সাঙ্গু নদীতে ফুল দিয়ে বিজু উৎসব শুরু

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : ফুল দিয়ে জলবুদ্ধ ও মা গঙ্গাদেবীর পূজা এবং ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক উৎসব বিজু-বিষু।

 

শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টায় বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মানুষজন জলবুদ্ধ ও মা-গঙ্গাদেবীকে ফুল নিবেদনের মাধ্যমে বিজু ও বিষু উৎসবের সূচনা করেন।

ভোর থেকেই নারী, পুরুষ ও শিশুরা বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল সংগ্রহ করে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে কলাপাতায় সাজানো ফুল নিয়ে সাঙ্গু নদীর তীরে জড়ো হন। মোমবাতি জ্বালিয়ে, ফুল অর্পণ করে অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তারা।

 

সেইসঙ্গে প্রার্থনা করেন, অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট যেন নদীর স্রোতের মতো ভেসে যায় এবং ভবিষ্যত দিনগুলো শান্তি ও সমৃদ্ধিতে কাটে।

 

সিদ্ধার্থ চাকমা বলেন, অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য জলবুদ্ধ ও মা গঙ্গাদেবীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আগামী বছর সুখে শান্তিতে থাকার প্রার্থনা জানিয়ে ফুলবিজু উদযাপন করে থাকি।

 

মিনতি চাকমা বলেন, ভোরে উঠে বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল সংগ্রহ করে নদীতে জলবুদ্ধ ও মা গঙ্গার উদ্দেশ্য ফুল নিবেদন করে, অতীতে ভুল করে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। আগামী বছর সুখে শান্তিতে থাকার জন্য আর্শীবাদ চেয়ে আজকে ফুলবিজুর আয়োজনে অংশ নিয়েছি এবং প্রতিবছর এভাবেই নদীতে এসে বিজু উৎসব শুরু করি।

 

নাজিব তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বান্দরবানে বসবাসরত চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় প্রতিবছরের মতো এবছর সাঙ্গু নদীতে ফুল বিজু-ফুল বিষু উদযাপন করছেন। অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করে আগামীবছর যেন সবাই সুখে শান্তিতে থাকতে পারি সেই প্রত্যাশায় মা- গঙ্গাদেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি।

 

বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—এই তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত ১১টি জাতিগোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, ম্রো, খুমী, খেয়াং প্রমুখ) মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি জনপদে বইছে আনন্দের আমেজ।

 

বিজু-বৈসু-বিষু উপলক্ষে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত নানা কর্মসূচির মধ্যে আরো রয়েছে— ১২ এপ্রিল বিকেল ৫টা থেকে রাতব্যাপী রেইচা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলা টুর্নামেন্ট। ১৩ এপ্রিল সাংগ্রাইং র‌্যালি ও বয়স্ক পূজা। ১৪ এপ্রিল বান্দরবানের বৌদ্ধ বিচারগুলোতে বুদ্ধ মূর্তি স্নান, রাতে পিঠা তৈরি, ১৫ এপ্রিল রাজার মাঠে বলি খেলা।

 

১৬ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল রাজার মাঠে কাঙ্ক্ষিত মারমা সম্প্রদায়ের রিলংবোই (মৈত্রি পানি বর্ষণ খেলা)। এছাড়াও বান্দরবানের সাত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনে মুখর থাকবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনপদ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আওয়ামী লীগের কার্যালয় এখন বাকরখানির দোকান

» বিশ্বকে চমকে দিতে প্রস্তুত ইরানের এআই অস্ত্রভাণ্ডার

» দেশে ‘কেমন একটা অস্থিরতা চলছে’ : ফখরুল

» এবার পালাবেন কোথায় কাদের? থাকতে পারবেন না ১৯৫ দেশে!

