শিশুর চোখের বিপদ বাড়াচ্ছে মোবাইল!

নবম শ্রেণির ছাত্র সৌমাভ দে-র চোখে মাইনাস পাওয়ার ছিলই। ইদানীং তা বেড়েছে বলে জানালেন কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা ওই শিক্ষার্থীর বাবা অবিন দে। ডানকুনির বিনোদ সিংহ প্রতাপের ছেলে সাত বছরের অথর্বের দূর থেকে দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই সে টিভি বা কম্পিউটার দেখছে একদম সামনে থেকে। এক মাস ধরে দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর চোখ দিয়ে পানিও পড়ছে।

 

চোখের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, করোনাকালে বাচ্চাদের চোখের এমন সমস্যা বাড়ছে। অনলাইন-পাঠের তাগিদে কম্পিউটার ও মোবাইলের অত্যধিক ব্যবহারকে দুষছেন তারা। সংক্রমণের ভয়ে বাচ্চারা বেরোতে পারছে না। সেই অভাব তারা মেটাচ্ছে মোবাইলে ভিডিও গেমস খেলে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চোখের সমস্যাও। অবিন দে জানান, মোবাইলে আসক্তি বেড়ে গেছে তার ছেলেও।

 

ডানকুনির দৃষ্টিদীপ আই ইনস্টিটিউটের কর্ণধার, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ তনুশ্রী চক্রবর্তী জানান, শিশুদের মাইনাস পাওয়ার আগেও ছিল। কম্পিউটার বা মোবাইল— সবই কাছ থেকে দেখতে হয়। দূরের জিনিস দেখার প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে দূরের জিনিস দেখার অনভ্যাসে মাইনাস পাওয়ারের প্রবণতা আরও বাড়ছে।

 

তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চাদের চোখে জ্বালা, পানি পড়া বা তা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা আগে ছিল না। এখন হয়েছে। আগে দিনে তিন-চারজন এমন রোগী দেখতাম। এখন তা বেড়ে হয়েছে সাত থেকে আট।’’

 

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ক্লাসে বাচ্চারা ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে না পেলে শিক্ষককে জানাত। ফলে চোখে সমস্যা হলে শুরুতেই ধরা পড়ত। এখন বাবা-মা সন্তানদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন চোখের সমস্যা অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পরে।

 

তনুশ্রী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অন্তত দু’ঘণ্টা বাচ্চাদের বাইরে খেলতে দিতে হবে। এতে তাদের চোখের মাইনাস পাওয়ার বৃদ্ধির হার হ্রাস পাবে।’’ কম্পিউটারের ব্যবহার কমানো, চোখে পানির ঝাপটা দেওয়া ইত্যাদির ওপরেও জোর দিয়েছেন তিনি। জানাচ্ছেন, কথায় কথায় বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়া চলবে না। ‘‘চোখের রোগ এড়াতে চার থেকে ছ’বছরের বাচ্চাদের বছরে একবার চক্ষু পরীক্ষা করা জরুরি,’’ পরামর্শ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ তনুশ্রীর।

 

সুশ্রুতের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ রতীশচন্দ্র পাল জানান, স্কুলে আগে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চোখ পরীক্ষা করা হত। করোনায় তা বন্ধ। শিশুরা অনেকটা সময় কাটাচ্ছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলের সঙ্গে। ফলে তাদের ‘কম্পিউটার ভিসন সিনড্রোম’ দেখা দিচ্ছে। রতীশ বলেন, ‘‘আগে ১০০ জন রোগীর মধ্যে তিন-চার জনের মধ্যে এটা পাওয়া যেত। এখন এই রোগ ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।’’

 

চক্ষু চিকিৎসক সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কম্পিউটার, মোবাইল, ল্যাপটপ দেখতে হয় কাছ থেকে। তাতে বেশি জোর পড়ায় চোখের সিলিয়ারি মাসল দুর্বল হয়ে যায়। অনলাইন-পাঠে ওই মাসলকে খাটতে হচ্ছে বেশি। ফলে ঝাপসা দেখা, মাথায়-চোখে ব্যথা, বমি ভাবের সমস্যা দেখা দিচ্ছে ছোটদের।’’ তিনি জানান, দু’টি ক্লাসের মধ্যে বিরতি বাড়ানো, সকালে-দুপুরে-রাতে দু’টি ক্লাসের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুলে তা মানছে না।   আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে রদবদল

» হাতিরঝিলে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত যুবদল কর্মীর মৃত্যু

» প্রাইম এশিয়ার শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার ৩

» রাজউক আপাতত আর কোনো প্লট বরাদ্দ দেবে না: চেয়ারম্যান

» ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট

» বজ্রপাতে একজন নিহত ও দুইজন আহত

» দোকান ভাড়া নিয়ে বিরোধে নৃশংসভাবে হত্যা

» গোপনে বিয়ে করে প্রথম দিনই শাশুড়ির কাছে অপদস্থ হন রেখা!

» পেস তাণ্ডবে টাইগারদের স্বস্তির সকাল

» রুশ বাহিনী যুদ্ধবিরতি দুই হাজারেরও বেশি বার লঙ্ঘন করেছে: জেলেনস্কি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শিশুর চোখের বিপদ বাড়াচ্ছে মোবাইল!

নবম শ্রেণির ছাত্র সৌমাভ দে-র চোখে মাইনাস পাওয়ার ছিলই। ইদানীং তা বেড়েছে বলে জানালেন কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা ওই শিক্ষার্থীর বাবা অবিন দে। ডানকুনির বিনোদ সিংহ প্রতাপের ছেলে সাত বছরের অথর্বের দূর থেকে দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই সে টিভি বা কম্পিউটার দেখছে একদম সামনে থেকে। এক মাস ধরে দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর চোখ দিয়ে পানিও পড়ছে।

 

চোখের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, করোনাকালে বাচ্চাদের চোখের এমন সমস্যা বাড়ছে। অনলাইন-পাঠের তাগিদে কম্পিউটার ও মোবাইলের অত্যধিক ব্যবহারকে দুষছেন তারা। সংক্রমণের ভয়ে বাচ্চারা বেরোতে পারছে না। সেই অভাব তারা মেটাচ্ছে মোবাইলে ভিডিও গেমস খেলে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চোখের সমস্যাও। অবিন দে জানান, মোবাইলে আসক্তি বেড়ে গেছে তার ছেলেও।

 

ডানকুনির দৃষ্টিদীপ আই ইনস্টিটিউটের কর্ণধার, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ তনুশ্রী চক্রবর্তী জানান, শিশুদের মাইনাস পাওয়ার আগেও ছিল। কম্পিউটার বা মোবাইল— সবই কাছ থেকে দেখতে হয়। দূরের জিনিস দেখার প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে দূরের জিনিস দেখার অনভ্যাসে মাইনাস পাওয়ারের প্রবণতা আরও বাড়ছে।

 

তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চাদের চোখে জ্বালা, পানি পড়া বা তা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা আগে ছিল না। এখন হয়েছে। আগে দিনে তিন-চারজন এমন রোগী দেখতাম। এখন তা বেড়ে হয়েছে সাত থেকে আট।’’

 

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ক্লাসে বাচ্চারা ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে না পেলে শিক্ষককে জানাত। ফলে চোখে সমস্যা হলে শুরুতেই ধরা পড়ত। এখন বাবা-মা সন্তানদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন চোখের সমস্যা অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পরে।

 

তনুশ্রী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অন্তত দু’ঘণ্টা বাচ্চাদের বাইরে খেলতে দিতে হবে। এতে তাদের চোখের মাইনাস পাওয়ার বৃদ্ধির হার হ্রাস পাবে।’’ কম্পিউটারের ব্যবহার কমানো, চোখে পানির ঝাপটা দেওয়া ইত্যাদির ওপরেও জোর দিয়েছেন তিনি। জানাচ্ছেন, কথায় কথায় বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়া চলবে না। ‘‘চোখের রোগ এড়াতে চার থেকে ছ’বছরের বাচ্চাদের বছরে একবার চক্ষু পরীক্ষা করা জরুরি,’’ পরামর্শ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ তনুশ্রীর।

 

সুশ্রুতের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ রতীশচন্দ্র পাল জানান, স্কুলে আগে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চোখ পরীক্ষা করা হত। করোনায় তা বন্ধ। শিশুরা অনেকটা সময় কাটাচ্ছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলের সঙ্গে। ফলে তাদের ‘কম্পিউটার ভিসন সিনড্রোম’ দেখা দিচ্ছে। রতীশ বলেন, ‘‘আগে ১০০ জন রোগীর মধ্যে তিন-চার জনের মধ্যে এটা পাওয়া যেত। এখন এই রোগ ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।’’

 

চক্ষু চিকিৎসক সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কম্পিউটার, মোবাইল, ল্যাপটপ দেখতে হয় কাছ থেকে। তাতে বেশি জোর পড়ায় চোখের সিলিয়ারি মাসল দুর্বল হয়ে যায়। অনলাইন-পাঠে ওই মাসলকে খাটতে হচ্ছে বেশি। ফলে ঝাপসা দেখা, মাথায়-চোখে ব্যথা, বমি ভাবের সমস্যা দেখা দিচ্ছে ছোটদের।’’ তিনি জানান, দু’টি ক্লাসের মধ্যে বিরতি বাড়ানো, সকালে-দুপুরে-রাতে দু’টি ক্লাসের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুলে তা মানছে না।   আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com