সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, আমরা সব ক্ষেত্রে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাই। তিনশ’ কিংবা চারশ’ আসন যাই হোক সব জায়গায় পিআর পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন না হলে কোনও অবস্থাতেই পেশীশক্তি ও কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। পিআর পদ্ধতি হলে কোনও ব্যক্তিকে নয়, প্রতীকে ভোট হবে। যে প্রতীক যত ভোট পাবে, সে অনুযায়ী তাদের প্রতীক সংসদে আসন পাবে। এমন পদ্ধতির নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করে।
বুধবার সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের হোটেল পুষ্পদামে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল কে এম বিল্লাল হোসেনের পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
এতে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কবির, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান ও সহ-সভাপতি মুফতী মোস্তফা কামাল।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ৫০৫টি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে ১০৫ আসন আনুপাতিক হারে উচ্চকক্ষ, ৩০০ আসন নিম্নকক্ষ ও ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম কোনও সংরক্ষিত থাকবে না। তাই মহিলাদের জন্য সংসদে কোনও সংরক্ষিত আসন চাই না। মহিলাদের জন্য আমরা সাধারণ নির্বাচন চাই। মহিলাদের সমান অধিকারের কথা বলে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা মানে তাদেরকে অপমান করা।
মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, মহিলাদেরকে অযোগ্য মনে করে এটা করা হয়। মহিলাদেরকে অযোগ্য মনে করবেন না। তাদেরকে লড়তে দিন, সংরক্ষিত আসন আমরা চাই না। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন করার অর্থ তাদেরকে দুর্বল করা। কোনও মহিলা লড়াই করতে পারবে না- এমন প্রস্তাব আমরা করলে প্রশ্ন করা যেত আমি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন চাই না। আমি চাই সকলে সরাসরি ভোটে লড়াই করবে।
তিনি বলেন, তড়িঘড়ি করে নির্বাচন প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর বলেন, সংস্কারের পূর্বে কোনও নির্বাচন দেওয়া হলে সে নির্বাচন ব্যর্থ হবে। ছাত্র-জনতা ও আমরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাস্তায় ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। আমাদের রক্ত ও ত্যাগের উপরে ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ থেকে হটতে বাধ্য হলেও এখন আবার নব্য ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশকে দখল করেছে। এক চাঁদাবাজ তাড়িয়ে আরেক চাঁদাবাজকে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দিলে সে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মানুষ আবারও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
তিনি বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনে সকল ভোটাররা তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। সকল ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। যেখানে পেশীশক্তি থাকবে না। কালো টাকার ছড়াছড়ি থাকবে না। ভোটাররা যাতে তাদের আদর্শ, নীতিবান মনের মত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে এমন পরিবেশ চাই।
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকার সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এগুলোকে সচল করার মতো কার্যকরী সংস্থা চাই।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে বিচার বিভাগে কেউ কেউ খালাস তো দূরের কথা জামিনও পায়নি। এখন এমন কি হলো? ফ্যাসিস্ট যাবার সাথে সাথে বড় বড় মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেল। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। তার অর্থ হচ্ছে বিচার বিভাগে স্বাধীনতা নাই। কোনও কোনও দলের নিয়ন্ত্রণে বা তাদের ইঙ্গিত চলছে। এজন্য আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, একটি ভালো রাষ্ট্রের বড় প্রমাণ হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। স্বাধীন বিচার বিভাগ হলে বিচারকরা আইন অনুযায়ী বিচার করবে। কোনও সরকারের প্রেসারে তারা বিচার করবে না। কারও ইঙ্গিতে তারা বিচার করবে না। আমি চাই এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কারও বিচার হলে সেখানে যাতে কোনও চাপ প্রয়োগ করা না হয়। আবার যদি আইনের মাধ্যমে আমাকেও আটকে দেওয়া হয় সেখানে যাতে প্রেসার ক্রিয়েট করা না হয়। বিচারকরা রায় লিখতে গিয়ে মনের মধ্যে চাকরি থাকা বা না থাকা নিয়ে যাতে ভীতি সৃষ্টি না করে, পদোন্নতি নিয়ে যেন টেনশন না থাকে। বিচারকদের মনে চাকরি থাকা না থাকা ও পদোন্নতি হওয়া না হওয়া টেনশন থাকলে তাদের দ্বারা ন্যায়বিচার সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, কমপক্ষে এক জায়গায় নিরপেক্ষ থাকা উচিত তা হলো বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা। আমরা কামনা করি কারও ইঙ্গিতে বিচার হবে না, বরং বিবেক বুদ্ধির মাধ্যমে ইনসাফের সাথে বিচার হতে হবে। বিচারকদের আদেল ও ন্যায় বিচারক হতে হবে। বিচারকরা মানিক মার্কা বিদ্বেষ ও ঘৃণায় ভরপুর থাকলে তার পক্ষে ন্যায় বিচার করা সম্ভব হবে না। আমি বিচারকদের নিরপেক্ষতা চাই। আদেল ও ইনসাফগার বিচারক হোক- এটা চাই।
তিনি আরও বলেন, বিচারক ও বিচারালয়ের স্বাধীনতা চাই। দেশের বিচারালয় স্বাধীন না থাকলে, সে দেশে কোনও মানুষ বসবাস করতে পারে না।