সর্বনাশা ফাঁদ হানি ট্র্যাপের

ছবি: সংগৃহীত

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন শাহনাজ, রিমা ও লাভলী। তারা পৃথকভাবে হানি ট্র্যাপিংয়ের কাজ করতেন। টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে মোবাইল ফোন, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা বলে সম্পর্ক গভীর করতেন। একপর্যায়ে টার্গেটকে দেখা করার কথা বলে এ চক্রের নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে জিম্মি করে চক্রের নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নারী সদস্যদের ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড় করিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হতো। পরে ওই আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ও হত্যার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন। গত ১৮ ও ২০ আগস্ট ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও বরগুনায় ধারাবাহিক অভিযানে এ চক্রের দুই নারী সদস্যসহ আটজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগ।

 

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়েজিদ (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে শাহনাজের পরিচয় হয়। তারা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে কথাবার্তা বলতেন। বায়েজিদ ও শাহনাজের এক বছরের সম্পর্ক বেশ গভীর হয়। শাহনাজ দেখা করার প্রস্তাব দিলে রাজি হন বায়েজিদ। ১৫ আগস্ট শাহনাজ কৌশলে যাত্রাবাড়ীতে বায়েজিদকে ডেকে নিয়ে দেখা করেন। পরে শাহনাজ তাকে নিয়ে যান নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি ফ্ল্যাটে। এর কিছুক্ষণ পরই অজ্ঞাত দুই নারী শাহনাজের বান্ধবী পরিচয়ে ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। আরও কিছুক্ষণ পর অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয় পুরুষ সেখানে আসেন। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বায়েজিদকে মারধর শুরু করেন। তার পরনের কাপড়চোপড় জোরপূর্বক খুলে ফেলেন এবং উলঙ্গ অবস্থায় শাহনাজের পাশে দাঁড় করিয়ে ভিডিও ধারণ করেন। পরে চক্রটি বায়েজিদের কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। চক্রের সদস্যরা জোরপূর্বক বায়েজিদের কাছে থাকা ৬ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে একটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও কার্ডের পিন নম্বর জেনে নেন।

 

এরপর তার ডেবিট কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে ৩ লাখ টাকা তুলে নেন। আর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে একটি জুয়েলারি দোকান থেকে ৪ লাখ ৪ হাজার টাকার সোনা কেনেন। পরে হত্যা ও ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে বায়েজিদকে নারায়ণগঞ্জের ভুইগড় বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে ছেড়ে দেন। হানি ট্র্যাপিংয়ের ফাঁদে ফেলে চক্রটি ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বায়েজিদের কাছ থেকে মোট ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে তিনি এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে হানি ট্র্যাপিংয়ের সদস্যদের সন্ধান পায় ডিবি। ১৮ আগস্ট এ চক্রের সদস্য আবদুস সালাম, নাজমুল হাসান, মাসুম শেখ ও শওকত আলী শেখকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের মাধ্যমে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এ ছাড়া ২০ আগস্ট চক্রের জাহিদুর রহমান ওরফে তুষার, মাসুদুর রহমান ওরফে মিলন, মনজুমা বেগম ওরফে শাহিনুর আক্তার ওরফে শাহনাজ ও রিমা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরও আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গ্রেফতারদের কাছ থেকে ১০টি মোবাইল ফোন, ২১টি সিম কার্ড, ৪১ হাজার টাকা, একটি সোনার চেন ও একটি আংটি জব্দ করা হয়। ডিবি জানায়, গ্রেফতার তুষার এ চক্রের মূল হোতা, যার কাছে চক্রের নারী সদস্যরা টার্গেট নির্ধারণ করে তথ্য দেন। মিলন চক্রের সহযোগী ও ভুয়া ডিবির সদস্য। শাহনাজ মূলত টার্গেটদের সঙ্গে কথা বলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রলোভন দেখান। রিমা চক্রের সদস্য। আবদুস সালাম নিজেকে ডিবির ওসি ও নাজমুল সাংবাদিক পরিচয় দেন। মাসুম চক্রের সহযোগী ও ভুয়া ডিবির সদস্য এবং শওকত ট্র্যাপিংয়ের জন্য ব্যবহৃত বাড়ি ভাড়া করেন। এ চক্রের মোট সদস্য ১১ জন। ডিসির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) তারেক আহমেদ বলেন, হানি ট্র্যাপিংয়ের এ চক্রটি তিন-চার বছর ধরে প্রতারণা করে আসছে। তারা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের হানি ট্র্যাপিংয়ের ফাঁদে ফেলে ২-৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।  সূূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» গুলি ও ছুরিকাঘাতে যুবক আহত

» দেশীয় তৈরি পাইপ গান ও দুটি শটগান কার্তুজ উদ্ধার

» জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বে নিজ ভগ্নিপতিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার শ্যালক গ্রেফতার

» যুবককে গুলি করে হত্যা

» জুলাই-আগস্টে গণহত্যা সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জন ট্রাইব্যুনালে

» পুকুর থেকে ৩২৬ পিস সরকারি গুলি উদ্ধার

» পাঁচ অঞ্চলে দুপুরের মধ্যে ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির আভাস

» ভবেশের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

» ‘র’-এর বিরুদ্ধে পোস্ট দেওয়ার ২ দিনের মাথায় আমাকে নিয়ে তথ্য সন্ত্রাস: হাসনাত আবদুল্লাহ

» ভারতীয় গণমাধ্যমেও বিরোধী সুর, তবে কি হাসিনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো ভারত?

