুরবাড়ির লোকদের বোঝাতে সক্ষম হয় তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ কারণে তারাই তার জামিনের ব্যবস্থা করে। জামিন পাওয়ার পরপরই আশরাফ আত্মগোপনে চলে যায়। জেলা ও দায়রা জজ আদালত নারায়ণগঞ্জে বিচার শেষে পলাতক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় এবং হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ৩৬৮ ধারায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, আশরাফ হোসেন ১৯৯৮ সালে হিসাব বিজ্ঞান থেকে বিকম পাস করে নারায়ণগঞ্জের  সোনারগাঁয়ে একটি সিমেন্ট কোম্পানিতে ২০০১ সালে চাকরি শুরু করেন। ২০০৩ সালে সানজিদা আক্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরে তারা কোম্পানির স্টাফ কোয়ার্টারে থাকা শুরু করেন। প্রথম স্ত্রীর কাছে গোপন রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি।

 

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, জামিন পাওয়ার পর পালিয়ে এসে ২০০৬ সাল থেকে আশুলিয়া এলাকায় অবস্থান করে কামাল। সাপ্তাহিক মহানগর বার্তার সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেয়। ২০০৯ সালে আশুলিয়া  প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ পায়। ২০১৩-১৪ সালে প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়। ২০২০ সাল থেকে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করে। বর্তমানে আশরাফ প্রেস ক্লাবের সদস্য এবং স্বদেশ বিচিত্রা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে সে সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন গার্মেন্ট ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছে। তার একটি কনসালটেন্সি ফার্ম রয়েছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ যাচাই করা হতো। তার বাবার নাম নুরুল গনি। তার গ্রামের বাড়ি  নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ এলাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি আনম ইমরান খান ইমন ও এএসপি মো. আল-আমিন প্রমুখ।  সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com