রোমানিয়া। ইউরোপের দেশ। যাওয়ার জন্য বিভোর সিলেটের যুবকরা। দল বেঁধে বেঁধে ছুটছেন। মাত্র সাড়ে ৬ লাখ টাকায় যাওয়ার সুযোগ। আর এতে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছিলো ছাতকের আমিনুর রহমান। নগরের জিন্দাবাজারে হক সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ট্র্যাভেলস খুলে এই প্রতারণা করেছেন। তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে শতাধিক যুবকের স্বপ্ন ফিঁকে হয়ে গেছে।
এখন সামনে অন্ধকার দেখছেন তারা। গতকাল এসেছিলেন আমিন ট্র্যাভেলসে। হাহাকার করছেন তারা। জানিয়েছেন; আমিনুর রহমানের প্রতারণার শিকার হয়েছে প্রায় ৩শ’ যুবক। টাকা নিয়েও ফ্লাইট দিতে পারেননি। এখন পালিয়ে গেছেন দুবাইয়ে। সেখান থেকে ক্ষোভ থামানোর চেষ্টা করছেন। ঘটনার জানাজানি গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন ১১ যুবককে নিয়ে যান ঢাকায়। রাত সাড়ে ১১টায় রোমানিয়ার ফ্লাইট দেয়ার কথা ছিল। এয়ারপোর্টের পাশে একটি হোটেলে রাখেন তাদের। তার আগে করোনার জন্য নমুনা পরীক্ষা করার কথা ছিল। এ কারণে অপেক্ষায় ছিলেন যুবকরা। মৌলভীবাজারের মাহবুবুর রহমান মঞ্জু নামের এক যুবক গতকাল জানিয়েছেন, তিনি সহ ১১ জন যুবককে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ফ্লাইট দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে যান। এরপর ওইদিন বিকাল ৪টার পর থেকে আমিনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সিলেটের অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পাননি। করোনা টেস্ট না হওয়ার কারণে তারা এয়ারপোর্টের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। সিলেটে আমিনের বাসায় খোঁজ করেও পাননি। এরপরই তাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তারা প্রতারিত হয়েছেন। ফ্লাইটের সময় শেষ হয়ে গেলেও আমিন এলেন না। এরপর তারা সিলেটে ফিরে আসেন। প্রতারিত যুবকরা জানিয়েছেন, আমিনুর রহমান তার আমিন ট্র্যাভেলসের মাধ্যমে রোমানিয়ায় যাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার প্রথমে ১১ জনকে নিয়ে যান। এরপর শুক্রবার, শনিবার এবং রোববার পর্যন্ত অর্ধশতাধিক যুবককের ফ্লাইট ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আমিন উধাও হয়ে যাওয়ার কারণে সবারই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এরই মধ্যে তারা সবাই ভিসা ও পারমিট হাতে পাওয়ায় পুরো টাকাই পরিশোধ করেছেন। তারা জানান, ইতিমধ্যে ভিসা দিয়ে ১০-১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আমিনুর রহমান। শুক্রবার বিকালে প্রতারিত হওয়া এক যুবকের সঙ্গে কথা হয়েছে আমিনুর রহমানের। তিনি বর্তমানে দুবাই রয়েছেন। জানান- ভিসা নিয়ে তাদের পার্টনারদের মধ্যে জটিলতা চলছে। এ নিয়ে মারামারি হয়েছে। তিনি সবার ফ্লাইট কনফার্ম করতে দুবাই গেছেন। ফিরে এসে ফ্লাইট দেয়া শুরু করবেন। কিন্তু আমিনুর রহমানের সেই কথায় আশ্বস্থ হতে পারছেন না প্রতারিতরা। স্থানীয় কয়েকজন এজেন্ট জানিয়েছেন, রোমানিয়ার ভিসা নিতে হয় ভারত থেকে। সব প্রসেসিংয়ে সময় ব্যয় হয় ২-৩ মাস। কিন্তু আমিনুর রহমান এক মাসের ভেতরে ভিসা নিয়ে এসেছেন। ফলে এসব ভিসার বৈধতা নিয়েও সংশয় কাটছে না। অনেকেই ধারণা করছেন- জাল ভিসা দিয়ে আমিনুর রহমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এরপর ফ্লাইট দেয়ার আগেই তিনি দুবাই চলে যান। উপশহরে তার পরিবার বসবাস করে। শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগীরা উপশহরের ওই বাসায় গিয়ে তালাবদ্ধ পান। গতকাল আমিনুর রহমানের মালিকানাধীন আমিন ট্র্যাভেলসে গিয়ে বেশ কয়েকজন প্রতারিত হওয়ার তালিকা পাওয়া যায়। এরা সবাই ইতিমধ্যে সাড়ে ৬ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিয়ে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন- মাহমুদ আহমদ, আবু হামিদ, আজমল হোসেন, বুরহান উদ্দিন, আকবর আলী, জুবায়ের আহমদ, নাসিম আহমদ, মাহফুজ আহমদ, এমদাদ হোসেন, রহমান, সাইদুর রহমান, নবীন, হোসেন, মোর্শেদ আহমদ, আল আমীন, মালেক, শিবরন আলম, ফয়জুল ইসলাম, শাকিল আহমদ, শাহীন আহমদ, সুমন আহমদ, মাহবুবুর রহমান ও জুনেদ আহমদ। এদিকে- আমিনুর রহমান পালিয়ে যাওয়ার খবরে দুপুরে শতাধিক যুবক ভিড় করেন আমিন ট্র্যাভেলসে। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা জানান, কেউ কেউ জমি বিক্রি করে এনে টাকা দিয়েছেন। ভিসা দিলেও ফ্লাইট না দিয়েই পালিয়ে গেছে আমিনুর রহমান। এ কারণে তারা প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। দক্ষিণ সুরমার আব্দুল মতিন ও মাওলানা আব্দুল গনি নামে দু’ভাইয়ের কাছ থেকে ১৩ লাখ, ফখরুল ইসলামের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ, আলী হোসেন শাহীনের কাছ থেকে ৭ লাখ, সজল বৈদ্যের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা, কাজল দেবনাথের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা, ফেঞ্চুগঞ্জের সুফিয়ানুল মাছুমের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, জালালপুরের মিজানুর রহমানের কাছ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা, দক্ষিণ সুরমার নুরুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ ও মাজেদুল ইসলামের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এদিকে আমিনুর রহমানের প্রতারণার শিকার হওয়া যুবকরা দুপুরে ৯৯৯ ফোন করে হক সুপার মার্কেটে পুলিশ নিয়ে আসেন।
বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরে বিকালে মামলা করতে কোতোয়ালি থানায় যান। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে আদালতে এ ব্যাপারে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সূএ:মানবজমিন