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সর্বনাশা ফাঁদ হানি ট্র্যাপের

ছবি: সংগৃহীত

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন শাহনাজ, রিমা ও লাভলী। তারা পৃথকভাবে হানি ট্র্যাপিংয়ের কাজ করতেন। টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে মোবাইল ফোন, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা বলে সম্পর্ক গভীর করতেন। একপর্যায়ে টার্গেটকে দেখা করার কথা বলে এ চক্রের নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে জিম্মি করে চক্রের নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নারী সদস্যদের ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড় করিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হতো। পরে ওই আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ও হত্যার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন। গত ১৮ ও ২০ আগস্ট ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও বরগুনায় ধারাবাহিক অভিযানে এ চক্রের দুই নারী সদস্যসহ আটজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগ।

 

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়েজিদ (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে শাহনাজের পরিচয় হয়। তারা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে কথাবার্তা বলতেন। বায়েজিদ ও শাহনাজের এক বছরের সম্পর্ক বেশ গভীর হয়। শাহনাজ দেখা করার প্রস্তাব দিলে রাজি হন বায়েজিদ। ১৫ আগস্ট শাহনাজ কৌশলে যাত্রাবাড়ীতে বায়েজিদকে ডেকে নিয়ে দেখা করেন। পরে শাহনাজ তাকে নিয়ে যান নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি ফ্ল্যাটে। এর কিছুক্ষণ পরই অজ্ঞাত দুই নারী শাহনাজের বান্ধবী পরিচয়ে ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। আরও কিছুক্ষণ পর অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয় পুরুষ সেখানে আসেন। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বায়েজিদকে মারধর শুরু করেন। তার পরনের কাপড়চোপড় জোরপূর্বক খুলে ফেলেন এবং উলঙ্গ অবস্থায় শাহনাজের পাশে দাঁড় করিয়ে ভিডিও ধারণ করেন। পরে চক্রটি বায়েজিদের কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। চক্রের সদস্যরা জোরপূর্বক বায়েজিদের কাছে থাকা ৬ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে একটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও কার্ডের পিন নম্বর জেনে নেন।

 

এরপর তার ডেবিট কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে ৩ লাখ টাকা তুলে নেন। আর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে একটি জুয়েলারি দোকান থেকে ৪ লাখ ৪ হাজার টাকার সোনা কেনেন। পরে হত্যা ও ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে বায়েজিদকে নারায়ণগঞ্জের ভুইগড় বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে ছেড়ে দেন। হানি ট্র্যাপিংয়ের ফাঁদে ফেলে চক্রটি ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বায়েজিদের কাছ থেকে মোট ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে তিনি এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে হানি ট্র্যাপিংয়ের সদস্যদের সন্ধান পায় ডিবি। ১৮ আগস্ট এ চক্রের সদস্য আবদুস সালাম, নাজমুল হাসান, মাসুম শেখ ও শওকত আলী শেখকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের মাধ্যমে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এ ছাড়া ২০ আগস্ট চক্রের জাহিদুর রহমান ওরফে তুষার, মাসুদুর রহমান ওরফে মিলন, মনজুমা বেগম ওরফে শাহিনুর আক্তার ওরফে শাহনাজ ও রিমা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরও আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গ্রেফতারদের কাছ থেকে ১০টি মোবাইল ফোন, ২১টি সিম কার্ড, ৪১ হাজার টাকা, একটি সোনার চেন ও একটি আংটি জব্দ করা হয়। ডিবি জানায়, গ্রেফতার তুষার এ চক্রের মূল হোতা, যার কাছে চক্রের নারী সদস্যরা টার্গেট নির্ধারণ করে তথ্য দেন। মিলন চক্রের সহযোগী ও ভুয়া ডিবির সদস্য। শাহনাজ মূলত টার্গেটদের সঙ্গে কথা বলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রলোভন দেখান। রিমা চক্রের সদস্য। আবদুস সালাম নিজেকে ডিবির ওসি ও নাজমুল সাংবাদিক পরিচয় দেন। মাসুম চক্রের সহযোগী ও ভুয়া ডিবির সদস্য এবং শওকত ট্র্যাপিংয়ের জন্য ব্যবহৃত বাড়ি ভাড়া করেন। এ চক্রের মোট সদস্য ১১ জন। ডিসির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) তারেক আহমেদ বলেন, হানি ট্র্যাপিংয়ের এ চক্রটি তিন-চার বছর ধরে প্রতারণা করে আসছে। তারা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের হানি ট্র্যাপিংয়ের ফাঁদে ফেলে ২-৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।  সূূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com