ছবি সংগৃহীত
ডা. আহমেদ রিজভী : নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। যদিও আদি কাল থেকেই এটা চলমান। সমাজের সকলের দায়িত্ব নারীদের জন্য একটা সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা।
একজন ছেলে, একজন নারীকে কোন দৃষ্টিতে দেখে, ভাল বা খারাপ চোখে বা সহযোগিতা পূর্ণ চোখে নাকি রক্ত চক্ষুতে নাকি লালসাময়ী চোখে এই শিক্ষাটা সে পায় মূলত তার মায়ের কাছ থেকে। অর্থাৎ একজন পুরুষ যদি একজন নারীকে খারাপ ভাবে মূল্যায়ন করে বুঝবেন সে পুরুষ তার মাকেও খারাপ ভাবে দেখে। মাকে ন্যূনতম ভালোবাসে না বা সম্মানের চোখে দেখে না। কারণ দেখা যায় একজন ছেলের যদি কোন বোন থাকে তবে সেই ভাইটি কিন্তু একজন নারীর বেড়ে ওঠা, তার সমস্যা গুলো, বয়ঃ সন্ধি এর সময়ের পরিবর্তন গুলো, মনের অবস্থার পরিবর্তন গুলো বুঝতে পারে বা তাদের কষ্টের জিনিস গুলো ধরতে পারে। কিন্তু যার বোন নেই, তাহলে সে এগুলা কোথায় থেকে শিখবে, তার এই জ্ঞান টা আসার একমাত্র উপায় (বিয়ের আগে) হল তখন তার মা। অর্থাৎ কেউ যদি অন্য মেয়ে নিয়ে খারাপ কিছু করে, বিরক্ত করে, উত্তক্ত করে সে যেই হোক না কেন বুঝতে হবে তার মা নিশ্চয় তাকে একজন নারীকে কিভাবে সম্মান দিতে হয় এই শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। অর্থাৎ মাদের এখানে একটা বড় দায়িত্ব হল তার ছেলে সন্তানকে সে আচার ব্যবহার শিক্ষা দেয়া যেভাবে তিনি অন্য পুরুষদের কাছ থেকে আচার আচরণ প্রত্যাশা করেন। তার ছেলে যেন অন্য মেয়েদের কে খারাপ ভাবে না দেখে বা দেখলেও বা খারাপ কিছু করলে সেই মাই যেন তার আদরের সন্তানের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রাখে। অন্যথায় সেই মা তার সন্তানের দোষগুলোকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রশ্রয় দেবার জন্য সমাজের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
একজন পুরুষ অনেক বেশি পরিবর্তন হয় যখন তার একজন কন্যা সন্তান থাকে, সে তখন পৃথিবীর নির্মম বাস্তবতা খুব সহজেই বুঝতে পারে, কন্যা সন্তান না থাকলে এই জ্ঞান আসাটা অনেক কঠিন।
তার মূল একটা বাখ্যা হল, আমাদের সমাজে আমাদের বন্ধু বান্ধব, ছোট ভাই, রিলেটিভসহ কেউ সিগারেট, বিড়ি, গাঁজাখেলেও সেভাবে অন্যায়ের চোখে দেখা হয় না। বরং একটা সরকারি চাকরি যেখানে ভাল বেতন বা ঘুষ খেয়ে একটা ভালো আয়ের ব্যবস্থা থাকলে বাকি সব দোষ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এমন হয় না, বরং একটু আধটু উনিশ বিশ হয়ে গেলেই তার উপর বিপদের খড়গহস্ত নেমে আসে। আবার সে মেয়েটা যদি পড়ালেখাতে যৌক্তিক ভাবে কম যোগ্যতা সম্পন্ন হয় (যোগ্যতা সম্পন্ন বলতে বর্তমান সমাজে চাকরি বাকরি পাওয়াকে বোঝায়) বা আমাদের সমাজ এর প্রেক্ষিতে, চেহারা কম সুন্দর হয় তাহলে তাকে সমাজের অনেক নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। তখন দেখা যায় একজন নারীই সেই নারীর প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়, যা অত্যন্ত কষ্টের।
নারী কখনই সমাজে খারাপ অবস্থায় পড়তো না, যদি না তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ বা পুরুষ এর অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিত। সেটা হোক সে মা, স্ত্রী, বোন বা বান্ধবী হিসবে। দেখা যায়, নারীর প্রতিটি বিপদের ঘটনার জন্য কোন না কোন ভাবে অন্য নারীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইন্ধন আছে। সম্প্রতি মাগুরাতে নির্যাতনের শিকার আছিয়া মেয়েটার ক্ষেত্রেও তার বোনের শাশুড়ি সব জেনে বুঝেও চুপ ছিল। অনেক আগে থেকেই সে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তার স্বামী ও সন্তান এর খারাপ চরিত্র কে প্রশ্রয় দিয়ে গেছে। নারীকে সমাজে ভাল অবস্থায় আসতে হলে অবশ্যই তাকে নিজের ছেলে, স্বামীসহ অন্য সব পুরুষের নারীদের প্রতি অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে না পারলেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা একেবারে পরিহার করতে হবে। প্রতিটি নারীর লক্ষ্য হবে এমন, আমি অন্য নারীদেরকে যতটা পারি তাদের ভালো থাকার অংশীদার হবো, কখনই তাদের খারাপ থাকার কারণ হবো না।
পুরুষ, নারী সবাই মিলেই আমাদের সমাজ। সবাই মিলে, আমরা আমাদের দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব। এই প্রত্যয় ব্যক্ত করি।
লেখক: সহকারী রেজিস্টার, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।
সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন