সিজার পরবর্তী নরমাল ডেলিভারি

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. উম্মুল নুসরাত জাহান : আমাদের দেশে অনেকেরই ধারণা একবার সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি হলে পরবর্তী প্রতিটি প্রেগনেন্সিতে সিজার করার দরকার হয়। ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব অবস্ট্রেশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টের গাইডলাইন অনুযায়ী সিজারিয়ান ডেলিভারির পরও ৭৫-৮০ ভাগ মা পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে নরমাল ভেজাইনাল ডেলিভারি করানোর জন্য উপযুক্ত থাকেন।

 

এদের মধ্যে ৬০-৭৫ ভাগ মায়ের কোনো সমস্যা ছাড়াই সফলভাবে নরমাল ভেজাইনাল ডেলিভারি সম্ভব হয়। কিন্তু ডেলিভারি ট্রায়াল দেওয়ার আগে দেখতে হবে কোন কোন মা এই ডেলিভারির জন্য উপযুক্ত। তাই আগের সিজার সম্পর্কে জানতে হবে। যেমন-

আগের সিজারের সংখ্যা : যাদের আগে একটি সিজার হয়েছে, তারাই কেবল পরের প্রেগন্যান্সিতে ভেজাইনাল ডেলিভারি ট্রায়াল দিতে পারে।

 

কী কারণে হয়েছিল : সিজার এমন কিছু কারণে হয়েছিল যা পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা কম যেমন- বাচ্চার অ্যাবনরমাল পজিশনের কারণে সিজার হলে কিংবা বাচ্চা বা মায়ের কোনো সমস্যার কারণে সিজার হলে যা বর্তমান প্রেগনেন্সিতে অনুপস্থিত।

 

আগে সিজারের স্থানটি কতখানি মজবুত আছে : Lower uterine caessarean section বা LUCS (জরায়ুর নিচের অংশে সেলাই) এর ক্ষেত্রেই কেবল পরবর্তীতে ভেজাইনাল ডেলিভারি ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ থাকে, এক্ষেত্রে আগের সেলাই ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা প্রতি ২০০ জনে একজনের। অন্যদিকে ক্লাসিক্যাল সিজারের ক্ষেত্রে সেলাই ফাটার হার ১.৫%। দুই প্রেগনেন্সির মধ্যে অন্তত দুই বছরের গ্যাপ থাকা ভালো হয়। আগের প্রেগনেন্সিতে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে বা সিজারের পর ইনফেকশন হলে সেলাইয়ের স্থানটি দুর্বল করে ফেলে যা পরে ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

 

এ ছাড়া বর্তমান প্রেগনেন্সিতে মায়ের অন্য কোনো জটিলতা যেমন উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে তাকে নরমাল ভেজাইনাল ডেলিভারি ট্রায়ালের জন্য উপযুক্ত ধরা হয় না। বাচ্চার ওজন চার কেজির কম থাকা এবং প্রসবের রাস্তা যথেষ্ট প্রশস্ত থাকাও ভেজাইনাল ডেলিভারির একটি পূর্ব শর্ত। সবকিছু ঠিক থাকলে এই ডেলিভারির সুবিধা-অসুবিধা মা ও অভিভাবকদের অবহিত করতে হবে।

 

ডেলিভারি এমন হসপিটালে ট্রায়াল দিতে হবে যেখানে ইমার্জেন্সি সিজার করার দরকার হলে তা দ্রুত এরেঞ্জ করা সম্ভব। বাচ্চা এবং মায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করাটা এক্ষেত্রে জরুরি বিষয়। উন্নত দেশে লেবারের সময়   CTG (cardio-tocograph) মেশিনের মাধ্যমে বাচ্চাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। ২০ থেকে ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে ভেজাইনাল ডেলিভারি সম্ভব হয় না এবং ইমার্জেন্সি সিজারের দরকার হয়। এই ডেলিভারির সময় সঠিক মনিটরিং না হলে মা ও বাচ্চার জটিলতার হার বেড়ে যায়।

 

অপরদিকে সফল ভেজাইনাল ডেলিভারির মাধ্যমে শরীরে বাড়তি অস্ত্রোপচার এড়ানো যায়। শরীরে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিস্যু এডহেশন এবং টিস্যু ইনজুরির সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং এ ডেলিভারির অস্ত্রোপচারজনিত সব রিস্ক থেকে মুক্ত। কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ হাসপাতালে এ ধরনের ডেলিভারি করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, এর কারণ দক্ষ লোকবলের অভাব, মা ও বাচ্চার মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অপ্রতুলটা এবং ভেজাইনাল ডেলিভারিতে মায়েদের ভীতি।

লেখক: এমবিবিএস, এফসিপিএস (অবস-গাইনি), কনসালটেন্ট (গাইনি)
বি আর বি হসপিটালস লিমিটেড, ঢাকা।   সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» দেশে শ্রমিক সমাজ সবচেয়ে অবহেলিত : রিজভী

» বসিলা ও বেড়িবাঁধ সড়কের যানজট নিরসনে ডিএমপির নতুন নির্দেশনা

» মিরাজের ঘূর্ণিতে তিনদিনেই জিতল বাংলাদেশ

» পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর, কেউ হামলা করার সাহস করবে না : মরিয়ম

» মে দিবস উপলক্ষে তারেক রহমানের বার্তা

» মূল্যস্ফীতির চাপে শ্রমজীবী মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছেন: তারেক রহমান

» স্বাধীনতার ৫৪ বছরে মানুষ যা আশা করেছিল পেয়েছে তার উল্টোটা: জামায়াত আমির

» ভর্তির পরীক্ষায় পাস করলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

» জামালপুরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রেফতার

» সম্মানিত হজযাত্রীদের জন্য বাংলাদেশি টাকায় রোমিং প্যাকেজ কেনার সুবিধা আনলো রবি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সিজার পরবর্তী নরমাল ডেলিভারি

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. উম্মুল নুসরাত জাহান : আমাদের দেশে অনেকেরই ধারণা একবার সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি হলে পরবর্তী প্রতিটি প্রেগনেন্সিতে সিজার করার দরকার হয়। ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব অবস্ট্রেশিয়ান অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টের গাইডলাইন অনুযায়ী সিজারিয়ান ডেলিভারির পরও ৭৫-৮০ ভাগ মা পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে নরমাল ভেজাইনাল ডেলিভারি করানোর জন্য উপযুক্ত থাকেন।

 

এদের মধ্যে ৬০-৭৫ ভাগ মায়ের কোনো সমস্যা ছাড়াই সফলভাবে নরমাল ভেজাইনাল ডেলিভারি সম্ভব হয়। কিন্তু ডেলিভারি ট্রায়াল দেওয়ার আগে দেখতে হবে কোন কোন মা এই ডেলিভারির জন্য উপযুক্ত। তাই আগের সিজার সম্পর্কে জানতে হবে। যেমন-

আগের সিজারের সংখ্যা : যাদের আগে একটি সিজার হয়েছে, তারাই কেবল পরের প্রেগন্যান্সিতে ভেজাইনাল ডেলিভারি ট্রায়াল দিতে পারে।

 

কী কারণে হয়েছিল : সিজার এমন কিছু কারণে হয়েছিল যা পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা কম যেমন- বাচ্চার অ্যাবনরমাল পজিশনের কারণে সিজার হলে কিংবা বাচ্চা বা মায়ের কোনো সমস্যার কারণে সিজার হলে যা বর্তমান প্রেগনেন্সিতে অনুপস্থিত।

 

আগে সিজারের স্থানটি কতখানি মজবুত আছে : Lower uterine caessarean section বা LUCS (জরায়ুর নিচের অংশে সেলাই) এর ক্ষেত্রেই কেবল পরবর্তীতে ভেজাইনাল ডেলিভারি ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ থাকে, এক্ষেত্রে আগের সেলাই ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা প্রতি ২০০ জনে একজনের। অন্যদিকে ক্লাসিক্যাল সিজারের ক্ষেত্রে সেলাই ফাটার হার ১.৫%। দুই প্রেগনেন্সির মধ্যে অন্তত দুই বছরের গ্যাপ থাকা ভালো হয়। আগের প্রেগনেন্সিতে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে বা সিজারের পর ইনফেকশন হলে সেলাইয়ের স্থানটি দুর্বল করে ফেলে যা পরে ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

 

এ ছাড়া বর্তমান প্রেগনেন্সিতে মায়ের অন্য কোনো জটিলতা যেমন উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে তাকে নরমাল ভেজাইনাল ডেলিভারি ট্রায়ালের জন্য উপযুক্ত ধরা হয় না। বাচ্চার ওজন চার কেজির কম থাকা এবং প্রসবের রাস্তা যথেষ্ট প্রশস্ত থাকাও ভেজাইনাল ডেলিভারির একটি পূর্ব শর্ত। সবকিছু ঠিক থাকলে এই ডেলিভারির সুবিধা-অসুবিধা মা ও অভিভাবকদের অবহিত করতে হবে।

 

ডেলিভারি এমন হসপিটালে ট্রায়াল দিতে হবে যেখানে ইমার্জেন্সি সিজার করার দরকার হলে তা দ্রুত এরেঞ্জ করা সম্ভব। বাচ্চা এবং মায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করাটা এক্ষেত্রে জরুরি বিষয়। উন্নত দেশে লেবারের সময়   CTG (cardio-tocograph) মেশিনের মাধ্যমে বাচ্চাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। ২০ থেকে ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে ভেজাইনাল ডেলিভারি সম্ভব হয় না এবং ইমার্জেন্সি সিজারের দরকার হয়। এই ডেলিভারির সময় সঠিক মনিটরিং না হলে মা ও বাচ্চার জটিলতার হার বেড়ে যায়।

 

অপরদিকে সফল ভেজাইনাল ডেলিভারির মাধ্যমে শরীরে বাড়তি অস্ত্রোপচার এড়ানো যায়। শরীরে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিস্যু এডহেশন এবং টিস্যু ইনজুরির সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং এ ডেলিভারির অস্ত্রোপচারজনিত সব রিস্ক থেকে মুক্ত। কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ হাসপাতালে এ ধরনের ডেলিভারি করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়, এর কারণ দক্ষ লোকবলের অভাব, মা ও বাচ্চার মনিটরিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অপ্রতুলটা এবং ভেজাইনাল ডেলিভারিতে মায়েদের ভীতি।

লেখক: এমবিবিএস, এফসিপিএস (অবস-গাইনি), কনসালটেন্ট (গাইনি)
বি আর বি হসপিটালস লিমিটেড, ঢাকা।   সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com