সোরিয়াসিস কি ছোঁয়াচে?

 ডা. এস. এম. মলি : সোরিয়াসিস এক ধরনের সাধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদি চর্ম রোগ, যাতে মলিন রুপালি আঁশযুক্ত ছাপ দেখা যায়, যা ওঠে যাওয়ার পর সামান্য রক্তক্ষরণ হয়। সারা বিশ্বে ৩% মানুষ সোরিয়াসিস রোগ আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এ রোগর প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়ে চলছে। অনেক সময় বগলে, কুচকিতে, হাত ও পায়ের ভাঁজে এবং পায়ুপথের ভাঁজে আঁশযুক্ত লাল বর্ণের ক্ষত দেখা যায় তাকে ইনভার্স সোরিয়াসিস বলে।

 

এটা কি ছোঁয়াচে রোগ: সোরিয়াসিস কোনো ধরনের ছোঁয়াচে বা সংক্রামক চর্ম রোগ নয়।

সোরিয়াসিসের লক্ষণ : ত্বকের সোরিয়াসিস বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। শরীরে যখন সাদা চকচকে মাছের বড় বড় আঁশের মতো ক্ষত দেখা যায় তখন তাকে প্রাক সোরিয়াসিস বলে যা শরীরের যে কোনো স্থানে হতে পারে, তবে কনুই, হাঁটু এবং মাথার ত্বকে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

 

সোরিয়াসিস কি নখকে আক্রান্ত করে : হ্যাঁ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্বক ও অস্থি সন্ধির সোরিয়াসিসে আক্রান্ত রোগীদের নখে সোরিয়াসিস হয়। তবে অনেক সময় শুধু নখেই সোরিয়াসিস হতে পারে।

 

সোরিয়াসিসে কি অস্থি সন্ধি আক্রান্ত হতে পারে : হ্যাঁ, সোরিয়াসিস আক্রান্তরা আনুমানিক এক তৃতীয়াংশ অস্থি সন্ধির প্রদাহে ভুগতে পারে।

কীভাবে সোরিয়াসিস রোগ নির্ণয় করা হয়:  রোগীর ইতিহাস, উপসর্গ, বাহ্যিক ত্বক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের লক্ষণ শনাক্তকরণ, চিকিৎসার ইতিহাস এবং রোগ সম্পর্কিত পারিবারিক ইতিহাস সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় করা হয়। কখনো কখনো নিশ্চিত রোগ নির্ণয়ের জানা ত্বক কেটে তৃকের কলা স্থান অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয় (বায়েন্সি ও হিস্টোপ্যাথলজি)। বৃষ্টির ফোঁটার মতো পুরো শরীরে সোরিয়াসিস ক্ষতকে গ্যাটেট সোরিয়াসিস বলে। সাধারণত গলায় জীবাণুঘটিত সংক্রমণের পর এ ধরনের সোরিয়াসিস দেখা যায়।

কোনো কোনো ওষুধ সেবনে সোরিয়াসিস বাড়ে : উচ্চ রক্তচাপের জন্য বিটারকা, এসিই ইনহিবিটর, ব্যথার জন্য NSAID জাতীয় ওষুধ, লিথিয়াম, ম্যালেরিয়া ওষুধে সোরিয়াসিস বাড়ে। তাই এসব ওষুধ আপনার চর্মরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতীত খাবেন না। খাবার অথবা লাগানোর ঔষধ হঠাৎ বন্ধ করলে সেরিয়াসিস জটিল আকার ধারণ করতে পারে। যে কোনো কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে অবশ্যই আপনার সেবিয়াসিস রোগের কথা উল্লেখ করবেন।

 

সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে কি চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ প্রচলিত আছে?

সোরিয়াসিস চিকিৎসাকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
টপিকাল চিকিৎসা- টপিকাল চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত করটিকোস্টেরয়েড, ভিটামিন ডি এনালগ, এন্ড্রালিন, স্যালিসাইলিক এসিড, কোলটার এবং ময়েশ্চারাইজার। ব্যবহার করা হয়। ফটোথেরাপি বিভিন্ন ধরনের ফটোথেরাপি যেমন PUVA, UVA এবং UVB মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এবং পদ্ধতিগত চিকিৎসা- সিস্টেমিক চিকিৎসায় মেথাট্রেক্সেট, এসিট্রেটিন, সাইক্লোম্পারিন, এপ্রিমিলাস্ট ও বায়োলজিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
মানসিক চাপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। আমাদের শরীর এই চাপ গ্রহণ করে অনেক উপায়ে এর মধ্যে প্রদাহ বৃষ্টি একটি কারণে এই প্রদাহ সোরিয়াসিসকে বহুজনে বাড়িয়ে নিতে পারে।

সোরিয়াসিস কি নিরাময়যোগ্য ব্যাধি: এখন পর্যন্ত সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। এই রোগ সেরে যাওয়ার পর বার বারই হতে পারে। তাই এই রোগের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য রোগের উপসর্গকে দমিয়ে রাখা। যদিও সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য ব্যাধি নয়, তথাপি সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে দীর্ঘকাল ভালো থাকা যায়।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» অসুস্থ সাংবাদিক মাসুদ কামালকে তারেক রহমানের টেলিফোন

» মহাসমাবেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনের ১৬ দফা ঘোষণাপত্র

» হাসিনার পতন না হলে কোন কোন টিভি চ্যানেল পুরস্কার পেত? প্রশ্ন হাসনাতের

» দেশের বাজারে আবারও কমেছে স্বর্ণের দাম

» আগামীকাল পরীক্ষায় বসছেন সেই আনিসা, দেবেন বাকি সব পরীক্ষা

» পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয় : সালাহউদ্দিন

» ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সরকার বদ্ধপরিকর : প্রেস সচিব

» ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের ফুলেল শুভেচ্ছা

» কবি আবুল হোসেনের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ জুন

» দেওয়ানগঞ্জে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় স্কুল শিক্ষক নিহত, আহত-১ 

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সোরিয়াসিস কি ছোঁয়াচে?