» একেকটা ঝটিকা মিছিলে ৫/৬ জন ৩ মিনিট মিছিল করে চলে যায়, এতে চিন্তার কি আছে ?: প্রেস সচিব

» কৃষ্ণচূড়া ছুঁয়ে বৈশাাখী মেঘ

» রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

» কুরবানির ঈদে কমবে লোডশেডিং থাকবে না যানজট: ফাওজুল কবির

» দাবি পূরণ করেই ছাত্ররা ক্লাসরুমে ফিরবে নওগাঁর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

» সুন্দরবনের উপকূলে খাদ্যের সন্ধানে জনপদে লোকালয়ে কালোমুখো হনুমান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সাঙ্গু নদীতে ফুল দিয়ে বিজু উৎসব শুরু

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : ফুল দিয়ে জলবুদ্ধ ও মা গঙ্গাদেবীর পূজা এবং ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক উৎসব বিজু-বিষু।

 

শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টায় বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মানুষজন জলবুদ্ধ ও মা-গঙ্গাদেবীকে ফুল নিবেদনের মাধ্যমে বিজু ও বিষু উৎসবের সূচনা করেন।

ভোর থেকেই নারী, পুরুষ ও শিশুরা বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল সংগ্রহ করে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে কলাপাতায় সাজানো ফুল নিয়ে সাঙ্গু নদীর তীরে জড়ো হন। মোমবাতি জ্বালিয়ে, ফুল অর্পণ করে অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তারা।

 

সেইসঙ্গে প্রার্থনা করেন, অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট যেন নদীর স্রোতের মতো ভেসে যায় এবং ভবিষ্যত দিনগুলো শান্তি ও সমৃদ্ধিতে কাটে।

 

সিদ্ধার্থ চাকমা বলেন, অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য জলবুদ্ধ ও মা গঙ্গাদেবীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আগামী বছর সুখে শান্তিতে থাকার প্রার্থনা জানিয়ে ফুলবিজু উদযাপন করে থাকি।

 

মিনতি চাকমা বলেন, ভোরে উঠে বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল সংগ্রহ করে নদীতে জলবুদ্ধ ও মা গঙ্গার উদ্দেশ্য ফুল নিবেদন করে, অতীতে ভুল করে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। আগামী বছর সুখে শান্তিতে থাকার জন্য আর্শীবাদ চেয়ে আজকে ফুলবিজুর আয়োজনে অংশ নিয়েছি এবং প্রতিবছর এভাবেই নদীতে এসে বিজু উৎসব শুরু করি।

 

নাজিব তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বান্দরবানে বসবাসরত চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় প্রতিবছরের মতো এবছর সাঙ্গু নদীতে ফুল বিজু-ফুল বিষু উদযাপন করছেন। অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করে আগামীবছর যেন সবাই সুখে শান্তিতে থাকতে পারি সেই প্রত্যাশায় মা- গঙ্গাদেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি।

 

বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—এই তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত ১১টি জাতিগোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, ম্রো, খুমী, খেয়াং প্রমুখ) মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি জনপদে বইছে আনন্দের আমেজ।

 

বিজু-বৈসু-বিষু উপলক্ষে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত নানা কর্মসূচির মধ্যে আরো রয়েছে— ১২ এপ্রিল বিকেল ৫টা থেকে রাতব্যাপী রেইচা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলা টুর্নামেন্ট। ১৩ এপ্রিল সাংগ্রাইং র‌্যালি ও বয়স্ক পূজা। ১৪ এপ্রিল বান্দরবানের বৌদ্ধ বিচারগুলোতে বুদ্ধ মূর্তি স্নান, রাতে পিঠা তৈরি, ১৫ এপ্রিল রাজার মাঠে বলি খেলা।

 

১৬ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল রাজার মাঠে কাঙ্ক্ষিত মারমা সম্প্রদায়ের রিলংবোই (মৈত্রি পানি বর্ষণ খেলা)। এছাড়াও বান্দরবানের সাত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনে মুখর থাকবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনপদ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com