 ডা. এস. এম. মলি : সোরিয়াসিস এক ধরনের সাধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদি চর্ম রোগ, যাতে মলিন রুপালি আঁশযুক্ত ছাপ দেখা যায়, যা ওঠে যাওয়ার পর সামান্য রক্তক্ষরণ হয়। সারা বিশ্বে ৩% মানুষ সোরিয়াসিস রোগ আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এ রোগর প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়ে চলছে। অনেক সময় বগলে, কুচকিতে, হাত ও পায়ের ভাঁজে এবং পায়ুপথের ভাঁজে আঁশযুক্ত লাল বর্ণের ক্ষত দেখা যায় তাকে ইনভার্স সোরিয়াসিস বলে।

 

এটা কি ছোঁয়াচে রোগ: সোরিয়াসিস কোনো ধরনের ছোঁয়াচে বা সংক্রামক চর্ম রোগ নয়।

সোরিয়াসিসের লক্ষণ : ত্বকের সোরিয়াসিস বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। শরীরে যখন সাদা চকচকে মাছের বড় বড় আঁশের মতো ক্ষত দেখা যায় তখন তাকে প্রাক সোরিয়াসিস বলে যা শরীরের যে কোনো স্থানে হতে পারে, তবে কনুই, হাঁটু এবং মাথার ত্বকে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

 

সোরিয়াসিস কি নখকে আক্রান্ত করে : হ্যাঁ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্বক ও অস্থি সন্ধির সোরিয়াসিসে আক্রান্ত রোগীদের নখে সোরিয়াসিস হয়। তবে অনেক সময় শুধু নখেই সোরিয়াসিস হতে পারে।

 

সোরিয়াসিসে কি অস্থি সন্ধি আক্রান্ত হতে পারে : হ্যাঁ, সোরিয়াসিস আক্রান্তরা আনুমানিক এক তৃতীয়াংশ অস্থি সন্ধির প্রদাহে ভুগতে পারে।

কীভাবে সোরিয়াসিস রোগ নির্ণয় করা হয়:  রোগীর ইতিহাস, উপসর্গ, বাহ্যিক ত্বক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের লক্ষণ শনাক্তকরণ, চিকিৎসার ইতিহাস এবং রোগ সম্পর্কিত পারিবারিক ইতিহাস সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় করা হয়। কখনো কখনো নিশ্চিত রোগ নির্ণয়ের জানা ত্বক কেটে তৃকের কলা স্থান অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয় (বায়েন্সি ও হিস্টোপ্যাথলজি)। বৃষ্টির ফোঁটার মতো পুরো শরীরে সোরিয়াসিস ক্ষতকে গ্যাটেট সোরিয়াসিস বলে। সাধারণত গলায় জীবাণুঘটিত সংক্রমণের পর এ ধরনের সোরিয়াসিস দেখা যায়।

কোনো কোনো ওষুধ সেবনে সোরিয়াসিস বাড়ে : উচ্চ রক্তচাপের জন্য বিটারকা, এসিই ইনহিবিটর, ব্যথার জন্য NSAID জাতীয় ওষুধ, লিথিয়াম, ম্যালেরিয়া ওষুধে সোরিয়াসিস বাড়ে। তাই এসব ওষুধ আপনার চর্মরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতীত খাবেন না। খাবার অথবা লাগানোর ঔষধ হঠাৎ বন্ধ করলে সেরিয়াসিস জটিল আকার ধারণ করতে পারে। যে কোনো কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে অবশ্যই আপনার সেবিয়াসিস রোগের কথা উল্লেখ করবেন।

 

সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে কি চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ প্রচলিত আছে?

সোরিয়াসিস চিকিৎসাকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
টপিকাল চিকিৎসা- টপিকাল চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত করটিকোস্টেরয়েড, ভিটামিন ডি এনালগ, এন্ড্রালিন, স্যালিসাইলিক এসিড, কোলটার এবং ময়েশ্চারাইজার। ব্যবহার করা হয়। ফটোথেরাপি বিভিন্ন ধরনের ফটোথেরাপি যেমন PUVA, UVA এবং UVB মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এবং পদ্ধতিগত চিকিৎসা- সিস্টেমিক চিকিৎসায় মেথাট্রেক্সেট, এসিট্রেটিন, সাইক্লোম্পারিন, এপ্রিমিলাস্ট ও বায়োলজিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
মানসিক চাপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। আমাদের শরীর এই চাপ গ্রহণ করে অনেক উপায়ে এর মধ্যে প্রদাহ বৃষ্টি একটি কারণে এই প্রদাহ সোরিয়াসিসকে বহুজনে বাড়িয়ে নিতে পারে।

সোরিয়াসিস কি নিরাময়যোগ্য ব্যাধি: এখন পর্যন্ত সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। এই রোগ সেরে যাওয়ার পর বার বারই হতে পারে। তাই এই রোগের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য রোগের উপসর্গকে দমিয়ে রাখা। যদিও সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য ব্যাধি নয়, তথাপি সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে দীর্ঘকাল ভালো থাকা যায়।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com